শাহজালাল বিমানবন্দরে লাগেজ-বেল্ট সংকট।
যাত্রীর সংখ্যা বিমানবন্দরে প্রতিনিয়তই বাড়িয়া চলিয়াছে, কিন্তু বাড়েনি লাগেজ-বেল্ট এবং সেইগুলির ধারণক্ষমতা। বিশ্বের কোনো দেশের এয়ারপোর্টে বেল্ট চলমান অবস্থায় যাত্রীদের লাগেজ অন্য কাহারো নামাইবার রীতি না থাকিলেও গত কয়েক দিন ধরিয়া এই ধরনের ঘটনা ঘটিতেছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এইদিকে সময়মতো বেল্টে লাগেজ না পাইয়া যাত্রীরা হইচই করিতেছেন। অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করিয়াছেন বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা নিয়া। কারণ খুঁজিতে গিয়া দেখা যায়, শাহজালালের তিনটি বেল্টের একটি নষ্ট। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরিয়া বেল্টটি নষ্ট হইয়া থাকিলেও মেরামতের উদ্যোগ কেহ নেয় নাই।
আর, বেল্ট নষ্ট থাকায় কখনো কখনো একাধিক বিমানের লাগেজ তুলিয়া দিতে হয় একই বেল্টে। ফলে লাগেজ-জট সৃষ্টি হয়। সেই কারণেই নাকি তাহারা যাত্রীদের লাগেজ বেল্ট হইতে নামাইয়া রাখে! প্রয়োজনীয় লাগেজ-বেল্ট নাই, সেইগুলির ধারণক্ষমতাও সীমিত। ফলে বাড়িতেছে চুরির ঘটনা।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লাগেজ লইয়া হয়রানির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এয়ারক্রাফট হইতে যাত্রী নামিয়া ইমিগ্রেশন শেষে লাগেজ-বেল্টে পৌঁছাইয়া দেখিতে পায়, লাগেজ তখনো পৌঁছায় নাই। ফ্লাইটের লাগেজ ডেলিভারির কাজ কখনই ৪০ মিনিট আগে শুরু হয় না। ভাগ্যবানরা প্রথমেই পাইয়া যান। অন্যরা কখনো কখনো পান দুই ঘণ্টা পর। একই অবস্থা উড়োজাহাজ টেক অফের বেলায়ও। দেখা যায়, লাগেজ ঢুকানো শেষ হইতেছে না, তাই উড়িতে পারিতেছে না। আর লাগেজ কাটা, ছেঁড়া, হারাইবার অভিযোগ তো আছেই। অথচ বিশ্বের বিখ্যাত সকল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেখা যায়, যাত্রী ইমিগ্রেশন করিয়া লাগেজ বেল্টে পৌঁছাইবার আগেই লাগেজ পৌঁছাইয়া যায়। প্রতিদিন বিমানবন্দরে শতাধিক বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। মাঝেমধ্যে একসঙ্গে ৮-১০টি ফ্লাইটও অবতরণ করিতেছে। এই সময় কয়েক হাজার লাগেজ ফ্লাইট থেকে নামানো হয়। তবে লাগেজের তুলনায় বিমানে জনবল এবং লাগেজ সরবরাহ যান (টু-ট্র্যাক্টার) ও কনভেয়ার বেল্টের স্বল্পতা রহিয়াছে। বিমানবন্দরের দেশি-বিদেশি সকল উড়োজাহাজের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজটি করে বিমান। বিষয়টি নিয়া প্রচারমাধ্যমে প্রচুর সমালোচনা হইয়াছে। দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বিদেশ হইতে আগত যাত্রীদের হয়রানি রোধে একাধিক বার নানা উদ্যোগ নেওয়া হইয়াছে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়া করাইবার সিদ্ধান্তও নেওয়া হইয়াছে। কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে তাহা ভণ্ডুল হইয়াছে।
দেশের নাগরিকদের নৈমিত্তিক হয়রানি তো আছেই, বিমানবন্দরে নামিয়াই বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয় বিদেশি নাগরিকদের। এই অবস্থাই চলিতেছে দিনের পর দিন, বত্সরের পর বত্সর। শত সমালোচনা-লেখালেখির পরও ‘গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের’ এইসব প্রক্রিয়ার কোনো উন্নতি নাই। একটি লাগেজ-বেল্ট গত দুই সপ্তাহ নষ্ট হইয়া থাকিলেও তাহা মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয় নাই। এই রকম গাফিলতি কি আমরা বরদাশত করিতেই থাকিব! সকল সরকারের আমলেই বিমানবন্দরের মান উন্নয়নের নানা উদ্যোগ দেওয়া হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি এবং দুর্নীতির কারণেই অবস্থার উন্নতি করা যায় না। কিন্তু দেশ অগ্রসর হইতেছে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সেবার মানের সঙ্গে আমাদের তাল মিলাইতেই হইবে। আমরা আশা করিব, সরকার এইসকল ক্ষেত্রে কোনো রকম গাফিলতি, অবহেলা ও অনিয়ম বরদাশত করিবে না।