এক বছরে দুবাই থেকে লাশ হয়ে ফিরেছে ৩২৬ বাংলাদেশি

united-arab-emirate-UAEএভিয়েশন নিউজ: রঙিন স্বপ্ন চোখে নিয়ে কর্মের সন্ধানে দেশ, পরিবার-পরিজনের মায়া ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেন প্রবাসীরা। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যয় করেন মূল্যবান সময়। দিয়ে যায় শ্রম। কেউ নিজের প্রচেষ্টায় ছোঁয়া পান সফলতার। আবার কেউবা ছুটতে থাকেন অধরা স্বপ্নের পিছু। স্বপ্ন পূরণের আশায় বিদেশে পড়ে থাকা শ্রমিকরা বিভিন্ন সময় নানা দুর্ঘটনায় চলে যান না ফেরার দেশে। হয় না অনেকের শেষ দেখাটুকু আত্মার আত্মীয় বা স্বজনদের সঙ্গে। বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশ কন্স্যুলেট বা নিকট আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে কোম্পানি-স্পন্সরদের থেকে ক্ষতিপূরণ মিললেও পরিবারের সদস্যদের থেকে চিরতরে হারিয়ে যান এসব শ্রমজীবী মানুষ।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত এক বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকেই শুধু লাশ হয়ে ফিরেছেন ৩২৬ প্রবাসী বাংলাদেশি। এদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন ২২৪ জন, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৪৯ জন, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে নিহত হন ২৫ জন, খুন ও আত্মহত্যা মিলে মারা গেছেন আরও ২৮ প্রবাসী বাংলাদেশি। দুবাইয়ের বাংলাদেশ কন্স্যুলেট মৃত শ্রমিকদের ভিসা বাতিল ও লাশ দেশে প্রেরণের ওপর ভিত্তি করে ২০১৩ সালের একটি বিবরণী প্রকাশ করেছে। কোম্পানি ও স্পন্সরদের থেকে মৃত শ্রমিকদের জন্য আদায়কৃত ক্ষতিপূরণের হিসাবও উল্লেখ করা হয় এতে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বিভিন্ন সময় দায়ী ব্যক্তিদের থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ৮,৪৬,৬০,২৫৫.৫৯ টাকা। কন্স্যুলেট প্রদত্ত ওই বিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয় ৩২৬ জন মৃত শ্রমিকের মধ্যে বাংলাদেশ বিমান ২৭টি ও বিভিন্ন কল্যাণ সংস্থা ৮টি লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এছাড়া স্থানীয় কবরস্থানে কবরস্থ করা হয় পাঁচটি মৃতদেহ।

মৃত ব্যক্তি ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ে দুবাই কন্স্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ২০১৩ সালে মৃত শ্রমিকের ভিসা বাতিল ও দেশে প্রেরণের সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ৩২৬ জন। প্রথমেই কোর্টের মাধ্যমে এ মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা সংস্থাকে চিহ্নিত করা হয়। পরে রায় অনুযায়ী এদের কারও এক লাখ আবার কারও দেড় লাখ দিরহাম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকে।’

তিনি জানান, ‘ক্ষতিপূরণের এ টাকা দুটি পদ্ধতিতে উত্তোলন করা হয়। একটি প্রাইভেট টু প্রাইভেট পলিসি। এতে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা তাদের কোনো আত্মীয়স্বজন বা মৃত ব্যক্তির সহকর্মী-বন্ধুকে দায়িত্ব দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে পারে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে শতকরা ৮০ ভাগ পরিবার। যে হিসাব আমাদের কাছে থাকে না। তবে শতকরা ২০ ভাগ মৃত ব্যক্তির পরিবার অন্য লোকে বিশ্বাস না করায় বাংলাদেশ কন্স্যুলেটকে পাওয়ার অব অ্যাটনি দিয়ে দেয়। এতে করে কন্স্যুলেট দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন কাগজ-পত্রাদির মাধ্যমে কোম্পানি বা স্পন্সর থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারে। আর এ পদ্ধতিতে আদায় করা ক্ষতিপূরণের হিসাব সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়।’

অন্যদিকে আরব আমিরাতের আবুধাবীস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের অফিসিয়ালি ওয়েবসাইটে www.bdembassyuae.org মৃতদেহ দেশে প্রেরণের ক্ষেত্রে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যাদি প্রকাশ করেছে।

– কামরুল হাসান জনি, দুবাই থেকে

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.