এভিয়েশন নিউজ: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাংলাদেশী শ্রমিকরা। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশকিছু শ্রমিক দেশে ফিরছেন। অন্যরাও ফিরে আসার উদ্যোগ নিচ্ছেন। এজন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইরাক থেকে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার আবেদন বাড়ছে। দেশে ফিরতে শ্রমিকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছেন, যা দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হচ্ছে। এদের অধিকাংশই নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশে ফিরে আসার জন্য এরই মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক আবেদন করেছেন। তবে আবেদনের সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, যারা স্বেচ্ছায় ফিরে আসতে চাইছে, তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ইরাকে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সহায়তা করছে। ইরাক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশী শ্রমিকদের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ইরাকে বাংলাদেশী শ্রমিকরা নিরাপদে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত বা আহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে এ পরিস্থিতিকে অনুকূল হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে ইরাকে বসবাসরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত না হলেও মানসিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
উল্লেখ্য, সুন্নি বিদ্রোহীদের একের পর এক শহর নিজেদের দখলে নেয়ায় দেশটিতে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ২০১১ সালে মার্কিন বাহিনী ইরাক ছেড়ে যাওয়ার পর বিদ্রোহীদের কাছ থেকে বড় ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে দেশটির সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরাকি সেনাবাহিনীর চেয়েও কিছু ক্ষেত্রে বিদ্রোহীরা পারদর্শী। তারা অনেক বেশি প্রশিক্ষিত এবং অস্ত্রসজ্জিত। প্রতিবেশী সিরিয়াসহ ইরাকের বেশকিছু এলাকা তারা নিজেদের নিরাপদ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
সরকারি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ইরাকে ১৪ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক বসবাস করছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা ২০ হাজারের বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে নিজ উদ্যোগে ইরাক থেকে প্রায় ২৭ জন শ্রমিক ঢাকা পৌঁছেছেন। আর কোরিয়ান একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে বাগদাদের বিসমায়া নিউ সিটি প্রজেক্টে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে ১৫ জুলাই ১৭০ জন এবং ১৬ জুলাই আরো প্রায় ২৫ জন দেশে এসে পৌঁছবেন।
ইরাক থেকে যেসব শ্রমিক স্বেচ্ছায় ফিরে আসতে চান তাদের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়নি। তবে প্রবাসী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। এনিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইরাকে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এখানে সবাই আতঙ্ক ও বিপদের মধ্যে দিয়ে দিন পার করছেন। প্রতিনিয়িত পুলিশি নির্যাতনের মুখে পড়তে হচ্ছে। এক্ষেত্রে চাকরিরত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও কোনো ধরনের সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। অধিকাংশ শ্রমিক দেশে ফিরে আসতে চাইলেও প্রতিষ্ঠানগুলো আসতে দিচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ইরাকে একসময় প্রচুর বাংলাদেশী কাজ করলেও ১৯৯০ সালে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রায় সবাই দেশে ফেরত আসেন। ২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস বন্ধ করা হয়। তবে ২০০৯ সালের অক্টোবরে ইরাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং শ্রম কাউন্সিলর নিয়োগ দেয়া হয় এবং জনশক্তি রফতানি শুরু হয়।