ঢাকা: ‘দেবীর পায়ে মাখা রঙ গায়ে মাখলাম। কিছু রঙ মা-বাবা-বান্ধবীদের জন্য নিলাম। এ রঙ শুধু আনন্দের রঙ নয়, দেবীর আর্শীবাদও’।
কচিকণ্ঠে কথাগুলো বলছিল বুধবার (২৩ মার্চ) আবির উৎসবে পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার শ্রীশ্রী কালীমন্দিরে আসা ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী অঞ্জলি দেবী তৃষ্ণা।
গৃহবধূ মৌটুসি চক্রবর্তী দুই সন্তান নিয়ে ডালা সাজিয়ে দেবীর পায়ে সোর্পদ করে মেতে উঠলেন আবির উৎসেব। দু’সন্তানের পাশাপাশি যাকে পাচ্ছেন তাকে রঙ মাখছেন তিনি।
শুধু রঙ মেখেই ক্ষান্ত হননি সবাই, দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ব্যস্ত সেলফি তোলায়ও। ঠাকুরের পায়ে ডালা সাজিয়ে দেওয়ার পরপরই মেতে উঠছেন আবির উৎসবে।
পুরান ঢাকার শাঁখারিবাজার, তাঁতীবাজারসহ বেশ কিছু এলাকার চিত্র এমনই। মন্দির, মঠ, রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি সবখানেই সবাই মেতেছেন আবির উৎসবে।
আবির খেলাকে কেন্দ্র করে রঙ বিক্রির ধুম পড়েছে পুরান ঢাকায়। এছাড়া পূজার মোমবাতি, আগরবাতি, প্রসাদ, ফুলসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে দেদারসে।
জয়ন্ত সাহা প্রতি বছর স্ত্রী সেবিকা সাহাকে নিয়ে এ উৎসব পালন করলেও এবার যোগ হয়েছে তার নবজাতক শিশু বিপাশা। দেবীর আর্শীবাদ নিতে শিশুকে নিয়ে মন্দিরে।
জয়ন্ত বলেন, ‘আবির শুধু উৎসব নয় সকল অশুভ শক্তিকে নাশ করারও মন্ত্র। বিপাশাকে যাতে কোনো অশুভ শক্তি স্পর্শ করতে না পারে, সেজন্য নিয়ে এলাম’।
দেবীর পা থেকে আবির নিয়ে হন্যে হয়ে বান্ধবীদের খুঁজছেন দিপীকা। রাস্তায় অনেকটা দৌড়ে দুই বান্ধবীকে মাখলেন রঙ। শুধু রঙ মেখে ক্ষান্ত নয়, ব্যস্ত সেলফি তোলায়ও।
দিপীকা বলেন, এ দিনে শুধু বান্ধবী নয়, সবাইকে রঙ মাখা যায়। এ রঙ মাখার মধ্য দিয়ে সম্পর্কের বাঁধন আরো শক্ত হয়। সারাদিন বাঁধনহারা আজ।
শুভ সরকার পল্লব তার বৌদি শ্রেয়াকে নিয়ে কালীমাতা মন্দিরের দেবীর আরাধনায় জ্বালালেন মোমবাতি। দেবীর পায়ে মাখলেন আবির।
শুভ বাংলানিউজকে জানান, সকল অমঙ্গল দূর হোক এ প্রার্থনা করেছি দেবীর কাছে। দেবীর পায়ের রঙ নিলাম, পরিবারের সবাইকে মাখবো।
শুধু বাংলাদেশি নয়, বেশ কয়েকটি দেশ থেকে আসা পর্যটক ও সনাতন ধর্মাবলম্বীরাও মেতেছেন আবির উৎসবে। দিনটিকে ক্যামেরাবন্দি করতেও ভুল হচ্ছে না তাদের।
চেক রিপাবলিকান থেকে আসা স্টেয়ার্ড বলেন, ‘প্রতি বছর এ দিনে আসি। আর আবিরের রঙ মাখার দৃশ্য ধারণ করে নিয়ে যাই’।
‘এবার দশজন এসেছি। খুবই ভালো লাগছে। উৎসবে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ, প্রার্থনা খুবই উপভোগ করি’ বলেও জানান তিনি।
কালীমাতা মন্দিরের পুরোহিত জীবন কৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, রাধাকৃষ্ণের সঙ্গে আবির (রঙ) দিয়ে আনন্দ উপভোগ করছে, যাকে আমরা হলি বা আবির বলি।
তিনি বলেন, দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখা আর দেবীর মঙ্গলের আশায় মানবেও এ খেলায় মেতে ওঠে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই দেবীর পায়ে রঙ মেখে সেই রঙ শরীরে মাখবে, সবার গায়ে মাখবে।
পুরোহিত আরো বলেন, দেবতার চরণে আবির দিয়ে তা নিজে, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশি সবাইকে মেখে আনন্দে মেতে ওঠে।
আবির উৎসবকে কেন্দ্র করে রঙ বিক্রির ধুম পড়েছে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায়। সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে কয়েকশ’ টাকার রঙ নিচ্ছে একেকজন। এভাবে এক দিনেই কয়েক লাখ টাকার রঙ বিক্রি হচ্ছে।
শাঁখারিবাজারের নন্দী ভাণ্ডারের রঙ বিক্রেতা শিবু বলেন, এ দিনে ভোর থেকে বিক্রি শুরু হয়। চলে প্রায় দু’দিন। ৫ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকার রঙ নেন একেকজন।
তিনি জানান, সাত ধরনের এ রঙ বেশি নেন তরুণরা। বিক্রি ভালো, লাভও ভালো হয়। তবে এবার উৎসবে নতুন করে যোগ হয়েছে বিভিন্ন রঙের চুল। বিক্রিও ভালো।
অন্যদিকে রঙ ছিটিয়ে, নিজের এবং বন্ধু-বান্ধবী ও সহপাঠীদের গায়ে-মুখে রঙ মেখে আবির উৎসবে (হোলি) মেতেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
দুপুরে চারুকলার বকুলতলায় রঙ মেখে উৎসবের শুরু হয়। পরে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাক-ঢোলের তালে উৎসবের র্যালি বের করেন। র্যালিটি টিএসসি প্রদক্ষিণ করে।