বাম পাশের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ার কারণে কক্সবাজারে কার্গো বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের পাইলটসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরো একজন।
বুধবার দুর্ঘটনার পর একথা জানান, বেসরকারি কোম্পানি ট্রু এভিয়েশন লিমিটেডের লোকাল এরিয়া ম্যানেজার অরূপ অধিকারী।
অরূপ অধিকারী জানিয়েছেন, তাদের ‘আন্তনভ-২৬’ বিমানটি কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে ৮১০ বক্স চিংড়ি পোনা নিয়ে যশোরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় সকাল ৯ টা ৫ মিনিটে। এটি আকাশে ওঠার পর ৯ টা ১০ মিনিটের দিকে বিমানের পাইলট তাকে অবহিত করেন বিমানটির বাম পাশের ইঞ্জিল বিকল হয়ে গেছে।
অরূপ আরো জানান, বিমানের দুটি ইঞ্জিন রয়েছে। একটি বাম পাশে, অপরটি ডান পাশে। ইঞ্জিন বিকল হওয়ার পর পাইলট জরুরিভাবে অবতরণের অনুমতি চান। বিমান বন্দর কৃর্তপক্ষ অবতরণের অনুমতিও দেন। কিন্তু এর মধ্যে সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে বিমানটি নাজিরারটেক পয়েন্টে বঙ্গোপসাগরে বিধ্বস্ত হয়।
এরপর কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের একটি দল উদ্ধার অভিযানে শুরু করে। তবে এর আগেই স্থানীয় লোকজন বিমানে থাকা দুজনকে উদ্ধার করেন। তাদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হলে একজনের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নোবেল কুমার বড়–য়া জানান, হাসপাতালে আনা দুজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আরেকজনকে চিকিৎসা দেয়ার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ট্রু এভিয়েশন লিমিটেড কৃর্তপক্ষ জানিয়েছেন, হাসপাতালে যার মৃত্যু হয়েছে তিনি ওই বিমানের প্রকৌশলী। তার নাম কুলিশ আন্দ্রে। আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়েছে তার সহযোগী ডলো ডারম্যানকে।
এরপর উদ্ধার অভিযান চালানো হলেও কার্যত কোন উন্নতি হয়নি। বিকাল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে আসে নৌ বাহিনীর উদ্ধারকারি জাহাজ অতন্দ্র ও অপরাজেয়।
নৌ বাহিনীর ক্যাপ্টেন মোরসালিন জানান, ভাটায় পানি নেমে যাওয়ার পর বিমানের ভেতরে পাওয়া যায় নিখোঁজ দুজনের লাশ। তাদের উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারি পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাগরে ভাটা শুরু হওয়ার কারণে দূর্ঘটনাকবলিত বিমানটি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২/৩ কিলোমিটার দূরে সরে গেছে। ফলে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পরে পানি নেমে গেলে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
ট্রু এভিয়েশন লিমিটেড কৃর্তপক্ষ জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া শেষ দুজনের মধ্যে একজন পাইলট মুরাদ এবং অপর জন কো-পাইলট ইভান। তিন জনের মৃত দেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার সাধন কুমার মোহন্ত জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর ক্রুসহ চার আরোহী নিয়ে উড়োজাহাজটি সমুদ্রের নাজিরারটেক পয়েন্টে বিধ্বস্ত হয়। তবে কি কারণে এটি বিধ্বস্ত হয়েছে তিনি জানেন না।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জানান, এ ঘটনার তদন্তে একটি দল গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর ঘটনার কারণ জানা যাবে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন জানান, তিন জনের মৃতদেহ ময়না তদন্তের পর আইনগত প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন চিংড়ি পোনা উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান বলাকা হ্যাচারী। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নজিবুল ইসলাম জানান, র্দীঘদিন ধরে কার্গো নিয়ে তার পোনা পরিবহন করেন। এই প্রথম কোন বিমান র্দূঘটনার কবলে পড়েছেন। এতে এক কোটি পোনা ছিল, যার বাজার মূল্য ৩৫ কোটি টাকা।