এভিয়েশন নিউজ: সরকারি খরচে মাত্র ১০ হাজার টাকায় লেবানন যেতে পারছেন বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা। বেসরকারি উদ্যোগে গেলে খরচ পড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিকের দেশ লেবাননে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশী নারী শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
লেবাননে কর্মরত বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে ৬০ হাজারই গৃহকর্মী। এদের মধ্যে যারা বেসরকারিভাবে সেখানে গেছেন তাদের কারও কারও খরচ পড়েছে ৮০ হাজার টাকা। কারণ দালালের মাধ্যমে কয়েক হাত ঘুরে তাদের লেবানন যেতে হয়েছে। দুই থেকে তিন বছরের চুক্তিতে লেবাননে কর্মরত নারী শ্রমিকদের বেতন মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
সখিনা কুমিল্লার কসবার মেয়ে।
বয়স বিশ বছর। গত মাসে লেবানন থেকে দেশে এসেছেন। সখিনা এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা যারা সরকারি সাহায্যে লেবানন গেছি আমাদের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। লেবাননে আসার আগে সরকারের তরফ থেকে কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এর মধ্যে ভাষার প্রশিক্ষণটি সবচেয়ে কাজে লেগেছে। টুকটাক ইংরেজি বলতে পারায় অনেক উপকার পেয়েছি।
বাংলাদেশ অভিবাসী নারী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম বলেন, অসচেতন নারী শ্রমিকরা দালালের মাধ্যমে বিদেশ যান বলেই বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় পড়েন। অভিবাসী নারীদের কাজের ধরনের মধ্যে রয়েছে গৃহকর্মী, গার্মেন্ট কর্মী, ক্লিনার, দোকানের বিক্রয় কর্মী, কেয়ার গিভার, নার্সসহ অন্যান্য পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মী। সরকারি নিয়মে ১৮ বছরের বেশি যে কোনো নারী কর্মী হিসেবে বিদেশ যেতে পারেন।
গৃহকর্মীদের বয়সসীমা ২৫ থেকে ৪৫ বছর হওয়া বাধ্যতামূলক। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে তিন লাখ নারী শ্রমিক কাজ করছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবানন, জর্ডান, কাতার, কুয়েত, মরিশাস, হংকং ও সিঙ্গাপুরে। নব্বই দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে নারীকর্মী প্রেরণ শুরু হয়। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৩ সালের ফেরুয়ারি পর্যন্ত ২ লাখ ২৭ হাজার ৪০৪ নারী চাকরি নিয়ে বিদেশ যান (সূত্র : বিএমইটি)। সবচেয়ে বেশি নারীকর্মী লেবাননে কাজ করছেন। এর সংখ্যা ৭০ হাজার ৩৮৭ জন। তবে বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে নারী শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে।
গত বছর সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ২৪৩ নারীকর্মী জর্ডান গেছেন। এছাড়া কাতারে ২ হাজার ১০০, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৩ হাজার ৭১০, লেবাননে ১০ হাজার ৭৫০, ওমানে ৬ হাজার ৬৮, মরিশাসে ১ হাজার ৫৫৭, সৌদি আরবে ১৬৭, বাহরাইনে ১৪১, সিঙ্গাপুরে ১৩৩ , হংকংয়ে ৩২৩, ইতালিতে ২৮, মালয়েশিয়ায় ২৩৩, সাইপ্রাসে ১২ নারী কর্মরত রয়েছেন।
বাংলাদেশ অভিবাসী মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম আরও বলেন, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্য, হংকং, জর্ডানসহ পৃথিবীর সব দেশেই বাংলাদেশী শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে গৃহকর্মী হিসেবে তাদের চাহিদা বেশি। কারণ বাংলাদেশী মেয়েরা কাজে ভালো ও দক্ষ। স্বভাবে সৎ। তারা খুবই পরিশ্রমী।
– আফরোজা নাজনীন