এভিয়েশন নিউজ: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মোহাম্মদ হামিদুর রহমান সিরীয় বাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। সিরিয়ায় আসাদ সমর্থিত বাহিনীর সাথে এ যুদ্ধ হয়। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি যুবক হামিদুর, ২৫, ব্রিটেনের পোর্টসমাউথের বাসিন্দা।
হামিদুরের পিতা আব্দুল হান্নান(৫২)। তিনি সিরিয়ায় তাঁর ছেলের সাথে যুদ্ধরত এক যুবকের পাঠানো টেক্স মেসেজে হামিদুরের এই মৃত্যুর খবর পান। ছেলের শোকে কাতর হান্নান জানান, গত বছরের প্রথম দিকে হামিদুর সিরিয়া সফরে গেলেও তারা এবিষয়ে কিছু জানতেন না।
পরবর্তী সময়ে এক ফোনকলে ছেলে হামিদুর তাদের জানান যে, তিনি সিরিয়া গেছেন এবং তাঁর জন্যে দু:চিন্তার কারণ নেই।
হান্নান বলেন, ‘সে তাঁর জন্যে দোয়া করার অনুরোধ জানিয়ে আল্লাহর পথে নিজের শহীদ হওয়ার বাসনার কথা জানায় আমাদের’।ব্রিটিশ ফরেন অফিসের একজন মুখপাত্র জানান, তাঁরা সিরিয়ায় একজন ব্রিটিশ যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। তবে সেখানে ব্রিটিশ সরকারের কোনো প্রতিনিধি না থাকায় খবরের সত্যতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
সিরিয়া যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিহত হামিদুর প্রাইমার্ক পোশাক প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজারের কাজ করতেন। পোর্টসমাউথ থেকে ১০ যুবকের একটি গ্রুপ মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধরত জেহাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেইট (আইএস)-এ যোগ দিতে সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করলে হামিদুরও ঐ গ্রপের সাথে যোগ দেন।
হামিদুরের গ্রুপটি প্লেনে তুরস্কে পৌছে এবং সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে সিরিয়ার ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। তুরস্ক যাওয়ার সময় হামিদুর চ্যারিটি ওয়ার্কে অংশ নিতে সেখানে যাচ্ছেন বলে মা-বাবাকে জানালেও আসলে তিনি যাচ্ছিলেন জেহাদী গ্রুপ ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্যা লেভান্ট (আইএসআইএস)এর নিয়োগকৃত একজন জিহাদি হিসেবে যুদ্ধ করতে। এই সংগঠনটি ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুদ্ধ করছে এবং এরই মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকের কিছু অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণও প্রতিষ্ঠা করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে নিহত হামিদুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মিরেরচক গ্রামে। তাঁর মা-বাবা দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনের পোর্টসমাউথ শহরে বসবাস করে আসছেন। হামিদুরের জন্মও এই শহরেই, শৈশব থেকে যৌবনের প্রাণবন্ত সব সময়ও কেটেছে এই শহরে। হামিদুর মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে প্রাণহারানো পোর্টসমাউথের বাসিন্দা দ্বিতীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ইফতেখার জামান নামের আরও এক বাংলাদেশি যুবক ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঐ ‘জিহাদে’ নিহত হন। এছাড়াও গত বছরের মে মাসে ৩১ বছর বয়সী মাসুদুর চৌধুরী নামের হামিদুরের আরেক সমমনা যুবক মধ্যপ্রাচ্য থেকে ব্রিটেনে ফিরে আসেন। তিনিই প্রথম ব্রিটিশ জেহাদি, যিনি সিরিয়ায় সন্ত্রাসী কর্মেকান্ডের দায়ে দণ্ডিত। তুরস্ক থেকে ব্রিটেনে ফেরত আসার পর গেটউইক বিমানবন্দরে অ্যান্টি টেরোরিস্ট পুলিশ মাসুদুরকে গ্রেফতার করে।
জানা যায়, সিরিয়ার জিহাদি টেনিং খুবই কষ্টকর দেখে যুদ্ধে যেতে মাসুদুর ভয় পেয়ে ফিরে আসেন। মাসুদুরকে গত সেপ্টেম্বরে ব্রিটেনের কিংস্টোন ক্রাউন কোর্ট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দায়ে দণ্ডিত করে। ব্রিটিশ সরকারের ধারণা, অন্তত ৫শ ব্রিটিশ যুবক মধ্যপ্রাচ্যের জিহাদি গ্রুপে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করছে, যারা মূলত সাউথ এশিয়ান বংশোদ্ভূত। এর মধ্যে ১৯ জনেরও বেশি সিরিয়া ও ইরাকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
এদিকে, হামিদুরের মৃত্যুর খবরে শুধু তাঁর পরিবার নয়, ব্রিটেনের পোর্টসমাউথ শহরের বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই শোকাভিভূত। হামিদুরকে ‘একজন ভদ্র ও চমৎকার যুবক’ বলে মন্তব্য করে পোর্টসমাউথের বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা জনাব আব্দুল মুকিত বাংলানিউজকে বলেন, অত্যন্ত সহজ, সরল হামিদুরের বাবা জনাব হান্নানই শুধু নন, আমরা পুরো কমিউনিটিই এই খবরে মর্মাহত (শকড)। হামিদুরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই পোর্টসমাউথেই– এতথ্য জানিয়ে জনাব আব্দুল মুকিত বলেন, সে কলেজ ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করে সর্বশেষ প্রাইমার্কে কাজ করতো। সে জীবনবিধ্বংসী এমন জিহাদি তৎপরতায় জড়িত হবে এমনটা আমরা ভাবতেই পারিনি।
মুকিত জানান হামিদুরের বাবা আব্দুল হান্নান মূলত একজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী ছিলেন। বেশকিছু দিন হলো ব্যবসা ছেড়ে অবসর জীবন যাপন করছেন তিনি। তাঁর পরিবার বা ছেলেমেয়েদের পোশাকে আশাকে আচরণে কখনও জেহাদী ভাব দেখা যায়নি। এই মতবাদে কখনও তারা বিশ্বাসীও নন। মুকিত জানান, সাম্প্রতিক সময়ে হঠাৎ করে হামিদুর আধুনিক পোশাক ছেড়ে মৌলভীদের মতো জোব্বা যাতীয় পোশাক পরা শুরু করে। এসময় সোমালিয়ান কিছু যুবকের সাথে প্রায়ই তাঁকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেতো। মুকিতের অভিযোগ, ঔ সোমালিয়ান যুবকদের গ্রুপ ও ইন্টারনেটের কারণেই হামিদুরের আজকের এই পরিণতি।