রিজার্ভের টাকা চুরিতে ব্যবহৃত উইলিয়াম গো’র অ্যাকাউন্টটি ভুয়া!

rcbc-Phillippinesযুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ লাখ ১০ হাজার ডলার চুরির (হ্যাক) ঘটনায় ব্যবহৃত পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে উইলিয়াম গো’র অ্যাকাউণ্টটি ভুয়া দাবি করেছেন তার আইনজীবী। গো’র আইনজীবী র‍্যামন এসগিরা শুক্রবার ম্যানিলায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছেন বলে জানিয়েছে ফিলিপাইনের প্রভাবশালী পত্রিকা ইনকোয়ারার। এসগিরা বলেন, ‘অ্যাকাউন্টটি পুরোপুরি ভুয়া। গো’র স্বাক্ষর জালিয়াতি করে রিজেল ব্যাংকের নারী ব্যবস্থাপক দেগুইতো তা খুলেছিলেন।’ দেগুইতো এর দায় স্বীকার করেছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি। গো’র আইনজীবী আরও বলেন, ‘ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দেগুইতো ওই অ্যাকাউন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন আমার ক্লায়েন্টকে। গো প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ১ কোটি পেসো ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতেও রাজি না হলে ঘুষের প্রস্তাব ২ কোটি ডলারে ওঠে। কিন্তু তাতেও আমার ক্লায়েন্ট রাজি হননি।’ রিজল ব্যাংকে যে পাঁচটি অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ সরানো হয়েছিল, সেই অ্যাকাউন্টধারী তিনজনকে গো চেনেন না বলে দাবি করেন এসগিরা জানান, রিজল ব্যাংক ও ব্যবস্থাপক দেগুইতোর বিরুদ্ধে গো মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এসগিরা বলেন, গো গত ১০ বছরে কোনো ক্যাসিনোতে যাননি। তবে ব্যাংকের ওই নারী কর্মকর্তা দেগুইতোর সঙ্গে ব্যবসায়ী গো’র চেনাজানা আগে থেকেই ছিল। গো’র অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় দেগুইতোর আইনজীবী ফেরদি তোপাসিও বলেন, তার মক্কেল ‘সময় হলেই’ সব বলবেন। দেগুইতোর এই আইনজীবী আগে বলেছিলেন, ওই পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই খুলেছিলেন দেগুইতো। এখন তাকে ‘বলির পাঠা’ বানানো হচ্ছে দেখে তদন্তকারীদের কাছে মুখ খুলতে চান তিনি। এদিকে দেগুইতো শুক্রবার স্বামী-সন্তানকে নিয়ে জাপান যেতে চেয়েছিলেন। ম্যানিলা বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রিজল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লরেঞ্জা তান পদত্যাগ করেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার এক বিবৃতিতে তার আইনজীবী ফ্রান্সিস লিম বলেছেন, পদত্যাগ নয়, তদন্ত যাতে বাধাহীন হয়, সেজন্য ছুটি নিয়েছেন ব্যাংক প্রেসিডেন্ট। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ লাখ ১০ হাজার ডলার চুরির (হ্যাক) ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে চিহ্নিত করেছে ফিলিপাইনের মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ কাউন্সিল। গত ১০ মার্চ দি ফিলিপিন্স ডেইলি ইনকোয়ারারের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। অভিযুক্ত ছয় জন হলেন- মাইকেল ফ্রান্সিসকো ক্রুজ, জেসি ক্রিস্টোফার ল্যাগরোসাস, আলফ্রেড সান্তোস ভার্গারা, অ্যানরিকো টিওডোরো ভাস্কোয়েজ, উইলয়াম সো গো এবং ক্যাম সিন ওংগ (কিম ওংগ)। প্রতিবেদনে বলা হয়, চিহ্নিত ৬ জনের মধ্যে ৫ জনেরই দেশটির ফিলিপিন্সের রিজল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনে (আরসিবিসি) একাউন্ট রয়েছে। অভিযুক্তরা অর্থ স্থানান্তরে ফিলিপাইনের মোট চারটি ব্যাংকে থাকা তাদের নিজস্ব একাউন্ট ব্যবহার করেছেন। ওই একাউন্টগুলো ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভে রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে প্রায় ৮শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে শ্রীলঙ্কায় স্থানান্তরিত প্রায় ২শ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাকি অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.