দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ দিয়ে পাথর ও ফল আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার প্রায় ৫০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এতে মুখ থুবড়ে পড়েছে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের কার্যক্রম এবং কাজ না থাকায় প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছে।
জানা গেছে, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকারকরা গড়ে প্রতিদিন ৩শ ট্রাক বোল্ডার ও ছোট পাথর আমদানি করে থাকে। কিন্তু ভারতীয় রপ্তানিকারকের নিম্নমানের পাথর সরবরাহ ও দফায় দফায় পাথরের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট সমস্যার ব্যাপারে গত ১০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি মহদিপুর এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন ও সোনামসজিদ আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন দু’দফা বৈঠক করে।
বৈঠকে পরিচ্ছন্ন পাথর সরবরাহ, টনের পরিবর্তে সেফটিতে ওজন এবং প্রতি টনে ১৮.৫ ডলারের স্থলে ১৪ ডলারে পাথর দেয়ার ব্যাপারে একমত হন। কিন্তু বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো ভারতের মহদিপুর এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন মানবে না বলে সোনামসজিদ আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশনকে জানিয়ে দেন। ফলে দেশের আমদানিকারকরা চলতি মাসের ৬ তারিখ থেকে আবারো পাথর আমদানি বন্ধ করে দেয়। প্রতিটন পাথরে রাজস্ব হার ৯৬০ টাকা এবং ৩শ ট্রাকে প্রতিদিন ১ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে সরকার। গত ৬ দিনে সরকারের ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
অন্যদিকে, এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন বেদানা, আঙ্গুর, কমলা, মাল্টা ও কেনু জাতীয় ফল গড়ে ৫০/৬০ ট্রাক আমদানি হয়। ফলগুলো পঁচনশীল হওয়ার কারণে ১০% ছাড় দেয়ার কথা থাকলেও বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শতভাগ রাজস্ব কার্যকর করায় এ বন্দর দিয়ে ফল আমদানি বন্ধ করে দেয় আমদানিকারকরা। পাশাপাশি অন্যান্য বন্দরে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকায় এ বন্দর ছেড়ে ফল আমদানিকারকরা ভোমরা ও হিলি স্থলবন্দরে চলে গেছে। ফলে গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ফল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিটন ফলে রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে ৩০-৪৭ হাজার টাকা। এতে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০/৬০ টি ট্রাক ফল আমদানিতে প্রায় ২ কোটি রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। গত ২১ দিনে সরকার প্রায় ৪২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ফল আমদানিকারক এম এম ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মুনসুর রহমান জানান, ভৌগলিকভাবে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে ভারতের নাসিকের দূরত্ব কম হওয়ায় ফল আমদানি সহজ হয়ে থাকে এবং আমদানিকারকরা ফল আনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এমনকি সময় কমের পাশাপাশি খরচও কম হয়।
সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুনুর রশিদ জানান, অন্যান্য বন্দরে মিক্সড ফল আমদানি হলেও এ বন্দর দিয়ে তা আনতে দিচ্ছে না। তিনি একই নিয়মে সকল বন্দর পরিচালনা করার দাবি জানান।
সোনামসজিদ কাস্টমসের সহকারী কমিশনার সাঈদ আহম্মেদ রুবেল জানান, সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে দুই দেশের আমদানি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে সভা চলছে এবং তা ফলপ্রসু হলেই পাথর আমদানি চালু হবে।
ফলের বিষয়ে তিনি আরো জানান, ফল আমদানির বিষয়টি দু’দেশের আমদানি ও রপ্তানিকারকদের ব্যাপার। এরপরও বিষয়টি উপর মহলে জানানো হয়েছে।
বন্দর শ্রমিক সমব্য় কমিটির সভাপতি সাদিকুল ইসলাম জানান, গত ৩ সপ্তাহ ধরে ফল ও পাথর আমদানি বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা বেকার হয়ে গেছে। পরিবার–পরিজন নিয়ে কোনো রকমে দিনানিপাত করছে।