তাওহিদুল মাওলা, সিনিয়র রিপোর্টার, এভিয়েশন নিউজ: শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শাহজালালে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও বিমানবন্দরের ভেতর মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে যাত্রীরা মোবাইল ব্যবহার করতে পারবে।
সোনা পাচারসহ নানা রকমের অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চলতি মাসের ২ জুন আদেশটি কার্যকর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম শাহ আমানত ও সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। এর পাশাপাশি সবকটি বিমানবন্দরে জ্যামার (প্রতিবন্ধকতা) বসানোর পরিকল্পনা করেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ আছে, বিমানবন্দরে কর্মরত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্লিনার, সিকিউরিটি গার্ড ও দুর্নীতিবাজ কাস্টমস কর্মকর্তারা চোরাকারবারিদের সঙ্গে আঁতাত করে চোরাচালান দ্রব্য পাচার করে থাকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে দেশি-বিদেশি ১৮টি বিমান সংস্থা তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ৪৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ যাত্রীবাহী বিমান সার্ভিস ছাড়াও ১০-১২টি বিমান সংস্থা কার্গো বিমান ও হেলিকপ্টার সার্ভিস পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ বিমান ছাড়াও প্রতিদিন বেসরকারি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের ৩০ থেকে ৪০টি বিমান ওঠানামা করে এ বিমানবন্দর দিয়ে। এতে প্রতিদিন অন্তত অর্ধলক্ষাধিক যাত্রী আসা-যাওয়া করে থাকে।
কিন্তু বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার না থাকায় যাত্রীবেশী অপরাধীরা সহজেই অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইং ও একটি গোয়েন্দা সংস্থা স্বরাষ্ট্র, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দুর্বল’ জানিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। গোয়েন্দারা বলছে, দিনকে দিন চোরাকারবারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিনিয়ত সোনাসহ বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান দ্রব্য পাচার হচ্ছে। বিশেষ করে সোনা চোরাকারবারিরা অনেকটা অপ্রতিরোধ্য। অভিযোগ উঠেছে, চোরাকারবারিদের সঙ্গে বিমানবন্দরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সুসম্পর্ক আছে। কর্তৃপক্ষ চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার আগেই তাদের কাছে আগাম খবর চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিমানবন্দরে কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সংস্থার একাধিক সদস্যের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে এর সত্যতা মিলেছে।
সূত্র জানায়, চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বিমানবন্দরে নাশকতার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করেছে। চোরাচালান ও নাশকতা প্রতিরোধ করতে গত ১৪ মে শাহজালালের নিরাপত্তা কমিটি জরুরি বৈঠক করে। ওই বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে বিমানবন্দরের ভেতরে সব ধরনের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এ জন্য ১ জুন শাহজালালের পরিচালক এম কে জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, শাহজালালে কর্মরত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ (বেবিচক) অন্যান্য সংস্থাগুলোর কোনো কর্মচারী বিমানবন্দরের প্রান্তিক ভবন ও এয়ারসাইড এলাকায় কতর্ব্যকালে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। দাপ্তরিক দায়িত্ব ব্যতীত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বিমানবন্দরের কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, আন্তর্জাতিক বহির্গমন, বোর্ডিং ব্রিজ ও এয়ারসাইড এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা স্ব-স্ব কর্মস্থল এলাকায় মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন। সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে অন্যান্য সংস্থার সদস্যকে অফিসে আসার সময় মোবাইল ফোন বাইরে রেখে আসতে হবে। তবে কোনো অপারেশনাল কাজের স্বার্থে স্ব-স্ব সংস্থার প্রধান বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কেউ যদি আইন অমান্য করেন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে চাকরিচ্যুতসহ আইনের আওতায় আনা হবে।
– তাওহিদুল মাওলা