বেবিচকের চার্জ ফি দেশীয় বিমান সংস্থার পরিচালনার জন্য হুমকিস্বরূপ

Bebicokএভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশে অভ্যমত্মরীণ সকল বিমান বন্দরের অভিভাবক সংস্থা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ সকল বেসরকারী বিমান সংস্থা বেবিচক কর্তৃক এয়ার অপারেটরস সার্টিফিকেট (এওসি) প্রদান সাপেক্ষ এয়ারলাইন্সগুলো ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এভিয়েশন ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু নীতি নির্ধারণ করেছে। কোন কোন সিদ্ধামত্ম বেসরকারী বিমান সংস্থা এদেশে ব্যবসা পরিচালনা করার পূর্ব থেকেই বিদেশী বিমান সংস্থার জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু ১৯৯৬ সালে্ মহান জাতীয় সংসদে বেসরকারী বিমান সংস্থা, এ দেশে সরকারী বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা করার সিদ্ধামত্ম নিয়েছে। কিছু কিছু সিদ্ধামত্ম কোনভাবেই দেশীয় বিমান সংস্থার জন্য যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয় না।

বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ, নভো এয়ার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। খুব শীঘ্রই ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ব্যবসা পরিচালনা শুরম্ন করতে যাচ্ছে। ই্উনাইটেড এয়ারওয়েজ ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ অভ্যমত্মরীণ গন্ডি ছাড়িয়ে আমত্মর্জাতিক রম্নটে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নভো এয়ারকে আমত্মর্জাতিক রম্নটে ফ্লাইট পরিচালনার করার অনুমতি দিয়েছে। এপিক এয়ার নামে নতুন আরো একটি এয়ারলাইন্স বেবিচকের এনওসি প্রাপ্তির অপেক্ষায় আছে।

বেবিচক দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্য এ্যারোনটিক্যাল ও নন-এ্যারোনটিক্যাল চার্জ প্রয়োগ করে থাকে। এ্যারোনটিক্যাল চার্জ এর মধ্যে উলেস্নখযোগ্য ল্যান্ডিং, পার্কিং, রম্নট নেভিগেশন, সিকিউরিটি ও বোর্ডিং বী্রজ চার্জ অন্যতম। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নন-এ্যারোনটিক্যাল চার্জ।

সাথে রয়েছে সারচার্জ, ভ্যাট ও আয়কর ইত্যাদি। বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর এয়ারক্রাফট সাধারনত বাংলাদেশে অবস্থান করে এক-দুই ঘন্টা। খারাপ আবহাওয়া কিংবা টেকনিক্যাল কারনে বিদেশী বিমান সংস্থার এয়ারক্রাফট দীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশী রেজিস্টার্ড দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো মূল অবস্থানস্থল হচ্ছে বাংলাদেশের অভ্যমত্মরীণ বিমান বন্দরগুলো।

নিজ দেশের বিমান সংস্থার এয়ারক্রাফটগুলো নিজ দেশের বিমান বন্দরে অবস্থান করাই স্বাভাবিক। এ জন্য এয়ারক্রাফট অনুযায়ী চার্জ প্রয়োগ করে বেবিচক। দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনার পর দেশের অভ্যমত্মরে কোনো না কোনো বিমান বন্দরে অবস্থান করবে এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ে বেবিচক কর্তৃক একটি এয়ারবাস-৩১০ জন্য পার্কিং চার্জ প্রতিদিন ৪৯২ ইউএস ডলার নির্ধারিত দেশী ও বিদেশী রেজিস্টার্ড এয়ারক্রাফট এর জন্য। তদ্রুপ এমডি-৮৩ এর পার্কিং চার্জ ১৭৮ ইউএস ডলার, বোয়িং ৭৩৭ এর পার্কিং চার্জ ১৭১ ইউএস ডলার।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এর মুখপাত্র মোঃ কামরম্নল ইসলাম, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, মার্কেটিং সাপোর্ট এ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘দেশীয় এয়ারলাইন্স এর এয়ারক্রাফ্ট হওয়া সত্বেও এয়ারক্রাফ্ট সমুহের পার্কিং চার্জ বিদেশী এয়ারলাইন্স এর এয়ারক্রাফ্ট এর সমহারে ধার্য্য করা হয়। বাংলাদেশী রেজিস্টার্ড এয়ারক্রাফ্ট এর পার্কিং চার্জ আমত্মর্জাতিক রেটে ধার্য্য করা সমীচীন কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বহরে থাকা এমডি-৮৩ এবং এয়ারবাস এর ক্ষেত্রে আমত্মর্জাতিক হারে পার্কিং চার্জ ধার্য্য করা হয় যার টাকার হিসাবে বিশাল অংকের।’’

একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও নভো এয়ারকে। বর্তমানে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বহরে ২টি এয়ারবাস-৩১০, ৫টি এমডি-৮৩, তিনটি এটিআর-৭২ ও একটি ড্যাশ-৮ সহ মোট এগারটি এয়ারক্রাফট রয়েছে। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ২টি ড্যাশ-৮ ও ২টি বোয়িং ৭৩৭ সহ মোট ৪টি এয়ারক্রাফট। নভো এয়ার এর রয়েছে ৩টি এমব্র্রায়ার ১৪৫ মডেলের দুটি এয়ারক্রাফট।

আমত্মর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্য্যকৃত এ্যারোনটিক্যাল চার্জ দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলির জন্য একটি বিশাল প্রতিবন্ধকতা। উদাহরনস্বরূপ, ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট এর প্রতিবার অভ্যমত্মরীণ সেক্টরে ফ্লাইট শেষে ল্যান্ডিং এর জন্য ২,৪০৩ টাকা এবং আমত্মর্জাতিক ফ্লাইট শেষে বাংলাদেশের অভ্যমত্মরে যেকোন বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং এর জন্য ৩৩,৯২৪ টাকা নির্ধারিত। এটিআর-৭২ এয়ারক্রাফট এর প্রতিবার অভ্যমত্মরীণ সেক্টরে ফ্লাইট শেষে ল্যান্ডিং এর জন্য ৩,৯২২ টাকা এবং আমত্মর্জাতিক ফ্লাইট শেষে বাংলাদেশের অভ্যমত্মরে যেকোন বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং এর জন্য ৪৬,৩১৫ টাকা নির্ধারিত।

এম্ব্রায়ার-১৪৫ এয়ারক্রাফট এর প্রতিবার অভ্যমত্মরীণ সেক্টরে ফ্লাইট শেষে ল্যান্ডিং এর জন্য ৪,১৭৫ টাকা এবং আমত্মর্জাতিক ফ্লাইট শেষে বাংলাদেশের অভ্যমত্মরে যেকোন বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং এর জন্য ৪৬,৮৩২ টাকা নির্ধারিত। বোয়িং-৭৩৭ এয়ারক্রাফট এর প্রতিবার অভ্যমত্মরীণ সেক্টরে ফ্লাইট শেষে ল্যান্ডিং এর জন্য ১৮,৬১৯ টাকা এবং আমত্মর্জাতিক ফ্লাইট শেষে বাংলাদেশের অভ্যমত্মরে যেকোন বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং এর জন্য ১১২,৩৪০ টাকা নির্ধারিত। এমডি-৮৩ এয়ারক্রাফট এর প্রতিবার অভ্যমত্মরীণ সেক্টরে ফ্লাইট শেষে ল্যান্ডিং এর জন্য ১৯,১৪৬ টাকা এবং আমত্মর্জাতিক ফ্লাইট শেষে বাংলাদেশের অভ্যমত্মরে যেকোন বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং এর জন্য ১২০,৪১৮ টাকা নির্ধারিত। এয়ারবাস ৩১০ এয়ারক্রাফট এর প্রতিবার অভ্যমত্মরীণ সেক্টরে ফ্লাইট শেষে ল্যান্ডিং এর জন্য ৫২,৩৩১ টাকা এবং আমত্মর্জাতিক ফ্লাইট শেষে বাংলাদেশের অভ্যমত্মরে যেকোন বিমানবন্দরে ল্যান্ডিং এর জন্য ২৮০,৫০৮ টাকা নির্ধারিত।

বাংলাদেশে প্রাইভেট এয়ারলাইন্সসমূহের ব্যবহৃত ড্যাশ-৮, এটিআর-৭২, এম্ব্রায়ার-১৪৫, বোয়িং-৭৩৭, এমডি-৮৩ কিংবা এয়ারবাস-৩১০ এয়ারক্রাফ্ট এর ক্ষেত্রে বিদেশ প্রত্যাগত ফ্লাইটগুলির জন্য ডমেষ্টিক এর তুলনায় প্রকারভেদে বিভিন্ন এয়ারক্রাফট এর এ্যারোনটিক্যাল চার্জ প্রায় ৫ থেকে ১৪ গুন বেশী চার্জ ধার্য্য করা হয়। দৃশ্যত মনে হয়, বেবিচক কর্তৃক আমত্মর্জাতিক রম্নটে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলির ফ্লাইট পরিচালনা নিরম্নৎসাহিত করা হচ্ছে। অভ্যমত্মরীণ ফ্লাইটের ন্যায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আমত্মর্জাতিক ফ্লাইটের এ্যারোনটিক্যাল চার্জসহ অন্যান্য চার্জ সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারন করলে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায় প্রাইভেট এয়ারলাইন্স এর টিকে থাকা সহজসাধ্য হবে।

পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ তাদের দেশের নিজস্ব এয়ারলাইন্স সমুহের বিকাশ সাধনের জন্য নানাবিধ সুযোগ বা ছাড় দিয়ে থাকে। কিন্তু দেশে বাংলাদেশী কোন প্রাইভেট এয়ারলাইন্স বেবিচক থেকে এ্যারোনটিক্যাল ও নন-এ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ আলাদা কোন সুবিধা পাচ্ছে না। যার ফলে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে একাধিক এয়ারলাইন্স চালু হওয়ার পর অনেক চেষ্টা করেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দেশীয় এয়ারলাইন্সের স্বার্থরতা করে সময়োপযোগী কিছু সিদ্ধামত্ম নিলে সার্বিক বিবেচনায় এ দেশের এভিয়েশন ব্যবসায় প্রাইভেট এয়ারলাইন্সসমূহ বিদেশী এয়ারলাইন্সের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা সহজ হবে।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও নভো এয়ার বাংলাদেশী রেজিস্টার্ড বেসরকারী এয়ারলাইন্স।

সারা বিশ্বের সব এয়ারলাইন্সর জন্য ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন (IATA) কর্তৃক মানি এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারিত। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে IATA মানি এক্সচেঞ্জ রেট ১ ইউএস ডলার সমান ৭৭.৪০ টাকা। এয়ারলাইন্সগুলো IATA নির্ধারিত রেট অনুসরন করে থাকে। অথচ অভিভাবক সংস্থা বেবিচক সকল এয়ারলাইন্সকে এ্যারোনটিক্যাল ও নন-এ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ যে সকল বিল ধার্য্য করে থাকে তার এক্সচেঞ্জ রেট নির্ধারন করে ১ ইউএস ডলার সমান ৭৮.৬০ টাকা। যা এভিয়েশন ব্যবসায় IATA কর্তৃক ধার্য্যকৃত এক্সচেঞ্জ রেটের সাথে সাংঘর্ষিক। বেবিচকের ডলার এক্সচেঞ্জ রেটের কারনেও প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত লোকসান টানতে হয় দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে।

বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দেশীয় এয়ারলাইন্সকে বিদেশী এয়ারলাইন্সের মতো বৈদেশিক মূদ্রায় বিল ধার্য্য না করে দেশীয় মূদ্রায় এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে বিল ধার্য্য করলে বাংলাদেশী বিমান সংস্থাসমূহ লাভবান হবে বলে সংশিস্নষ্ট মহল মনে করেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.