এভিয়েশন নিউজ: ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফরকালে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য ভিসা অন অ্যারাইভাল ইস্যুর পদ্ধতি চালু এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এককালীন ১০ হাজার টন খাদ্যপণ্য ট্রানজিটের ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বেশি বয়েসীরা বিমানবন্দর কিংবা স্থলবন্দরে ভারতের ভিসা পাবেন ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু আসামের রাজ্য সরকারের বিরোধিতার কারণে ভিসা শিথিল করার ঘোষণা শেষ পর্যন্ত দেয়া হবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
ঢাকার পক্ষ থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে এককালীন ১০ হাজার টন খাদ্যপণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের স্থলপথ ব্যবহারের অনুমতির ঘোষণা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের ট্রাক ব্যবহারের মাধ্যমে এই পণ্য পরিবহনের অনুমতি দেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সুষমা স্বরাজ তিন দিনের সফরে আগামী বুধবার ঢাকায় আসছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এককভাবে এটা তার প্রথম বিদেশ সফর। তবে ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি ভুটান সফর করেছেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সুষমা স্বরাজের সফরকালে দুদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই এবং সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয় উত্থাপন করা হতে পারে।
কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতার কারণে এ দুটি ইস্যুতে এই সফরে অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানা গেছে। তবে সুষমা স্বরাজ আগের সরকারের ধারাবাহিকতায় চুক্তি দুটির বিষয়ে ভারতের প্রতিশ্র“তি পুনর্ব্যক্ত করতে পারেন।
ভারত গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের ৬৫ বছরের বেশি বয়েসী নাগরিকদের জন্য ভিসা অন অ্যারাইভাল চালু করেছে। ভারত ২০১৩ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে রিভাইজড ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্ট (আরটিএ) নামে একটি ভিসা চুক্তি সই করে। ওই চুক্তির ফলে ২০০১ সালের ভিসা চুক্তির অনেক শর্ত শিথিল করা হয়।
এখন সুষমার সফরে এই চুক্তির আরেক দফা পরিবর্তন করে ভিসা সহজ করার মাধ্যমে বয়স্কদের জন্য ভারতে প্রবেশমুখে ভিসা দেয়ার বিধান চালুর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ভিসা সহজ করার এই বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন করেছে আসাম রাজ্য সরকার।
বৃহস্পতিবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের ১০ বছরের কম এবং ৭০ বছরের বেশি বয়েসীদের বিনা ভিসায় ভারতে প্রবেশের প্রস্তাব বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে আসাম সরকারকে একটি চিঠি পাঠায়। শনিবার আসামের কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, বিনা ভিসায় যে কোনো বয়েসী বাংলাদেশীর ভারতে প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে।
গগৈ বলেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ভিসা ছাড়া এ দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। বয়স নিয়ে ভিসাসংক্রান্ত নিয়ম শিথিলের কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভিসা শিথিলের প্রশ্নে ঢাকায় এক কূটনীতিক যুগান্তরকে জানিয়েছেন, সুষমার সফরে এই বিষয়ে অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। ভারতের নেতারা এই মুহূর্তে ইরাক ইস্যুতে খুবই ব্যস্ত। তাছাড়া, সুষমা এবার শুভেচ্ছা সফরে আসছেন।
এদিকে, সুষমা স্বরাজ সফরকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন কিনা তাও নিশ্চিত হয়নি। কেননা, দিল্লি থেকে যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকের কর্মসূচি রয়েছে।
তিনি বিশিষ্ট ব্যক্তি, ব্যবসায়ী নেতা এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সুষমা স্বরাজ বাংলাদেশ ইন্সষ্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (বিস)-এর আয়োজনে একটি বক্তৃতা দেবেন বলে জানিয়েছে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীর আমন্ত্রণে এ সফরে আসছেন সুষমা স্বরাজ।
তিনি ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করবেন শেখ হাসিনার কাছে। এদিকে আখাউড়া থেকে মহিউদ্দিন মিশু জানিয়েছেন, ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সংবাদ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুষমার সফরে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থল যোগাযোগ আরও বাড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে।
এই সফরে দুদেশের মধ্যে আগে স্বাক্ষর হওয়া ভিসা সহজীকরণ চুক্তির বেশ কয়েকটি ধারা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিতে পারেন সুষমা স্বরাজ। কুড়িগ্রাম থেকে আহসান হাবীব নীলু জানিয়েছেন, সুষমা স্বরাজের সফরকালে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির নেতারা।
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয়। এ সময় ছিটমহল বিনিময় কমিটির সভাপতি মইনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মস্তোফা, আলতাফ হোসেন, মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক যুগান্তরের সৌজন্যে।