শুধু করোনা আক্রান্তদের জন্য কুর্মিটোলাকে প্রস্তুত করা হচ্ছে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বা কভিড ১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য এবার রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল পুরোটাই ব্যবহার করা হবে। এতোদিন সেখানে সমন্বিত চিকিৎসা কার্যক্রম চললেও আজ সোমবার থেকে সাধারণ রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। এর ফলে বন্ধ হয়ে গেছে গাইনি, ইএনটি, সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের অপারেশন কার্যক্রমসহ জরুরি ও বহিঃবিভাগও। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন কিডনি বিকল হওয়া ৬৬ জন রোগী যারা নিয়মিত হেমোডায়ালাইসিস নিতেন।

জানা গেছে, এতোদিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শুধুমাত্র কভিড ১৯ সন্দেহজনক রোগীদেরকেই ভর্তি করে আইসোলেশনে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। যারা কভিড ১৯ পজেটিভ রোগী বলে সনাক্ত হতো তাদেরকে সরকারি কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হতো। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তে এখন থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালেও কভিড ১৯ পজেটিভ রোগী রাখা হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আজ থেকে সেখানকার সাধারণ চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোটাই বন্ধ করা হয়েছে।

স্ত্রীকে দেড় বছর থেকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে হেমোডায়ালাইসিস করাচ্ছেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহাগ। তিনি জানালেন, অন্যান্য হাসপাতালে ডায়ালাইসিসের খরচ অনেক বেশি এবং শিডিউল পাওয়া কঠিন। এখানে ৬ মাসের জন্য খরচ পড়তো বিশ হাজার টাকা। শুধু ডায়ালাইজার নিজেরা কিনে নিতাম। কিন্তু আজ মৌখিকভাবে এই ইউনিটের চিকিৎসক আমাদের সবাইকে ডেকে বলে দিয়েছেন, ‘আজকের পর পরবর্তীতে এখানে ডায়ালাইসিস হতেও পারে, নাও হতে পারে। তাই আপনারা অন্য কোথাও নিজ দায়িত্বে চেষ্টা করুন।’ এখন অন্য কোথায় যাবো, কীভাবে শিডিউল পাবো, চিকিৎসা ব্যয়ের বিষয়টি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম।

২০১৬ সাল থেকে কুর্মিটোলায় হেমোডায়ালাইসিস করাচ্ছেন কিডনি বিকল রোগী মোক্তার হোসেন। তিনি ভৈরব থেকে আসেন ডায়ালাইসিস নিতে। তিনি বলেন, পরবর্তী শিডিউলে আসতে হবে কি না সেটা তারা ফোনে জানাবেন বলেছেন। কর্তৃপক্ষ যদিও পুরোপুরি বলেন নাই তথাপিও পড়ে গেছি বেশ চিন্তায়। এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের বিষয়টা সরকার যদি মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখে তবে ভালো হয়। প্লিজ, আপনারা আমাদের জন্য কিছু করুন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমরা সুনিদৃষ্টভাবে বলছি না ঠিক অমুক তারিখ থেকে হেমোডায়ালাইসিস বন্ধ হবে। এসব রোগীদের বিষয়টি সবচেয়ে মানবিক বিবেচনার দাবী রাখে। কিডনি বিকল এসব রোগীদের হেমোডায়ালাইসিস দুই/তিন দিনও বন্ধ রাখা যাবে না। তবে করোনার ক্ষেত্রে এসব রোগীরা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বিধায় এখানে কভিড ১৯ পজেটিভ রোগী রাখা হলে হেমোডায়ালাইসিস ইউনিট চালু রাখা ঠিক হবে না। তাই তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা বা সুব্যবস্থা করেই ওই ইউনিটটি বন্ধ করার কথা ভাবা হচ্ছে।’

গত দুই দিনে কোন কভিড ১৯ আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়নি। এখন কুর্মিটোলা হাসপাতালের পুরোটাই খালি করা হচ্ছে কভিড ১৯ রোগীদের জন্য। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কি আরো খারাপ হতে পারে? —এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত নই; তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি দিন দিন পরিবর্তন হচ্ছে। এই বিষয়টির কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্যই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পুরোটাই রেডি করা হচ্ছে কভিড ১৯ রোগীদের জন্য।

তিনি বলেন, ‘হেমোডায়ালাইসিসের রোগীরা ওখানকার ভর্তি রোগী নয়; শিডিউল অনুযায়ী তারা ডায়ালাইসিস নেন। এখন ইচ্ছে করলে তারা নিজেদের পছন্দমতো সরকারী বা বেসরকারী যে কোন হাসপাতালে হেমোডায়ালাইসিস নিতে পারে। তবে তারা আমাদের সহযোগীতা চাইলে নিকডু, ঢাকা মেডিক্যাল, মুগদা, সলিমুল্লাহসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এসব রোগীদের হেমোডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা করা হবে।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.