যদি মনে হয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন

প্রতিদিনই নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। বিশ্বের প্রায় সকল দেশে কোভিড-১৯ রোগী পাওয়া গেছে।

এ মহামারির সময় যেকেউ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হলে সহজে শনাক্তের জন্য সুনির্দিষ্ট উপসর্গ নেই। কোভিড-১৯ এর উপসর্গগুলোর সঙ্গে ঠান্ডা, ফ্লু ও অ্যালার্জি থেকে সৃষ্ট উপসর্গগুলোর মিল রয়েছে। এ কারণে উপসর্গগুলো প্রকাশ পেলে নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু এসময় নিজেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে রেখে উপসর্গকে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ঠান্ডা, ফ্লু অথবা অ্যালার্জির ওষুধ সেবনের পরও উপসর্গ শোচনীয় হতে থাকলে করোনা রোধে চালু করা হটলাইন নম্বরে কল দিতে হবে।

আপনার কোভিড-১৯ হয়েছে সন্দেহ হলে পরিবারের সুরক্ষায় যা করবেন তা এখানে উল্লেখ করা হলো।

‘কোয়ারেন্টাইন জোন’ নির্ধারণ করুন: আদর্শগতভাবে, কোয়ারেন্টিনের জন্য আলাদা রুম হলে সবচেয়ে ভালো হয়। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে ঘরের অন্যান্য সদস্যদের থেকে ন্যূনতম ৬ ফিট দূরত্বে ‘কোয়ারেন্টিন জোন’ নির্ধারণ করুন। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, নতুন করোনাভাইরাস প্রধানত ছড়ায় কোভিড-১৯ রোগীর কাশি-হাঁচির সঙ্গে বের হয়ে তরল কণার মাধ্যমে। ধারণা করা হয়, কাশি-হাঁচির সঙ্গে নির্গত তরল কণাগুলো ৬ ফিটের বেশি দূরত্ব যেতে পারে না।

উচ্চ ঝুঁকির সদস্যকে অন্যত্র রাখুন: কিছু মানুষদের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ জনিত জটিলতার বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে বয়স্ক লোক, ফুসফুসের রোগী, হার্টের রোগী, ডায়াবেটিস রোগী, লিভারের রোগী ও কিডনির রোগীদের কোভিড-১৯ থেকে মারাত্মক পরিণতি বা মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। ঘরে এ ধরনের সদস্য থাকলে সম্ভব হলে তাদেরকে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুর বাসা অথবা অন্য কোথাও রাখুন। ইন্ডিয়ানায় অবস্থিত পুর্ডু ইউনিভার্সিটি স্কুল অব নার্সিংয়ের সহযোগী অধ্যাপক লিবি রিচার্ডস বলেন, ‘অবশ্যই এটি আদর্শ উপায় নয়, কিন্তু পরিবারের কারো মধ্যে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা গেলে কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি এড়াতে উচ্চ ঝুঁকির সদস্যদেরকে যেকোনো উপায়ে দূরে রাখতে হবে। কিন্তু ভিন্ন পরিবেশেও উচ্চ ঝুঁকির মানুষদের অতি সতর্ক থাকতে হবে (কারণ তাদের শরীরেও ভাইরাসটি সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে), যেমন- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া ও থাকার স্থানের জিনিসকে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা।’

পরিবারের সদস্য থেকে সরাসরি খাবার খাবেন না: নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে সন্দেহ হলে পরিবারের সদস্যদেরকে নিরাপদে রাখতে তাদের কাছ থেকে সরাসরি খাবার খাবেন না। পরিবারের সদস্যদেরকে আলাদা রুম বা কোয়ারেন্টিন জোন থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা উচিত। কোভিড-১৯ প্রধানত রোগীর কাশি-হাঁচি থেকে ছড়ায় বলে মনে হলেও বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, ভাইরাসটি বিভিন্ন জিনিসের সারফেসের ওপর কিছু ঘন্টা থেকে কিছুদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তাই খাবারের পাত্র যথাসম্ভব জীবাণুমুক্ত করে স্পর্শ করা উচিত। খাবার খেতে সাহায্যের প্রয়োজন হলে যিনি খাবেন ও যিনি খাওয়াবেন উভয়কে সংক্রমণ প্রতিরোধী মাস্ক পরতে হবে।’

জিনিসপত্র ভাইরাসমুক্ত করুন: নিশ্চিত হোন যে কোয়ারেন্টিন জোনের ভেতর বা বাইরে স্পর্শকৃত সকল জিনিসের সারফেসকে ভাইরাসমুক্ত করা হয়েছে, অন্যথায় পরিবারের সকলের মধ্যে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। কেননা জড় বস্তুর সারফেসের ওপর ভাইরাসটি ন্যূনতম ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত সংক্রামক থাকতে পারে। বাথরুম ও কিচেনকে ঘনঘন জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সন্দেহভাজন সদস্যের পোশাক ও তোয়ালে ধোয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ব্লিচ-পানির মিশ্রণ হচ্ছে, ভালো জীবাণুনাশক তরল।

আলাদা বাথরুম ব্যবহার করুন: যদি মনে হয় যে নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন, তাহলে সম্ভব হলে পৃথক বাথরুম ব্যবহার করুন। এর ফলে পরিবারের অন্য সদস্যরা সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। ঘরে একটিমাত্র বাথরুম থাকলে প্রতিবার ব্যবহারের পর অবশ্যই বাথরুমটিকে ভাইরাসমুক্ত করতে হবে। সন্দেহজনক ব্যক্তির টয়লেট সারতে সহায়তার প্রয়োজন হলে তিনি ও সেবাদানকারী উভয়কে সংক্রমণ প্রতিরোধী মাস্ক পরতে হবে।

আলাদা জিনিস ব্যবহার করুন: যদি ধারণা করেন যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে পরিবারের সকলে ব্যবহার করে এমন জিনিস স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন, যেমন- টিভি রিমোট ও ফোন। এসব জিনিস ব্যবহারের প্রয়োজন পড়লে আলাদাভাবে ব্যবহারের জন্য আরেকটি ব্যবস্থা করতে হবে। থালাবাসন, গ্লাস, কাপ ও অন্যান্য নিত্য ব্যবহার্য জিনিস আলাদা করতে হবে। ব্যবহারের পর এসব জিনিসকে সম্পূর্ণ ভাইরাসমুক্ত করতে হবে। আপনার বালিশ বা বিছানার চাদর অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেবেন না। কারো সঙ্গে গেমস খেলা থেকে বিরত থাকুন। এ সময় স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসের কথা ভুলেও ভাবা যাবে না।

পরিবারের যেকোনো একজন সদস্যকে সেবা দিতে বলুন: কোভিড-১৯ এর মতো সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে রোগীকে ঘরোয়া সেবা একজন দিলে ভালো। একেক সময় একেক জন সেবা দিলে সকলেরই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। যিনি রোগীকে সেবা দেবেন তাকে মাস্ক ও গ্লাভস পরতে হবে এবং সেবা প্রদানের পর অবশ্যই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। নিরাপদ দূরত্বে থেকে পরিবারের সবাইকে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ অথবা প্রতিরোধের কৌশল শেখান এবং তাদেরকে আপনার কাছে না আসার জন্য সতর্ক করুন। তাদেরকে সাবান-পানি দিয়ে বারবার হাত ধুতে বলুন। কলে পানি না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলুন। নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শে নিরুৎসাহিত করুন। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতেও অনুৎসাহিত করুন।

ঘরের বাইরের মানুষদের কথাও ভাবুন: আপনার অসুস্থতায় ঘরের মানুষদের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছেন এটা ভালো কথা। কিন্তু আপনাকে ঘরের বাইরের মানুষদের নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে। নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে বাইরে ডিনার পার্টি বা কার্ড গেমস বা বোর্ড গেমস বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না। এ সময় কোয়ারেন্টিন কক্ষ থেকে বের না হওয়াই ভালো। আপনার উপসর্গকে মনিটর করুন। টেলিমেডিসিনের পরও উপসর্গ আরো খারাপ হতে থাকলে নতুন করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে চালুকৃত হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.