ওমানে নিষিদ্ধ হতে পারেন ৫৬৪ বাংলাদেশি

bআরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব রাষ্ট্র ওমানে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন ৫৬৪ বাংলাদেশি কর্মী। লেবার কার্ডে নির্দেশিত কাজের বিপরীতে অন্য কিছু করার অভিযোগে দেশটির পুলিশ তাদের আটক করে। মাসকাট বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের নির্মাণাধীন সাইট থেকে ধরা পড়তে হয় তাদের।
ওমান সরকারের নিয়ম অনুযায়ী লেবার কার্ডে নির্দেশিত কাজের বিপরীতে কাজ করা গুরুতর অন্যায়। বেশকিছু বাংলাদেশি এতে জড়িয়ে পড়ায় বৈধরাও বিপদে রয়েছেন বলে মাসকাট থেকে এক ই-মেইল বার্তায় জানিয়েছেন কম্পিউটার প্রকৌশলী আনোয়ার জাহিদ। তিনি জানান, আটক হওয়া এসব আধাদ ও অদ শ্রমিকরা ভেবেছিলেন, ‘ফ্রি ভিসা’য় আসায় তারা যে কোনো কাজ করতে পারবেন। কিন্তু হতভাগ্যরা ওই ভিসার আওতায় ছিলেন না। গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের সামাইল জেলে রাখা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত বিচারের পর তাদের আজীবনের জন্য ওমানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

তিনি জানান, ২০১১ সালে এমন এক ঘটনায় শতাধিক বাংলাদেশি কর্মীকে ওমানের ভিসা বাতিল করে আজীবন কালো তালিকাভুক্ত করে দেশটির সরকার। তাদের ক্ষেত্রে তেমনটাই করা হতে পারে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো মন্তব্য করেছে।

এদিকে ওমান সরকার ৩ মাসের ‘অ্যামনেস্টি’ বা সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকদের জন্য। কোনো ধরনের জেল, জরিমানা ছাড়াই দেশে ফিরতে পারবেন তারা। এ ‘অ্যামনেস্টি’ চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর একে এম রবিউল ইসলাম। তিনি জানান, বাংলাদেশের অন্যতম এই শ্রমবাজারে বর্তমানে ১৫ হাজারের মতো অবৈধ বাংলাদেশি আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশটির জনশক্তি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ওমানের স্থানীয় পত্রিকাগুলো জানিয়েছে, নির্ধারিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আটক বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। বাংলাদেশিসহ ভারত উপমহাদেশের প্রায় ১ হাজার শ্রমিককে একই অভিযোগে আটক করে ওমান পুলিশ। এসব শ্রমিক মাসকাট বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পে অনুমোদনহীন একটি সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে দিনমজুরের কাজ করতেন। ওমানে ফ্রি ভিসায় যে কোনো স্থানে কাজ করা যায়। তবে এর জন্য কর্মীকে মাসিক ন্যূনতম ভাতা পরিশোধ করতে হয়।

এদিকে বাংলাদেশি ওই প্রকৌশলী শুক্রবার সেলফোনে কথা বলিয়ে দেন পালিয়ে থাকা এক বাংলাদেশির সঙ্গে। ওই কর্মীর নাম আলমগীর হোসেন, তার বাড়ি নরসিংদীর পাঁচদোনায়। তিনি জানান, আমাদের ঢাকা থেকে ‘ফ্রি ভিসা’ দেওয়া হয়েছে বলে এজেন্সির লোকজন ওমান পাঠিয়েছিল। বলা হয়েছিল, এতে আমরা ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারব। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ করে এদেশে এসেছি। সে টাকা দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যই অলস বসে থাকার কোনো সুযোগ ছিল না আমাদের। দ্রুত অভিবাসন ব্যয়ের টাকা উসুল করতে লেবার কার্ডের থাকা নিয়মের বাইরে যেতে হয়েছে আমাদের। ঢাকার এজেন্ট আমাদের ঠকিয়েছে। এখানেও আমরা আমাদের দেশি মধ্যস্থতাকারীদের দিয়ে প্রতিনিয়ত ঠকছি।
এদিকে ওমানে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৭৫ হাজার বাংলাদেশি নিজেদের কর্মস্থল ছেড়েছেন বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৭৫ হাজার বাংলাদেশি কাজ ছেড়ে গেছেন। তবে কেন গেছে তার কারণ তারা জানাতে পারেননি। কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা জানালেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি। কত দিন সময়ের মধ্যে তারা ‘লাপাত্তা’ হয়েছেন- সে তথ্যও পাওয়া যায়নি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ওমানে প্রায় ৯ লাখ ৮২ হাজার ৭৬২ বাংলাদেশি কাজ করছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২৬ মে পর্যন্ত ৪২ হাজার ৮৪৮ বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে দেশটিতে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.