আগের চাকরির বেশি বেতন কি নতুন চাকরিতে বাধা?

আগের চাকরির বেশি বেতন কি নতুন চাকরিতে বাধা?

চাকরি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়েছে। তাই অন্য প্রতিষ্ঠানে নতুন চাকরি খুঁজতে গেলে আগের চেয়ে হয়তো কম বেতনেই খুশি থাকতে হবে আপনাকে। তবে এতে প্রমাণিত হবে যে আপনি যা, আপনার যোগ্যতা যেরকম, সে অনুযায়ী বেতন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আপনি কি কম বেতন নিতে আগ্রহী?

হয়তো পরিস্থিতির কারণে আগের চাকরির চেয়ে কম বেতনে নতুন চাকরিটি নিতে চাচ্ছেন আপনি। তবে নিয়োগদাতারা এক্ষেত্রে বেঁকে বসতে পারেন। তাদের ধারণা হতে পারে, আগের চাকরিতে যেখানে বেশি বেতন পেতেন, সে তুলনায় নতুন চাকরিতে কম বেতনে হয়তো কাজ করতে রাজি হবেন না আপনি। এর একটি কারণ হলো কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা নিয়োগকারীরা মনে করেন, পরে ভালো বেতনের অফার পেলে আবারো নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানে চলে যেতে পারেন আপনি।

তাই নতুন চাকরির জন্য আবেদন করার আগে সত্যিকার অর্থে বিবেচনা করুন আগের চেয়ে কম টাকায় চলতে পারবেন তো আপনি? না কি অন্য পথ খোলা আছে আপনার জন্য। কাজে যোগ দেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ভালো বেতনের আরেকটি চাকরি খুঁজবেন না তো আপনি? ধরুন আগে ৫০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। পরিস্থিতির কারণে এখন ৪০ হাজার টাকা বেতনে নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, এই যে ১০ হাজার টাকার ঘাটতি হচ্ছে, এ দিয়ে কি সংসার চলবে আপনার? নাকি বিকল্প কোনো আয়ের পথ খোলা আছে?

কিভাবে কম বেতনের কথা বলবেন?

ইন্টারভিউর সময় নিয়োগদাতারা আগে বেশি বেতন পাওয়া প্রার্থীদের ব্যাপারে কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন। তাই অনেক ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ মনে করেন নিয়োগদাতারা প্রার্থীর আগের বেতন ইতিহাস দেখার আগে প্রার্থীদের উচিত এ ব্যাপারে নিয়োগতার মনোযোগ আকর্ষণ করা। তবে কেউ কেউ ভিন্ন কথাও বলেন। ইন্টারভিউতে আগের বেতনের কথা না জিজ্ঞেস করলে এ ব্যাপারে কথা না বলতে পরামর্শ দিয়েছেন অনেক ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ।

ধরুন আগের চাকরিতে মাসে ৫০ হাজার টাকা পেতেন আপনি। নতুন চাকরিতে বেতন ৪০ হাজার। এক্ষেত্রে কৌশলে নিয়োগদাতাদের আপনি বলতে পারেন- ‘নতুন চাকরির সুযোগটিকে আমি খোলা মনে গ্রহণ করছি। পদটি আমার জন্য কতটুকু সম্মানজনক সেটা বিবেচনা করছি আমি।’ যদি নিয়োগদাতা আপনার বেতন ইতিহাস জানতে বার বার চাপ দেন, তাহলে তাকে বলুন বেশি বেতন পেতেন আপনি, তবে এরপরই কেন কম বেতনে নতুন চাকরিতে কাজ করতে চান, সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন। তবে মূল যে কথাটি মনে রাখতে হবে, তা হলো আপনার ব্যাখ্যা যেন কাজের উপর কেন্দ্র করে হয়, টাকার উপর নয়। যদি টাকার কথা বলতেই হয়, তাহলে নিয়োগদাতাকে বুঝিয়ে বলুন তিনি কম বেতনে ভালো প্রার্থীকেই বেছে নিয়েছেন।

কম বেতনে যেহেতু আপনি চাকরি নিচ্ছেন, তাই কেন চাকরিটি আপনার ও কোম্পানির জন্য ভালো সে ব্যাপারে জোর দিন। নিজেকে জাহির করা নয়, বরং চাকরিটি গ্রহণে আপাতদৃষ্টিতে ন্যায়সঙ্গত সমঝোতায় আসুন। এ পরিস্থিতিতে যেসব কথা বলতে পারেন:

* আমি পরিণত হতে, আরো শিখতে চাই। নতুন চাকরিতে তা করতে পারবো বলে মনে করি আমি।

* আমি বেশি আয় করছিলাম। কিন্তু এখন সঠিক বেতনে সঠিক চাকরি খুঁজছি।

* আর কয়েক বছর পর আর চাকরি করবো না আমি। তাই বাকি কয়েকটি বছর একটি টিমে কাজ করতে চাই।

* আপনার প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও দারুণ অগ্রগতি আমাকে আকৃষ্ট করেছে।

* আপনার প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়া আমার জন্য নতুন পথ সৃষ্টি করবে। আমার আগের অভিজ্ঞতা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

* আপনার কোম্পানির প্রশিক্ষণ আমার জন্য নতুন ডিগ্রি অর্জনে সহায়তা করবে। এতে করে আরো গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবো। এ প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে তিন বছর কাজ করার ইচ্ছা আছে আমার।

* বেতন কাঠামো বর্তমান বাজারের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন হয়েছে। তবে আমার আগের ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে সুন্দর একটি ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাই আমি।

* আমার বাসা থেকে আপনার অফিসে আসার রাস্তা অনেক অল্প। আর পরিবারের সাথে বাড়তি সময় কাটানো বেতন কম পাওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।

সবশেষে, যদি বেতনের বিষয়টি আপনার নতুন চাকরি খোঁজায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে চুক্তিভিত্তিক চাকরির বিষয়টি ভাবতে পারেন আপনি।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.