বেবিচকের অসহযোগিতায় বিপাকে প্রাইভেট এয়ারলাইন্স

Bebicokএভিয়েশন নিউজ: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাইভেট এযারলাইন্স এর জন্য রয়েছে বিমান বন্দরে আলাদা টার্মিনাল। রয়েছে নানাবিধ সুযোগ সুবিধা। সকল সরকারী-বেসরকারী এয়ারলাইন্সের জন্য বিমান বন্দরে হ্যাঙ্গার সুবিধা অত্যাবশ্যাক। প্রত্যেকটি এয়ারলাইন্সের রয়েছে রেগুলার মেইনটেন্যান্স চেক-আপ, সি চেক, ডি চেক, এ চেক সহ নানা প্রকার চেক।

প্রত্যেকটি যাত্রীবাহী ও কার্গো বিমানের নির্দিষ্ট সময় অন্তর এসব চেক সম্পাদন করতে হয়। কোন এয়ারক্রাফটে টেকনিক্যাল সমস্যা দেখা দিলে এয়ারক্রাফটি এয়ারলাইন্সের নির্দিষ্ট হ্যাঙ্গারে শিফট করে তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে। কিন্তু এয়ারলাইন্সসমূহের যদি এসব সুযোগ-সুবিধা না থাকে কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল থাকে, তখন রক্ষণাবেক্ষণসহ অন্যান্য শিডিউল কাজের জন্য খরচ বৃদ্ধি পায় কয়েকগুন।

বাংলাদেশে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরু ১৯৯৬ সাল থেকে। এ্যারো বেঙ্গল এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে প্রথম প্রাইভেট এয়ারলাইন্স। এয়ার পারাবাত, জিএমজি এয়ারলাইন্সসহ বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংখক বেসরকারী বিমান সংস্থা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রায় প্রত্যেকটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরুর পর থেকেই এয়ারক্রাফট মেইটেন্যান্স এর সময় হ্যাঙ্গার এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।

হ্যাঙ্গার এর অভাবের কারনে প্রত্যেকটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স সি-চেক, ডি-চেক দেশের বাহিরে অতিরিক্ত কোটি কোটি টাকা খরচ করে করাতে হয়। গ্রাউন্ডেড এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্সের জন্য হ্যাঙ্গারে শিফট করে কাজ করালে অযথাই পার্কিং চার্জ প্রদান করতে হয় না। হ্যাঙ্গার সুবিধা থাকলে প্রতি বছর প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলো কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় করতে পারে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে হ্যাঙ্গার সুবিধা নেই তা বলার সুযোগ নেই। কিন্তু এ হ্যাঙ্গার সুবিধা পাবার মাপকাঠি কি তা বেবিচক এর কাছেই গ্রহণযোগ্য কোন বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সিভিল এভিয়েশনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কোন যাত্রীবাহী প্রাইভেট এয়ারলাইন্সকেই গত ১৭/১৮ বছরে হ্যাঙ্গারের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কোন স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয় নাই। কিন্তু অনেক ছোট এয়ারলাইন্স এমনকি অনেক হেলিকপ্টার সার্ভিস প্রদানকারী সংস্থাকেও হ্যাঙ্গারের জন্য জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী কয়েকটি প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এর সাথে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। ইতোপূর্বে যেসকল প্রাইভেট এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে তাদের সাথেও যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, যদি বেবিচক প্রাইভেট এয়ারলাইন্সকে হ্যাঙ্গারের জন্য জায়গা বরাদ্দ দিত তবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশ থেকে সি-চেক করাতে হতো না। দেশেই সি-চেক সম্পাদন করতে পারত, কোম্পানী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হত না।

বর্তমানে চালু তিনটি বেসরকারী এয়ারলাইন্স ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও নভো এয়ার কারো নিজস্ব হ্যাঙ্গার সুবিধা নাই। প্রত্যেকেই সিভিল এভিয়েশনের কাছে বেশ কয়েকবার হ্যাঙ্গার এর জন্য জায়গা বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করে। কিন্তু জায়গা বরাদ্দ মিলে নাই। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ প্রথম ফ্লাইট শুরু হয় ১০ জুলাই ২০০৭। কিন্তু কোম্পানী গঠন করে ২০০৫ সালে।

ফ্লাইট শুরু পূর্বেই ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এয়ারক্রাফট এর রেগুলার মেইনটেন্যান্স করার জন্য বেবিচক বরাবর ২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী হ্যাঙ্গারের জায়গা বরাদ্দের জন্য প্রথম আবেদন করে। এর ধারাবাহিকতায় গত ৮ বছরে আট বার বেবিচক বরাবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে হ্যাঙ্গারের জন্য ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বেবিচক এর বরাবর জোর আবেদন করে। কিন্তু অদ্যাবধি কোন ফল আসে নাই। যদিও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এর অনেক পরে আবির্ভূত অনেক প্রতিষ্ঠানকে হ্যাঙ্গার এর জন্য জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের দাবী অনুযায়ী হ্যাঙ্গার বানানোর জন্য জায়গা বরাদ্দ না দেয়ার কারনে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে প্রতি বৎসর মেইনটেন্যান্স এর বিভিন্ন খাতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কোটি কোটি টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। মেইনটেন্যান্স হ্যাঙ্গার না থাকার কারনে কোম্পানীকে তার বহরের বিভিন্ন ধরনের উড়োজাহাজ সমূহের সিডিউল সি-চেক দেশের বাহির থেকে করাতে হচ্ছে আর এই খাতে কোম্পানীকে প্রতিবার বৈদেশিক মূদ্রায় সংগত খরচের চেয়ে অনেকগুন বেশী খরচ করতে হচ্ছে।

হ্যাঙ্গার না থাকার কারনে অন্যান্য প্রাইভেট এয়াররল্ইান্সের ন্যায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকেও উড়োজাহাজ এর দৈনন্দিন মেইনটেন্যান্স এর ক্ষেত্রে উড়োজাহাজকে এ্যাপ্রোন এ রেখেই কাজ করাতে হচ্ছে এবং এ জন্য যন্ত্রপাতি, লোকবল, পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সাপোর্ট এ্যাপ্রোনে আয়োজন করা ব্যয় সাধ্যই নয়, কষ্টসাধ্যও বটে। তাদের বহরে থাকা এমডি-৮৩ এবং এয়ারবাস এর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক হারে পার্কিং চার্জ ধার্য্য করা হয় যার টাকার হিসাবে বিশাল অংকের।

কোম্পানীর নিজস্ব মেইনটেন্যান্স হ্যাঙ্গার থাকলে এই পার্কিং চার্জ এর অধিকাংশই পরিহার করা যেত। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এর বক্তব্য অনুযায়ী দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে রেগুলার মেইনটেন্যান্স করা খুবই কষ্টসাধ্য। একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও নভো এয়ারকে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সকেও এই কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হবে বেবিচকের গাফিলতির কারনে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এয়ারলাইন্স এবং পুঁজিবাজারে বিমান পরিবহন খাতে একমাত্র লিস্টেড কোম্পানী ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এর বিমান বহরে বিভিন্ন আসনের ১১টি এয়ারক্রাফট। বিমান বন্দরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কিংবা রিজেন্ট এয়ারওয়েজের হ্যাঙ্গারের প্রয়োজনীয়তা আছে কি নেই তা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের শুধু অনুধাবনের বিষয়, ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন না সংশ্লিষ্ট সকলে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.