এভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সিবিএ সভাপতি মুশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মান্তাসার রহমানসহহ ১৭ নেতার সম্পদ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত শাখা-১ এ অনুসন্ধান শুরু করে।
দুদক সুত্রে জানা গেছে, বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কেবিন জন স্টিল গত বছর ২৩ জুলাই দুদক চেয়ারম্যানের কাছে এক চিঠিতে দুনীতিবাজ সিবিএ নেতাদের তদন্ত করার অনুরোধ করেন। ওই চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, বিমানের দুনীতির মাত্রা সম্পর্কে তিনি উব্দিগ্ন।
নানা চেষ্টা তদবির ও একাধিক পরিকল্পনা গ্রহন করেও সিবিএ নেতাদের দুনীতি বন্ধ করানো যাচ্ছে না। সিবিএ নেতারা বিমানের এয়ারপোর্ট এবং অন্যান্য সম্পর্শকাতর এলাকায় প্রবেশ করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে। বিভিন্ন বিভাগের অবৈধ কর্মকান্ডগুলেঅকে বৈধতা দেয়ার লক্ষে ক্ষমতাধর সিবিএ নেতাদের প্রদান করা হচ্ছে বিপুল পরিমানে নগদ নারায়ন।
ক্ষমতাসীন সিবিএ নেতাদের প্রভাব প্রতিপত্তি এবং প্রতিশোধের আতঙ্গে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। উর্ধতন কর্মকর্তারাও তাদের কাছে অসহায়। কথায় কথায় এরা সভা সমাবেশ ও জ্বালাও পোড়াও করে বিমানে আতঙ্কজনক পরিবেশ তৈরী করছে। পরিচালকদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখছে।
ধর্মঘট ডেকে অচল করে দিচ্ছে গোটা বিমান বন্দর। এমনকি চাপ প্রয়োগ করে বৈদেশিক স্টেশনগুলোতেও তাদের তালিকা ভুক্ত নেতাদের পোস্টিং করিয়ে নিচ্ছে। এরপর ফরেন পোস্টিং নিয়ে সেসব দেশে নানা অনিয়ম-দুনীতি আর অবৈধ কর্মকান্ড করছে। এমনকি হজ যাত্রী ও হাজীদের গাইড হয়ে সৌদি আরব গিয়েও অবৈধ কর্মকান্ড করার অভিযোগ আছে।
কথায় কথায় এরা প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী এমপি ও সংসদীয় নেতাদের দোহায় দিয়ে এসব অবৈধ কর্মকান্ড চালাচ্ছে। একারণে কেউ ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলে না। কেভিন স্টিল তার চিঠিতে বলেছিলেন, সিবিএ নেতারা বিমানের ক্যটিারিং সেন্টার জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকী পর্যন্ত দিয়েছে।
এই অবস্থায় এসব দুনীতিবাজ সিবিএ নেতাদের তালিকা তৈরী করে সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলোর তদন্ত করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এসকল দুনীতিগ্রস্থ কর্মচারীদের ব্যাংক একাউন্ট ও সম্পদের বিবরণ তদন্ত করার ও অনুরোধ করেন কেভিন। তিনি বলেন, একজন কর্মচারী মাসে বিমান থেকে যে বেতন ভাতা পায় বাস্তাবে তাদের কার্যক্রম রাজকীয়।
বেতনের বাইরেও তাদের কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যাংক ব্যালেন্স ও সম্পদ রয়েছে। কেভিন তার চিঠিতে সিবিএ নেতা ছাড়াও বিমানের আরো কিছু কিছু বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বিরুদ্ধেও সম্পদেরর অনুসন্ধান চালানোর জন্য দুদকের কাছে রিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে মার্কেটিং, কাস্টমার সার্ভিস ও বৈদেশিক স্টেশনগুলো ছিল অন্যতম।
দুদক সূত্র জানায়, দুই প্রভাবশালী সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে আমলে নেয়া অভিযোগে অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি রয়েছে। এসব তথ্যকে ভিত্তি ধরে এনবিআর, বিভিন্ন ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ, ডাক বিভাগ, ভ‚মি অফিস, জেলা ও সাব রেজিস্ট্রার অফিসসহ ১৭টি দপ্তরে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক নাসির উদ্দিন আহমেদ রোববার এ চিঠি পাঠান। আগামি ১০ জুলাইয়ের মধ্যে তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, বাংলাদেশ বিমানের ১০টি বিভাগের ৪০টি ঘাটে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি ও হরিলুটের ঘটনা ঘটছে। বিমান শ্রমিক লীগের ২০ জন শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে প্রতি মাসে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ শুধুমাত্র চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিমান শ্রমিক লীগের অন্তত ৫০ জন শ্রমিক নেতা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন।
জানা গেছে, চাঁদার টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয় সরকারের অনেক প্রভাবশালীদের মধ্যেও। একারণে বড় কোন অ্যাকশন হচ্ছে না অভিযুক্তদের। বিমানের শাখাগুলো হল মতিঝিল সেল্স অফিস, কার্গো বিভাগ, এয়ারপোর্ট সার্ভিস বিভাগ, বিক্রয় ও বিপনন পরিদপ্তর, সম্ভার ও ক্রয় পরিদপ্তর, যানবাহন উপবিভাগ, সিকিউরিটি ও তদন্ত বিভাগ, বিএফসিসি, বিমানের কর্মচারী নিয়োগ ও কর্মচারীদের পদোন্নতি, চুক্তি নবায়ন ও শাস্তি কালিন সময়ে।
শ্রমিকদের ওভারটাইম রোস্টার তৈরীর নামে চাঁদবাজি
শ্রমিক কর্মচারীদের ওভারটাইমের নামে বাংলাদেশ বিমানে চলছে হরিলুট । গত বছর শুধু এই ওভারটাইম খাতে বিমানকে গুনতে হয়েছে প্রায় ৪৬ কোটি টাকা। তার আগের বছর ছিল ৩৮ কোটি টাকা। জানাগেছে একজন কর্মচারীর গড়ে প্রতি ঘন্টার বেতন ৮০ টাকা হলেও ওই কর্মচারী প্রতি ঘন্টার জন্য ওভারটাইম পাচ্ছে ১৬০ টাকা। জানাগেছে বাংলাদেশ বিমানের এই শিফটিং ডিউটি এবং ওভারটাইম নিয়ে লুটপাটের প্রধান হোতা হল বিমানের সিবিএ সংগঠন গুলো। বিমান শ্রমিকলীগ তাদের নেতৃত্বে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে সিবিএ‘র ২০ নেতাকে প্রতি মাসে মোটা অংকের মাসোহারা দিতে হচ্ছে ১৮শ কর্মচারীকে।
কার্গো রফতানি শাখায় ডিউটি রোস্টারের নামে চাঁদাবাজি
জানা গেছে সিবিএ নেতারা বিমানের কার্গো বিভাগের রপ্তানী শাখার স্পেস কন্ট্রোল, কার্গো ওজন চেকিং, কার্গো আমাদানী শাখার মেইন ওয়্যার হাউস, ডেলিভারী গেইট ও কার্গো প্রসিডিউস শাখায় শ্রমিকদের ডিউটি রোস্টারের নামে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা উঠাচ্ছে।
পিসিইউ শাখায় পোস্টিং দেয়ার নামে চাঁদাবাজি
বিমানের এয়ারপোর্ট ট্রাফিক শাখার পাসপোর্ট চেকিং ইউনিট (পিসিইউ) শাখায় পোস্টিং নিতে হলে প্রত্যেক স্টাফকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় সিবিএকে। জানাগেছে এই শাখায় পোস্টিং নেয়া বিমানের একজন সদস্য প্রতিদিন আয় করছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।
চেকিং কাউন্টারে অতিরিক্ত বাগেজ মাশুল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি
বিমানের চেকিং কাউন্টারে বিভিন্ন ফ্লাইটে গমনকারী যাত্রীদের অতিরিক্ত বাগেজ মাশুল আদায়ের নামে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা আয় করছে। বাস্তবে এই টাকা বিমানের কোষাগারে জমা হচ্ছে না। এ
সিট রিজারভেশনের নামে চাঁদাবাজি
সিট রিজারভেশন শাখায় নিজদের পছন্দের কর্মী পোস্টিং দিয়ে এজেন্টদের কাছ থেকে সিট কনফার্ম করার অজুহাতে ফ্লাইট ভিত্তিক লাখ লাখ টাকা আয় করেও সেই টাকা বিমানের কোষাগারে জমা না দিয়ে লুটপাট করছে।
যানবাহনের নামে চাঁদবাজি
বিমানের ভাড়া গাড়ির ঠিকাদার ও মালিকদের কাছ থেকেও মাসিক ভিত্তিতে লাখ লাখ টাকার মাসোহারা আদায় করছে সিবিএ। বিমানের প্রতিটি নিয়োগের জন্য সিবিএকে মাসোহারা দিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিটি নিয়োগের জন্য গড়ে ১ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে সিবিএকে।