রংপুরে প্রতিবন্ধী ধর্ষণে শালিস, জরিমানার টাকা ভাগ বাটোয়ারা!
রংপুরের মিঠাপুকুরে প্রতিবন্ধী ধর্ষণের ঘটনা গোপনে রফাদফা করেছেন চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদের দিলশাদ হোসেন নামে একজন ইউপি সদস্য।
ধর্ষণের জরিমানা বাবদ নেওয়া ৪০ হাজার টাকার অর্ধেকটাই ভাগবাটোয়ারা করে বাকিটা পকেটস্থ করার অভিযোগ উঠেছে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসী ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চেংমারী ইউনিয়নের পূর্বমামুদের পাড়া গ্রামের একজন প্রতিবন্ধি মেয়ে (২৫) স্থানীয় মোসলেম বাজার হতে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে একই গ্রামের মৃত. মজিবর রহমানের ছেলে মোতালেব তাকে একটি নেপিয়ার ঘাসক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন। এতে, ওই প্রতিবন্ধি মেয়েটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মিঠাপুকুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। সেখানে ৩ দিন চিকিৎসাধীন থেকে বাড়ি ফিরে আসেন ধর্ষণের শিকার ওই মেয়েটি।
এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় একটি এজাহার দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু, ধর্ষণের ঘটনায় কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি পুলিশ। পরে স্থানীয়ভাবে কয়েকবার শালিস বৈঠকের চেষ্টা চালায় ধর্ষকের লোকজন। অবশেষে ২৬ অক্টোবর রাতে মোসলেম বাজার এলাকায় চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য দিলশাদ হোসেনের ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের শো’রুমে একটি গোপন শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ধর্ষককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউপি সদস্য। এরমধ্যে বৈঠকে উপস্থিত প্রভাবশালীরা খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। অবশিষ্ট টাকা ওই ইউপি সদস্য পকেটস্থ করেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকে অভিযোগ করেন, প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ করে মোতালেব বড় ধরনের অন্যায় করেছে। আমরা অন্যায়কারীর শাস্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু ইউপি সদস্য দিলশাদ হোসেন টাকার লোভে ঘটনাটি রফাদফা করেছেন। তারা ধর্ষক ও ইউপি সদস্যের কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানান।
চেংমারী ইউপি সচিব উজ্জল কুমার বলেন, ‘এ ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদে বিচার চেয়েছিল ওই মেয়ের স্বজন। আমরা থানায় মামলা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।’
শালিস বৈঠকে ধর্ষণের ঘটনাটি মিমাংসা করা অভিযুক্ত ইউপি সদস্য দিলশাদ হোসেন বলেন, ‘অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত ব্যক্তি উভয় দরিদ্র। তাই, স্থানীয়ভাবে ঘটনাটি ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে মিমাংসা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে মাত্র ১৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে খরচের জন্য। বাকি টাকাগুলো আমার কাছে রয়েছে, পরবর্তিতে ধর্ষণের শিকার ওই মেয়েকে দেওয়া হবে।’
চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করীম টুটুল বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে ওই মেয়ের স্বজনেরা অভিযোগ দিয়েছিল। আমি থানা পুলিশের কাছে পাঠিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাদী-বিবাদী যদি মিমাংসা করে থাকে, তাহলে কারো কিছু করার থাকতে পারেনা।
মিঠাপুকুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাফর আলী বিশ্বাস বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় কেউ মিমাংসা করতে পারেনা। আমরা চাই, এ ঘটনায় মামলা হোক। আসামি গ্রেপ্তার করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’