দায়িত্ব অবহেলা: অল্পের জন্য রক্ষা পেল বিমানের ঢাকা-ফ্রাঙ্কফ্রুট ফ্লাইট

Biman-Bangladeshএভিয়েশন নিউজ: বিমানের দুই কর্মকর্তার অবহলোয় বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে ঢাকা ফ্রাঙ্কফ্রুট (জার্মানী) ফ্লাইটের ৪১৯ জন যাত্রী। এতে ক্ষতি হয়েছে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ। এছাড়া ৯ ঘন্টার স্থলে ২৪ ঘন্টা পর যাত্রীরা জার্মানী পৌঁছেছেন। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ওই মুহুর্তে ফ্লাইটটি মাসকট বিমান বন্দরে জরুরী অবতরণ করতে না পারলে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে হতো বিমানটিকে।

টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে ফ্লাইটটি মাসকট বিমান বন্দরে নামলেও সব মিলিয়ে ১৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা গেছে বিমানের। এই ঘটনায় দায়িত্ব পালনে অবহেলায় বিমানের সহকারী ম্যানেজার ও ডিউটি কন্ট্রোলার মিজানুর রহমান ও অপারেশনাল অফিসার জয়নাল আবেদিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে বিমান কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি ঢাকা-রোম-ফ্রাঙ্কফ্রুট রুটটি পরিবর্তন করে সরাসরি ঢাকা-ফ্রাঙ্কফ্রুট করেছিল। নিয়ম অনুযায়ী কোন রুট পরিবর্তন করতে হলে সংশ্লিষ্ট রুটের ফ্লাইটটি যেসব দেশের উপর দিয়ে যাবে সব দেশের অনুমতি নিতে হয়। নতুন রুট চালু করায় বিমান অনুমতির জন্য আবেদন করলে একমাত্র রাশিয়া ছাড়া সব দেশ ক্লিয়ারেন্স দেয়। যার কারণে ঢাকা ফ্রাঙ্কফ্রুটের প্রথম ফ্লাইটটি রাশিয়াকে বাদ দিয়ে করা হয়েছিল।

কিন্তু বিপত্তি ঘটে দ্বিতীয় ফ্লাইট করতে গিয়ে। জানা গেছে, বিমানের দুই কর্মকর্তার অহহেলায় শুক্রবারের দ্বিতীয় ফ্লাইটটি রাশিয়াকে বাদ না দিয়েই উড্ডয়নের অনুমতি দেয়া হয়। শুক্রবার দ্বিতীয় ফ্লাইটটি ছাড়ার কথা ছিল সকাল সাড়ে ৮টায়। কিন্তু যন্ত্রিক ক্রুটির কারণে ৩ ঘন্টা বিলম্ব করে দুপুর সাড়ে ১২টায় দ্বিতীয় ফ্লাইটটি আকাশে উড়ে।

ফ্লাইটটি ছাড়ার এক ঘন্টা পর রাশিয়ার এয়ার ট্রাফিক কন্টোল (এটিসি) কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে জানায়, পারমিশন না থাকায় ওই সময়ে কোন ফ্লাইট রাশিয়ার আকাশে প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশের এয়ার ক্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটের পাইলটকে জানায়নি।

প্রায় সাড়ে ৪ ঘন্টা আকাশে উড়ার পর ফ্লাইটটি রাশিয়ার আকাশে প্রবেশের অনুমতি চাইলে রাশিয়ান এটিসি পাইলটকে অনুমতি না থাকার কথা জানায়। পাইলট তাৎক্ষনিক বিষয়টি বিমান কর্তৃপক্ষকে জানালে কর্তৃপক্ষ উপায়ন্ত না দেখে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে অন্য দেশের উপর দিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়।

কিন্তু ওই অবস্থায় অন্য দেশের উপর দিয়ে ফ্লাইট করলে মাঝপথে জ্বালানী তেল শেষ হয়ে যাওয়ার কথা জানায় পাইলট। বাধ্য হয়ে ঢাকা থেকে জানানো হয় টেকনিক্যালী ক্রুটি দেখিয়ে আশাপাশের কোন দেশে অবতরণ করতে। এই অবস্থায় পাইলট প্রথমে দুবাই বিমান বন্দরে নামার জন্য অনুমতি চায়। কিন্তু দুবাই কর্তৃপক্ষ তাদের রানওয়ে খালি না থাকায় অনুমতি দেয়নি। বাধ্য হয়ে পাইলটকে মাসকট গিয়ে সেই দেশে নামার অনুমতি চান।

পরবর্তীতে মাসকস এয়ারপোর্টের অনুমতি নিয়ে সে দেশে জরুরী অবতরন করে। এরপর জ্বালানী তেল নিয়ে দ্বিতীয় দফায় জামার্নীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু আবার বিপত্তির মুখে পড়ে জামানী পর্যন্ত গিয়ে।

জানা গেছে ফ্লাইটটি জার্মানী বিমান বন্দর পর্যন্ত যেতে যেতে স্থানীয় সময় রাত ১১টা বেজে যায। ততক্ষনে বন্ধ হয়ে যায় জার্মানী বিমান বন্দরের রানওয়ে। জার্মার্নীতে রাত ১১টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত বিমান চলাচল বন্ধ থাকে। বিষয়টি পাইলট আবার বিমান কতৃপক্ষকে জানায়।

তখন পাইলটকে জানানো ইটালীর রোমে অবতরণ করতে। বাধ্য হয়ে পাইলট আবার ৩ ঘন্টা চালিয়ে রোমে যান। এরপর সকাল ৫টার পর জার্মনিীর রানওয়ে চালু হলে ফ্লাইটটি শনিবার ফ্রাঙ্কফ্রুট বিমান বন্দরে অবগরণ করে। মাঝপথে ৭ ঘন্টা অতিরিক্ত ফ্লাই করতে হয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ হাজার ডলারের বেশি জ্বালানী তেল খরচ হযেছে। এছাড়া মাসকট ও রোম বিমান বন্দরের হ্যান্ডেলিং চার্জ, যাত্রী ও ক্রুদের হোটেল চার্জসহ কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকার অতিরিক্ত অর্থ গচ্চা দিতে হয়েছে বিমানকে।

বিমান সুত্রে জানাগেছে, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় বিমানের লন্ডন অফিসের অপারেশনাল ম্যানেজার ঢাকার সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তাকে রাশিয়ার পারমিশন না থাকার কথাটি জানিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। কিন্ত তারপরও তারা বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে রাশিয়ার উপর দিয়ে ফ্লাইট পরিচালণার অনুমতি দেন।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাসকট কতৃপক্ষ যদি তাদের বিমান বন্দরে অবতরণের অনুমতি না দিতো তাহলে জ্বালানী তেল শেষ হয়ে ফ্লাইটটি মারাত্বক দুর্ঘটনার শিকার হতো।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.