ট্রানজিট সুবিধা পাবে দুই দেশই, মাশুল লাগবে

c6e7878f4c81ab7dc4b21af0a1863f40-8দীর্ঘ ৪১ বছর অপেক্ষার পর বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে স্থলসীমান্ত চুক্তি। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের ৪৩ বছর পর বাংলাদেশ-ভারত একে অন্যের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাণিজ্যের জন্য পণ্য ব্যবহারের সুযোগ পাবে। আর পণ্য পরিবহনের জন্য এক দেশ অন্য দেশকে
মাশুলও দেবে। বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলে যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু হবে।
বাণিজ্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দুই পক্ষ আন্তর্জাতিক চুক্তি, সনদ ও রীতি অনুসরণ করে আলোচনার ভিত্তিতে দুই দেশ পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রানজিটের মাশুলের হার ঠিক করবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দুদিনের ঢাকা সফরের প্রথম দিনেই অর্থাৎ ৬ জুন এ বিষয়গুলোর সুরাহা হতে যাচ্ছে। ওই দিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক শেষে পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন হবে বাণিজ্য চুক্তি ও অভ্যন্তরীণ নৌ-বাণিজ্য ও ট্রানজিটের প্রটোকল। চালু হবে আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস।
দুই পক্ষের সম্মতিতে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহন ও মাশুলের প্রস্তাব যুক্ত করে বাণিজ্য চুক্তিতে পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধিত চুক্তিটি পাঁচ বছরের জন্য নবায়ন হবে। বাণিজ্য চুক্তিতে পরিবর্তন আনায় নৌ-প্রটোকলেও তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহন ও মাশুলের বিষয়টি যুক্ত করা হয়। গত ১৮ মে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় সংশোধিত নৌ-প্রটোকল পাস হয়। গত ১৯ মে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন এ দুটি বিষয় বাদ দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। এতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় নৌ-প্রটোকল নিয়ে। শেষ পর্যন্ত গত ২৮ মে ভারত অবস্থান পরিবর্তন করায় নৌ-প্রটোকল নিয়ে অনিশ্চয়তার অবসান হয়।
জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গতকাল রোববার দুপুরে তাঁর দপ্তরে বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি ও নৌ-প্রটোকলে আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসরণ করে ট্রানজিট মাশুলের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এক দেশের ভূখণ্ড ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য দেশ পণ্য পরিবহনের জন্য মাশুল দেবে। সংশোধিত বাণিজ্য চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সড়ক, নৌ ও রেলপথ ব্যবহার করে নেপাল বা ভুটানের মতো তৃতীয় কোনো দেশে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় অর্জন। ভারতও বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে পারবে।
নরেন্দ্র মোদির প্রথম ঢাকা সফরে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা, তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহন ও ট্রানজিটের জন্য মাশুল নির্ধারণের পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা সহজ করার ঘোষণা আসছে। তবে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দাবি, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এ সফরে সই হচ্ছে না।
নয়াদিল্লি প্রতিনিধি জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গতকাল তাঁর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বাংলাদেশ সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হবে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত নিয়েই চুক্তিটি সই হবে।
মোদি সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মন্ত্রণালয়ের এক বছরের কাজের মূল্যায়ন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সুষমা ঢাকায় মোদির সফরসঙ্গী হচ্ছেন না।
এদিকে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত ভারতের পক্ষ থেকে মোদির সফরসঙ্গীদের যে তালিকা বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো মন্ত্রীর নাম নেই। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল ও পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর মোদির সঙ্গে ঢাকায় আসবেন। সফরসঙ্গী হিসেবে এক দিন আগেই ঢাকায় আসবেন মমতা। ৫ জুন ঢাকায় এসে তিনি ৬ জুন কলকাতা ফিরে যাবেন।
মমতার কারণে শেষ মুহূর্তে মোদির ঢাকা সফরসূচিতে কিছু পরিবর্তন আসছে। এর আগে খসড়া সফরসূচিতে ৭ জুন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগরতলা-ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিস উদ্বোধনের কথা ছিল। দুই পক্ষ এখন বাস সার্ভিস উদ্বোধনের অনুষ্ঠানটি ৬ জুন বিকেলে দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আয়োজনের কথা ভাবছে। একই অনুষ্ঠানে ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস উদ্বোধনেরও কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির শীর্ষ বৈঠকের পর বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকসহ প্রায় ২০টি চুক্তি সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চুক্তিগুলো হচ্ছে বাণিজ্য, ঋণ, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল ও পণ্যের মান পরীক্ষা। সমঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে মানব পাচার ও জাল নোট প্রতিরোধ, উপকূলীয় রক্ষীদের সহযোগিতা ও যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল। এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন, সামুদ্রিক অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা, শিক্ষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.