মুক্তমত: আমিরাতে নারীর মর্যাদা

arabian-womenনিমাই সরকার, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে: আমিরাতের নারীরা এখন বিমানও চালাচ্ছেনআরব দেশগুলো নারী অধিকারের ব্যাপারে যথেষ্ট রক্ষণশীল। বিশ্বের অনেক মানুষ তাদের নারীনীতির সমালোচনা করেন। তবে এই সমালোচনা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে এগিয়ে চলছেন। তাঁরা মর্যাদা পাচ্ছেন জাতি ও সমাজের কাছ থেকে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের জরিপে এই খবর এসেছে। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক পোর্টারের নেতৃত্বে একদল অর্থনীতিবিদ এই জরিপে অংশ নেন।

আমিরাতে কর্মক্ষেত্রে সফল দুই নারীপ্রকৃতপক্ষেই আরব আমিরাতে নারীবান্ধব একটি আবহ বিরাজমান। নারীর বিকাশ ও উন্নতির জন্য যথোপযোগী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে এই দেশ। এখানে নারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা কর্ম ও সৃজনে তাঁদের মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। জাতি গঠনে নারী হয়ে উঠছেন পুরুষের সফল সঙ্গী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁরা পুরুষকেও অতিক্রম করে যাচ্ছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন কর্মক্ষেত্রে। এটা অবশ্যই নারীদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে। নারীরা এখানে চিন্তা ও মননে একটি উদারমুক্ত আকাশতলের শান্তি উপভোগ করেন। বাংলাদেশেও সম্ভবত নারীরা এতটা শান্তি উপভোগ করেন না।

কর্মক্ষেত্রে সফল নারীওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই জরিপ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করা হয়। এটি শুধু অর্থনৈতিক বিবেচনায় নয়, সামগ্রিক বিচারে স্বচ্ছতাসহ বস্তুগত দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত হয়। ৫৪টি একক বা অনুষঙ্গ ছিল এর বিচার্য। জরিপে সমাজের সামর্থ্য ও মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়। দেশকে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা, নাগরিকদের জীবনমান বাড়ায় এবং জীবনের গুণাবলি টিকিয়ে রাখে—এমন সব অভিধাকে হিসাবে নেওয়া হয়। একটি গোষ্ঠীর প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বিষয়টিও গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।

সব সূচক মিলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম এবং বিশ্বব্যাপী ৩৭তম। সমাজ প্রগতির সূচকে অপরাধ, হত্যা ও অপুষ্টির মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এতে আমিরাতের অবস্থান ইতিবাচক। একজন নারী এই খবরে আনন্দিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। আরব আমিরাতের মেয়েরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই। তাঁরা চটপটে এবং প্রগতিমুখী। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁরা বিচরণ করেন। অবশ্যই তাঁরা তাঁদের সংস্কৃতিকে বুকের মধ্যে লালন করেন।

আমিরাত এমন একটি দেশ, যে শুধু নিজ দেশের নারীদের নয়, জাতি ও সংস্কৃতিনির্বিশেষে পৃথিবীর যেকোনো নারীদের সম্মান দেখায়। নারীরা এখানে সমাজ, পরিবার ও সহকর্মীদের কাছ থেকে মর্যাদা পান। এই দেশের নেতারা নারীদের মর্যাদা দিয়েই দেশ পরিচালনা করেন। তাঁরা নারীদের সামর্থ্যকে বিবেচনায় নেন। নেতৃত্ব ও কর্মদক্ষতার মূল্য দেন। নারীদের শীর্ষনেতা, মন্ত্রক ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা তৈরির জন্য তাঁরা দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী।

বাংলাদেশেও নারীরা অনেক উচ্চতায় পৌঁছাতে পেরেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতাসহ সরকারি-বেসরকারি অনেক স্থানে শীর্ষপর্যায়ে তাঁরা। দেশ একটি নারীনীতিও দিয়েছে। এর মাধ্যমে তাঁদের সম্মান দেওয়ার চেষ্টা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কতটুকু বাধা-বন্ধনহীন? বাংলাদেশে নিম্ন বা মধ্যবিত্ত সমাজে নারীদের ইচ্ছের মূল্য দেওয়া হয় না। আজও সেখানে ফতোয়া দেওয়া হয় নারীদের বিরুদ্ধে। ঘটে অ্যাসিড নিক্ষেপসহ নানা ধরনের অমর্যাদার ঘটনা। এ কারণে নারীদের নামতে হয় রাজপথে। এমনটি আর কত দিন চলতে পারে?

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.