এভিয়েশন নিউজ: সরকারের উদ্যোগে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্তে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আমলান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। সরকারী পর্যায়ে কর্মী পাঠাতে দীর্ঘ সময় পার হয়ে যাচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় বিদেশে কর্মী পাঠানোর হার অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। দুই বছর ধরে মালয়েশিয়ায় বোয়েসেলের মাধ্যমে ১০ হাজার কর্মী পাঠানোর কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি।
মালয়েশিয়ায় মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কর্মী চাকরি নিয়ে যেতে পেরেছেন। বাকিরা অপেক্ষায় রয়েছেন। তাঁরা কবে নাগাদ মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন তার কোন সময়সীমা বলা হয়নি। এরপরও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত থেকে সরবে না। কারণ মাত্র কয়েকটি দেশে সরকারী খরচে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। বাকি দেশগুলোতে যে কোন জনশক্তি রফতানিকারকরা কর্মী পাঠাতে পারে। তবে সরকারের বেঁধে দেয়া খরচের মধ্যে কর্মী পাঠাতে হবে। সৌদি আরব, হংকং, থাইল্যান্ডেও সরকারের উদ্যোগে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া অচিরেই শুরু করা হচ্ছে।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদি সরকার কখনই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয়নি। তবে সংখ্যায় আগের চেয়ে কম কর্মী নিচ্ছে। বোয়েসেলের মাধ্যমে কিভাবে বিদেশে কর্মী পাঠানো হয় তা জানতে চায় প্রতিনিধিদল। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বোয়েসেল বিদেশে কর্মী পাঠাতে পারে। বিষয়টি প্রতিনিধিদল শুনে এই পদ্ধতিতে লোক নিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা দালাল ফড়িয়া বা জনশক্তি রফতানিকারকদের প্রতি বিশ্বাস রাখতে পারছে না।
জনশক্তি রফতানিকারকদের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে গিয়ে কর্মীদের কয়েক গুণ টাকা বেশি দিতে হয়। এতে কর্মীরা তিন বছর বিদেশে চাকরি করে খরচের টাকাই তুলে আনতে পারে না। সরকারী খরচে বিদেশ গেলে কর্মীরা লাভবান হবে। সম্প্রতি প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে দেয়া হবে না। কর্মী পাঠাতে হলে কম খরচেই পাঠাতে হবে। জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে এক ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে দালাল-উপদালালের মাধ্যমে টাকা নিয়ে একশ্রেণীর জনশক্তি রফতানিকারক রাতারাতি ‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’ হচ্ছে। দেশের দরিদ্র নিরীহ মানুষকে এভাবে আর প্রতারিত হতে দেয়া যায় না। এতে একজন কর্মী যদি মালয়েশিয়া যেতে চান তবে তাঁকে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে অথচ সরকারী খরচে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়ই তিনি মালয়েশিয়া যেতে পারবেন।
মন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন সৌদি বাজার এক ধরনের বন্ধ ছিল। আমাদের মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফর করেছে। সৌদি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক আলোচনা হযেছে। আশা করছি সৌদি আরব অচিরেই লোক নিয়োগ শুরু করবে। মালয়েশিয়া, হংকং ও থাইল্যান্ডে যে প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ করছি সেই প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগ দেয়া হবে।
এখানে কোন মধ্যস্বত্বভোগীকে আশ্রয় দেয়া হবে না। সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের লোক পাঠানোর ধরন পাল্টানোর বিষয়টি ভাল করে বোঝানো হয়েছে। বাংলাদেশের কর্মী পাঠানোর নিয়মে তারা খুশি। কারণ জনশক্তি রফতানিকারকদের মাধ্যমে একজন কর্মীকে সৌদি আরব যেতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু সরকারের নতুন নিয়মে এই খরচ কমে অর্ধেকের কমে নিয়ে আসা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ’৮০ দশক থেকে জনশক্তি রফতানিকারকরা উচ্চমূল্যে বিদেশে লোক পাঠিয়ে নিজেরা এক একজনের নামের আগে নানা টাইটেল যোগ করেছেন। রাতারাতি টাকার মালিক হয়ে তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা জনশক্তি পাঠানোর সমস্ত সেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিদেশে এক কর্মী বিপদে পড়লে যে এজেন্সির মাধ্যমে ওই কর্মী বিদেশ গেছে তার দায়িত্ব তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করা। এমন শর্ত মেনেই সরকারের কাছ থেকে তারা জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স নিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে দেশে অনেকে ভিসা লাগিয়ে বসে আছে-তাদের ফ্লাইট করে দিচ্ছে না।
আবার বিদেশে অনেক কর্মী নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন- তাদের বিষয়েও কোন খোঁজখবর নিচ্ছে বায়রার কোন সদস্য। তারা সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী এমন একটি অবস্থান নিয়ে রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছে। বায়রা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। বায়রা সদস্যদের সময় দেয়া হয়েছে প্রবাসে চাকরি নিয়ে যাওয়া কর্মীদের প্রাপ্য সেবা ও বিদেশে কর্মরতদের বেলায় লাইসেন্সের শর্ত মেনে নিতে। এর বাইরে কোন কাজ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, হংকংয়ে গৃহকর্মী হিসেবে এ পর্যন্ত কয়েক শ’ মহিলা পাঠানো হয়েছে। গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে গিয়েই মাসে ৫০৫ মার্কিন ডলার বেতন পাচ্ছেন। এই কর্মীদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের খরচে নিয়েছে। যদি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের খরচে নাও নেয়, তাহলেও খুব কম টাকায় তাঁরা হংকং যাবেন।
আরও কর্মী নিয়োগের জন্য নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রশিক্ষণ দেবে। এরপর তাঁদের ভিসার প্রক্রিয়া শুরু হবে। হংকং যেতে এই নারীদের মাথাপিছু এক হাজার ৪শ’ মার্কিন ডলার খরচ হবে। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে তাঁরা এই টাকা ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন অথবা তাঁদের বেতন থেকে পরে এই টাকা সমন্বয় করে নেয়া হবে। বেসরকারী পর্যায়ে হংকংয়ে কর্মী পাঠাতে তিন গুণের বেশি টাকা খরচ হতো। তবে কর্মী বাছাই করতে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
বাছাইকৃত কর্মীরা সরকারী পর্যায়ে তাদের নিয়োগ হবে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে হংকংয়ের টেকনিক এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস সেন্টারের চুক্তির আওতায় সে দেশে এই নারী শ্রমিকদের পাঠানো হবে। বেসরকারী জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এসএ ট্রেডিং এই কর্মীদের বাছাই করেছে। টেকনিক এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস সেন্টারের পরিচালক কেভিং অং সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিক নেয়ার জন্য তাঁরা সরকারের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তি করেছেন। এর আওতায় প্রতি মাসে ২শ’ নারী কর্মী হংকং নেয়া হবে। তবে এর আগে তাঁদের ক্যান্টরিন ভাষা ও রান্নাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হবে।