কথায় আছে-সর্ষের ভেতর ভূত! আসলে সর্ষেতেই যদি ভূত থাকে তাহলে তো তা তাড়ানো খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। ঠিক যেন এমনটিই ঘটছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়োজিত বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারাই যাত্রী হয়রানির ঘটনায় জড়িত। এক-দুইজন নয়, বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানির অভিযোগ ওঠছে।
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) দিনগত রাত ১টার পর ফোন আসে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসূফের মোবাইলে।
বিমানবন্দরে দায়িত্বে নিয়োজিত বেবিচকের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এক যাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক যাত্রী।
মোবাইলে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জানান, মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের যাত্রী মো. নজরুলের কাছ থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এক হাজার টাকা নিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।
‘৯ হাজার টাকা নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে আসেন নজরুল। যাতে কুয়ালালামপুরে পৌঁছে টাকাকে স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তরিত করে ট্যাক্সি ভাড়া ও প্রাথমিক আনুষঙ্গিক খরচ করতে পারেন তিনি। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ক্যাশ ৫ হাজার টাকার বেশি নেওয়া না যাবে বলে তার কাছ থেকে এক হাজার টাকা রেখে দেন মো. মোশারফ হোসেন ও আতিক নামের দুই নিরাপত্তা কর্মকর্তা। আর বাকি ৮ হাজার টাকা তাকে দিয়ে প্লেনে ওঠার অনুমতি দেন তারা,’ নজরুলের বরাত দিয়ে ফোনে অভিযোগ করেন পাশে দাঁড়ানো ওই যাত্রী।
সূত্র জানায়, আইন অনুযায়ী নগদ ৫ হাজার টাকার বেশি কোএনা যাত্রীর কাছে থাকতে পারবে না। এমনকি বিমানবন্দরে কোনো কর্মকর্তাও ভ্রমণের সময় এ পরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা সঙ্গে রাখতে যাত্রীকে বহনের অনুমতি দিতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে নজরুলকে ৮ হাজার টাকা বহন করতে দেওয়াও আইন বর্হির্ভুত।
বিষয়টি জানানোর পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসূফ ওই যাত্রীকে নজরুল এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তার ছবি তুলে ফেসবুকে ‘ম্যাজিস্ট্রেট, অল এয়ারপোর্ট’ পেজের ইনবক্সে পাঠানোর অনুরোধ করেন।
সে অনুযায়ী ওই যাত্রী ভুক্তভোগী শ্রমিক নজরুল ও অভিযুক্ত কর্মকর্তার ছবি তুলে ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠিয়ে দেন। পরে বুধবার (৩০ মার্চ) সকালে অফিসে পৌঁছেই সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করেন মোহাম্মদ ইউসূফ।
ফুটেজে যাত্রীর কাছ থেকে বেবিচকের সিকিউরিটি কর্মকর্তা মোশারফের টাকা নেওয়ারও প্রমাণ পাওয়া যায়।
পরে রাত ৮টার দিকে বিমানবন্দরে ভ্রাম্যমাণ আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মোশারফ।
যাত্রী হয়রানির ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা মোশারফকে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনাটি বেবিচক চেয়ারম্যানের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসূফ বাংলানিউজকে বলেন, ফেসবুকে ‘ম্যাজিস্ট্রেট অল এয়ারপোর্ট’ নামে একটি পেজে আমরা যাত্রী হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ পাই। নজরুলের বিষয়টিও আমরা এ পেজের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি।
‘মোশারফ হোসেন বেবিচকের একজন কর্মকর্তা হিসেবেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা রক্ষাকারী একটি দলে নিয়োজিত আছেন। দায়ী অপর কর্মকর্তা আতিক বর্তমানে পলাতক।’
মোশারফকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, যাত্রী হয়রানির বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দিই না। কোনো ধরনের অন্যায়কেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্রঃবাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম