দেশে সিম নিবন্ধনের প্রভাবে ধারাবাহিকভাবে ফেব্রুয়ারি মাসেও ৮ লাখ ৭১ হাজার মোবাইল গ্রাহক কমেছে। এর আগে জানুয়ারি মাসে ১৭ লাখ ৬৪ হাজার গ্রাহক কমেছিল। এই নিয়ে দুই মাসে ২৬ লাখ ৩৫ হাজার সিম ইউজার কমেছে। সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশন (বিটিআরসি)-এর প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
মোবাইল অপারেটরগুলো বলছে, গ্রাহকের পরিচয় নিশ্চিতে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এর মাধ্যমে বিদ্যমান সংযোগের পাশাপাশি নতুন মোবাইল ফোন সংযোগ কিনতে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন, যার প্রভাব পড়েছে গ্রাহক সংখ্যায়।
ফেব্রুয়ারি শেষে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ১০ লাখ ৮৫ হাজারে; জানুয়ারিতে যা ছিল ১৩ কোটি ১৯ লাখ ৫৬ হাজার। এর আগের মাস গত বছরের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল গ্রাহক ছিল ১৩ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার। ৬ বছর ধরে শুধু জানুয়ারিতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নেটওয়ার্কে গড়ে প্রায় ১২ লাখ করে নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে ১৪ লাখ, ২০১১ সালের জানুয়ারিতে ১৬ লাখ ৯৫ হাজার, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ১১ লাখ ২৪ হাজার, ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ২ লাখ ৯ হাজার, ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ১০ লাখ ২৪ হাজার ও ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ১৫ লাখ ১০ হাজার নতুন গ্রাহক পায় অপারেটররা।
গত বছরের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতায় সব খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও সেলফোন অপারেটরদের গ্রাহক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪৭ শতাংশ। এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামীণফোনের গ্রাহকসংখ্যা হয়েছে ৫ কোটি ৬১ লাখ, জানুয়ারিতে যা ছিল ৫ কোটি ৬২ লাখ ৪ হাজার। বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা এ সময়ে প্রায় ৪ লাখ কমে হয়েছে ৩ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার, জানুয়ারিতে যা ছিল তিন কোটি ২৩ লাখ ৬৮ হাজার।
রবির গ্রাহকসংখ্যা ফেব্রুয়ারিতে ২ লাখ কমে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৫৩ হাজার হয়েছে। জানুয়ারিতে যা ছিল ২ কোটি ৭৭ লাখ ৯৫ হাজার। একই সময়ে এয়ারটেলের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার থেকে কমে ১ কোটি ৩ লাখ ৫১ হাজার হয়েছে। সিটিসেলের গ্রাহক ৮ লাখ ৬৭ হাজার থেকে আরও কমে হয়েছে ৮ লাখ ৩৩ হাজার। সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক ৪৬ হাজার বেড়ে ৪২ লাখ ৫৭ হাজার হয়েছে।
তবে একই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ২১ লাখ ৫০ হাজার। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা প্রতি মাসেই বাড়ছে। ফেব্রুয়ারিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮৩ লাখ ১৭ হাজার। জানুয়ারিতে এ সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫ কোটি ৫৫ লাখ ১২ হাজার, আইএসপি ও পিএসটিএন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ২৬ লাখ ৬৯ হাজার এবং ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এক লাখ ৩৬ হাজার।
দেশে চালু থাকা মোট সক্রিয় সিমের হিসেবে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। একটি সিম যদি একটানা ৯০ দিন বন্ধ থাকে তাহলে সেটিকে আর চালু সিম হিসেবে গণ্য করা হয় না। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর থেকে আঙুলের ছাপ (বায়োমেট্রিক) পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শুরুর পর থেকে পর পর দুই মাস মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমল। তবে ধারাবাহিকভাবে দুই মাস ধরে বিশাল একটি অংশ সিম ব্যবহার বন্ধ করার পর অপারেটরদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয় বা বিটিআরসি আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করেনি।