সন্দ্বীপে ১০ টাকা কেজির চালে হরিলুট : মুল হোতা মুছাপুর যুবলীগ সভাপতি দিদার

ডিলার যুবলীগ নেতা হওয়ায় ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা * কার্ডধারীদের অধিকাংশই ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বার ও ক্ষমতাসীনদের আত্মীয়

চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজির চালে হরিলুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই চাল কার্ডধারী গরিব-অসহায়দের না দিয়ে বেশি দামে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে অসাধু ডিলাররা। সম্প্রতি এ রকম অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ নেতা পরিচয় দেয়া এক ডিলারের বিরুদ্ধে। উপজেলার মুছাপুর গ্রামে বুধবার ভোরে ওই ডিলারের গোডাউন থেকে ট্রাক বোঝাই করে এ চাল বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা হাতেনাতে ধরে। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই ডিলার দিদারুল আলম ও তার লোকজন চালের ট্রাক নিয়ে উধাও হয়ে যান।

সন্দ্বীপ থানা পুলিশ গোডাউনের চাল বাইরে নিয়ে যাওয়ার তথ্য উদঘাটন করলেও এ চাল কোথায় গেছে তার হদিস পায়নি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) হালিম জাহাঙ্গীর  বলেন, ভোরে স্থানীয় বাসিন্দারা হাঁটতে বের হয়ে দেখতে পান মুছাপুর গ্রামের ডিলারের গোডাউন থেকে কয়েকজন লোক ট্রাক বোঝাই করে চাল নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তারা ট্রাকভর্তি চালের ছবি তুলতে গেলে দ্রুত ট্রাকটি পালিয়ে যায়।

এদিকে এ বিষয়ে স্থানীয়রা মোবাইল ফোনে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা রবীন্দ্র চাকমা ও গুদাম ইনচার্জ পলাশ ঘোষ ও থানা পুলিশকে জানালেও এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ চাল উদ্ধার করতে পারেনি। থানা পুলিশ বলছে, খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় কোনো মামলা করেনি। এ কারণে তারা কোনো অ্যাকশনে যেতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে, দিদারুল আলম নামের এ ডিলার স্থানীয় মুছাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। তার বাবা মোস্তানছের বিল্লাহও স্থানীয় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্টদের জানানোর পরও প্রায় ৪ ঘণ্টা পর পুলিশ ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এমনকি কোনো তদন্ত কমিটি গঠন না করে রবীন্দ্র চাকমা পরদিন সন্দ্বীপ ত্যাগ করেছেন।

উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার টেলিফোনে বলেন, কোনো চাল বাইরে যায়নি। গোডাউনে গিয়ে তিনি রেজিস্টার অনুযায়ী সব চাল ঠিকভাবে পেয়েছেন। কিন্তু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হালিম জাহাঙ্গীর  জানান, এক ট্রাক চাল বাইরে গেছে বলে তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। ডিলার দিদারুল আলমও তার কাছে চাল বাইরে পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন। দিদারুল আলম তাকে জানিয়েছেন, ট্রাকভর্তি চালগুলো তিনি তালপাতা স্টোর এলাকায় তার আরেকটি গোডাউনে নিয়ে গেছেন। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুই বছর ধরে ডিলার দিদারুল আলম ক্ষমতার জোরে এভাবে সরকারি চাল এনে কার্ডধারীদের না দিয়ে কেজিপ্রতি ২০ টাকা করে বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

ডিলার দিদারুল আলম  সন্দ্বীপ প্রতিনিধিকে জানান, সন্দ্বীপের অপর একটি ইউনিয়ন মগধরায় তার এক বন্ধু ডিলারের চালের ঘাটতি রয়েছে এ কারণে সেখানে এই চাল পাঠান। সকাল ৭টায় গোপনে চাল পাঠানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারাদিন তার কাজ আছে তা ছাড়া রাস্তায় ট্রাক পেয়ে সকালে পাঠিয়েছি। সরকারি চাল এভাবে অন্য ডিলারের কাছে পাঠানো বৈধ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ডিলার, আমি সরকারি লোক, আমার চাল বহনের লাইসেন্স আছে, আমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে নিয়ে যেতে পারব।

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা  বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ নিয়ে তদন্ত করা হবে। কারণ এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প। ১০ টাকা কেজির এই চাল নিয়ে কেউ কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মুছাপুরের ডিলার দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার লাইসেন্স বাতিল করে প্রয়োজনে মামলা করা হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.