ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের শিক্ষার্থী সুমন চাকমা করোনা সন্দেহে স্থান হয়নি কোনো হাসপাতালে, সোমবার সকালে মারা গেলেন ঢাবির এই শিক্ষার্থী।
সুমন চাকমা আক্ষেপ করে গত ২৬ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘আমার করোনা হয়নি, অথচ পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে করোনার জন্যেই আমার মারা যেতে হবে।’ ফেসবুকে লেখার ঠিক ১০ দিনের মাথায় সেই আক্ষেপ নিয়েই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো তাকে। ক্যান্সারে আক্রান্ত— এই শিক্ষার্থী ফুসফুসজনিত রোগে গত সোমবার সকালে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। মৃত্যুর পূর্বে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে গেলেও করোনাভাইরাসের ভয়ে চিকিৎসা দেয়নি কোনো হাসপাতাল।
সুমনের সহপাঠী ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সুমন। জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। দীর্ঘ তিনবছর যাবৎ ফুসফুসের জটিল রোগে ভুগছিলেন সুমন। দীর্ঘদিন ভারতে চিকিৎসা করানোর পর এক বছর আগে মোটামুটিভাবে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন এবং পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঢাকাতে অবস্থান করেন।
সুমনের সহপাঠীদের অভিযোগ, গত ১১ মার্চ পুনরায় অসুস্থবোধ করলে চিকিৎসার জন্য তাকে তার বন্ধুরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিউট ও হাপাতালে নিয়ে যাওয়া যান। ফুসফুসের রোগী হওয়াতে সামান্য শ্বাসজনিত সমস্যা থাকায় কোন প্রকার চেকআপ ছাড়াই কোভিড-১৯ রোগী সন্দেহ করায় তাকে কোন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন সুমনের সহপাঠীরা। পরবর্তীতে উপায় না দেখে, গত ১৮ মার্চ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্যে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সুমনকে। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে সোমবার সকালে মারা যান তিনি।
সুমন চাকমা খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার দাত কুপ্যা এলাকার আগলাশিং পাড়ার সুপেন চাকমা ছেলে। তিন ভাইবোনের মধ্যে সুমন ছিলেন দ্বিতীয়।
এদিকে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মেধাবী ছাত্র সুমন চাকমার অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক সুনয়ন চাকমা। এক বিজ্ঞপ্তিতে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত— নাজুক উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘চিকিৎসার অভাবে একজন জলজ্যান্ত— মানুষকে হারানো কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। চিকিৎসার অভাবে সুমন চাকমার মৃত্যু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়- দেশের মানুষ বর্তমানে কী ভয়ানক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
সুমনের পিতা সুপেন চাকমা বলেন, ‘আমার ছেলেটা চিকিৎসার অভাবে মারা গেল।ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে তাকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেছি। করোনার ভয়ে আমার ছেলেকে কোথাও চিকিৎসা দিতে চায়নি, ভর্তি নেয়নি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সৈয়দা তাহমিনা আখতার বলেন, ‘সুমনের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর আমরা তার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেছি।ভারত থেকে চিকিৎসার পর অনেকদিন কাসও করেছে। সর্বশেষ কেন মারা গেল, সেটা জানিনা। আমরা তার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত।’
চিকিৎসার ঘাটতি ছিল কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প থেকে সুমনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা তার আত্মার মুক্তি কামনা করি। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসা অবহেলার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয় নি। যদি এরকম কিছু হয় তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।’