বিমানবন্দরে হুইলচেয়ার পাচ্ছেন না অসুস্থ যাত্রীরা

aহজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী ও প্রত্যাগত অসুস্থ যাত্রীরা হুইলচেয়ারের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এক-দুই দিন নয়, প্রতিদিন দেশী-বিদেশী কোনো না কোনো ফাইটের যাত্রীরা বিমানবন্দরে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যাত্রী ও বিমানবন্দর সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিমানবন্দরে অসুস্থ যাত্রীদের হুইলচেয়ারের সেবা যাদের দেয়ার কথা তাদের কেউ কেউ ব্যস্ত থাকেন অন্য ‘ধান্ধায়’। যে কারণে সেবার বদলে বিমানবন্দরে যাত্রী ভোগান্তির ঘটনাই দিন দিন বাড়ছেই। শুধু হুইলচেয়ার নয়, ট্রলি সঙ্কটে পড়েও অনেক যাত্রী চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

এই বিমানবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৫০-৬০টি ফাইট ওঠামানা করছে। এতে কমপক্ষে ১৫ হাজার যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করছেন। এসব যাত্রীর মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কলকাতাসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার আসা-যাওয়ার মধ্যে বিমানে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। নিয়মানুযায়ী অসুস্থ যাত্রীদের হুইলচেয়ারে তুলে বিমান থেকে নামিয়ে নির্ধারিত স্থানে নেয়ার কথা বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের হেলপারদের। কিন্তু কোনো কোনো ফাইটের অসুস্থ যাত্রীরা বিমানবন্দরে নেমে তাদের কাছে হুইলচেয়ার চেয়েও পাননি। প্রতি ফাইটের জন্য তিনটি হুইলচেয়ার স্ট্যান্ডবাই থাকার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে একটি। এমনও অভিযোগ রয়েছে হুইলচেয়ারের জন্য এসব হেলপারকে ডাকাডাকির পরও তারা সাড়া দেন না।

গত শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিমানের দেশী-বিদেশী যত ফাইট শাহজালাল থেকে অপারেট করা হচ্ছে তার প্রতিটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস দিচ্ছে বিমান। অসুস্থ যাত্রীরা বিমানবন্দরে হুইলচেয়ারের সেবা পাচ্ছেন নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার জানা মতে, হুইলচেয়ার কোনো অসুস্থ যাত্রী চেয়ে পাননিÑ এটা আমার জানা নেই। তবে একটি ফাইটে কখনো কখনো পাঁচটি হুইলচেয়ার লেগে যায়। একই সময়ে আরেকটি ফাইট নামলে তখনই হুইলচেয়ারের সঙ্কট দেখা দেয়। তিনি স্বীকার করেন বিমানবন্দরে অসুস্থ যাত্রীদের আনা-নেয়ার জন্য হুইলচেয়ারের সঙ্কট রয়েছে। তবে ট্রলির কোনো সঙ্কট নেই বলে তিনি দাবি করেন।

হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার আতিক সোবহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের হুইলচেয়ারের সঙ্কট নেই। তবে এই হুইলচেয়ার যারা ঠেলে থাকেন সেই হেলপারের সঙ্কট রয়েছে। বর্তমানে দুই শিফটে ২১ জন হেলপার কাজ করছেন। তবে হেলপার কী পরিমাণ সঙ্কট আছে, তা ক্যালকুলেশনের পরই বলা যাবে। কারণ এখানে ফরেন ক্যারিয়ার রয়েছে। যাত্রীরা প্রায়ই ট্রলি সঙ্কটের অভিযোগ তুলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সিভিল এভিয়েশন অথরিটির বিষয়।

বিমানবন্দর কাস্টমার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, একজন অসুস্থ যাত্রী বিমানের হুইলচেয়ারের সেবা নিতে চাইলে তাকে অবশ্যই টিকিটের সাথে হুইলচেয়ারের বিষয়টি লিখিতভাবে এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। প্রতি হুইলচেয়ারের সার্ভিস বাবদ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে ২০ ডলার করে পরিশোধের নিয়ম। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীরা টাকা পরিশোধের পরও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কাক্সিত সেবা পাচ্ছেন না। তবে পকেটে টাকা গুঁজে দিলে ট্রলি ও ট্রলিম্যান দু’টিই হাজির হয় মুহূর্তেই।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের বিরুদ্ধে সঠিক সেবা না দেয়ার অভিযোগ যাত্রীদের দীর্ঘ দিনের। এখন কোথায় সেবার ঘাটতি রয়েছে, তা বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে শনাক্ত করে খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরের সেবার মান নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন থেকেই যাবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.