এভিয়েশন নিউজ: অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতায় ছোট হয়ে আসছে বিমানের পৃথিবী। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক রুট। কোনোভাবেই ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না বিমান কর্তৃপক্ষ। যাত্রীও কমতে শুরু করেছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সের লাভজনক রুটগুলোতেও নিয়মিত লোকসান দিচ্ছে সংস্থাটি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স নিয়ে চলছে যা খুশি তা-ই। অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী একমাত্র আকাশ পরিবহন সংস্থাটির ভবিষ্যৎই এখন অনিশ্চিত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পনাহীন যাত্রা ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে ‘আকাশে শান্তির নীড়’ স্লোগান নিয়ে চলা এ সংস্থাটি যেন ডানা ভাঙা বলাকায় পরিণত হয়েছে। তবে বিমান কর্তৃপক্ষ যাত্রী কমার জন্য রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করেছে। বিমানের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বিদেশ থেকে যাত্রী আসার হার অনেক কমে যায়। যার প্রভাব পড়েছে বিমান ব্যবসার ওপর।
আগামী হজ ফ্লাইট সম্পূর্ণ নিজেদের উড়োজাহাজে করার জন্য রুট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও তারা জানান। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত ফ্লাইট বন্ধ করে স্পেশাল ফ্লাইট চালানোর নজির কোনো দেশেই নেই। একটি প্রতিষ্ঠানে পেশাদারিত্ব না থাকলেই কেবল তারা স্বেচ্ছাচারীভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিমানের বিপণন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ বলেন, ২০১৩ সালের শেষ দিকটা তাদের অনেক খারাপ কেটেছে। অনেক ভালো ভালো উদ্যোগ নেওয়ার পরও যাত্রী ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।
৩ বছরে যাত্রী কমেছে ৬ লাখ :
২০১১-১২ অর্থবছরে বিমান আন্তর্জাতিক রুটে ১৭ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। গত অর্থবছরে যা নেমে আসে ১৫ লাখে। চলতি অর্থবছরে ১৩ লাখের ওপর যাত্রী না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষের। এ হিসাবে তিন বছরে যাত্রী হারিয়েছে ছয় লাখ। বিমানের হিসাব থেকে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে বিমান ১ লাখ ১ হাজার যাত্রী পরিবহন করে। অথচ আগের বছরের একই মাসে এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার। ২০১৩ সালের ওই মাসেই বিমানের আয় ছিল ১৬২ কোটি ৩ লাখ টাকা। অথচ এক বছর আগের এই অঙ্ক ছিল ২৪৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বিপণন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে বিমানের যাত্রী পরিবহন একেবারেই কমে গেছে। আর এ কারণে তাদের আয়ের ওপর প্রভাব পড়েছে।
বন্ধ হচ্ছে রুট :
নিয়মিত রুট বাতিল ও কাটছাঁট করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। তবে তারা বলেছে, এ বছর হজ ফ্লাইট সম্পূর্ণ নিজেদের উড়োজাহাজে করার জন্যই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদ জানান, এ বছর বিমান বহরে থাকা নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ দিয়েই হজ ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এ জন্য বিমানের নিয়মিত দিলি্ল ও হংকং দুটি রুট সাময়িক বাতিল এবং আরও কয়েকটি রুটে ফ্লাইট কিছু কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর ৪ মে দিল্লী এবং ১৩ মে হংকং রুটে ফ্লাইট চালু করে বিমান।
সে সময় বাজার যাচাই না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় এ দুটি রুট চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। কোন কোন রুটে ফ্লাইট কমানো হচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি বিমানের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এক শ্রেণির কর্মকর্তারা স্বেচ্ছাচারী ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কোনো কোনো রুট চালু করছে, আবার বন্ধ বা বাতিলও করছে। বিমানের একটি সূত্র বলেছে, প্রাথমিকভাবে লন্ডন, রিয়াদ, আবুধাবি, কুয়ালালামপুর এবং রোমে কিছু ফ্লাইট কমানো হতে পারে। এসব রুটে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের বদলে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর মডেলের উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হতে পারে। সূত্র জানায়, যেহেতু বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর-এর চেয়ে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর-এ ১০০ আসন কম রয়েছে তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর এর আসন সংখ্যা ৪১৯।
সূত্র জানায়, সাত বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ৩১ মার্চ চালু হওয়া ফ্রাঙ্কফুট রুটটিও হজের তিন মাস বাতিলের একটি সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ রুটে যাত্রী না পাওয়া যাওয়ায় আবারও তা বাতিল করা হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিমানের বর্তমান বহরে ৪টি নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭, দুটি এয়ারবাস এ-৩১০ এবং দুটি ভাড়ায় আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজগুলো ব্যবহার করা হবে ২৭ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া হজ ফ্লাইটের জন্য। বিমানের এক কর্মকর্তা জানান, একটি রুটে ফ্লাইট চালু করতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়, বিনিয়োগও করতে হয়। সেখানে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে হুট করে একটি রুট বন্ধ করে দিলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিমানের ভাবমূর্তি সংকটে পড়বে। যাত্রীদের আস্থাহীনতা তৈরি হবে।