ত্রুটিপূর্ণ রায়ের অভিযোগ এনে জামায়াতে ইসলামির নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচার মানদণ্ড পূরণ করে এমন বিচারের ব্যবস্থা করারও আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার এইচআরডাব্লিউ এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশ: ত্রুটিপূর্ণ বিচারের ভিত্তিতে যুদ্ধাপরাধের রায়’ শীর্ষক প্রবন্ধে এ আহবান জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, ‘বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড খারিজ করে দেয়া এবং আন্তর্জাতিক ন্যায্য বিচারের মানদণ্ড পূর্ণ করে এমন নতুন বিচারের আয়োজন করা।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যেরও উদ্ধৃতি দিয়ে এইচআরডাব্লিউ বলছে, ‘প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ইতোপূর্বের বক্তব্য সত্ত্বেও সুপ্রিমকোর্ট মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। তিনি আদালতে অপর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন।
সুপ্রিম কোর্টের শুনানির বিশ্বস্ত ও বিস্তারিত নথি থেকে জানা যায়, তিনি প্রসিকিউটরদের বলেন, অভিযোগ প্রমাণে পর্যাপ্ত সাক্ষী তৈরি করতে তদন্তকারী সংস্থাকে কি বিরত রেখেছে? তিনি বলেন, একটি রায়ের সমর্থনে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করা আবশ্যক। প্রসিকিউশনের প্রমাণাদি পড়লে আমরা লজ্জা অনুভব করি। এর উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম বলেন, সুপ্রিম কোর্ট লক্ষ্য করেছে প্রসিকিউটর ও তদন্তকারীদের পেছনে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ তারা মামলা সঠিকভাবে পরিচালনা ও তদন্ত করেনি।’
মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সর্বোচ্চ মান মেনে চলতে হবে মন্তব্য করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার পরিচালক ব্যাড অ্যাডামস। তিনি বলেন, ‘যখন একটি যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের পেছনে প্রমাণ থাকে, কেবলমাত্র তখনই রায় বহাল রাখা যেতে পারে। কিন্তু এ মামলায় আদালত অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রসিকিউশনের সমালোচনা করেছে। এরফলে প্রমাণ সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সন্দেহ রয়েছে।’
অ্যাডামস আরও বলেন, ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় সংঘটিত ঘৃনিত অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতাকে দীর্ঘ সমর্থন করেছে। তবে তা অবশ্যই আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে করতে হবে। বিশেষ করে মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে তা হতে হবে। যেহেতু মৃত্যুদণ্ডে ঝুঁকি রয়েছে।’ বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে একটি সুষ্ঠু ও সঠিক দায়বদ্ধ বিচার প্রক্রিয়ার জন্য বাধ্য রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।