চাটুকারদের কিকআউট করুন মহামান্য রাষ্ট্রপতি!

advocate-abdul-hamidমাঈনুল ইসলাম নাসিম: ‘‘বিমানযাত্রীদের চমকে দিলেন রাষ্ট্রপতি’’ শিরোনামে সংবাদটি দেখে বিলেতগামী যাত্রীদের চাইতেও বেশি চমকে গিয়েছেন অনেকে। স্যোশাল মিডিয়াতে অনেকের একই প্রশ্ন, বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে আইটেমের বুঝি আজ এতোই আকাল ? নইলে এই ধরণের বিষয়কে সংবাদে রূপ দিয়ে কৃত্তিম বিদ্যুৎ চমকানোর মানেটা কি? শুধুই কি চাটুকারিতা?

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আপনার-আমার মতোই রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। অসুস্থ তিনি হতেই পারেন। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার চরম অপ্রতুলতা হেতু বিদেশেও যেতে পারেন। উড়োজাহাজের এই যুগে যাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করা তাঁর উদারতারই বহিঃপ্রকাশ বৈ অন্য কিছু নয়। তাছাড়া দীর্ঘ ভ্রমণে কেবিনের ভেতর বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটাচলা করতে কার না মন চায় ?

তাই বলে এটাকেই শিরোনাম বানিয়ে সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা এ কিসের আলামত ? আলামত বলাটাও এক্ষেত্রে যারপরনাই ভুল, কারণ এর আগেও আমরা দেখেছি অন্ততঃ দুই-দুইবার চাটুকারদের দ্বারা রাষ্ট্রপতির বিদেশ সফরকে বিতর্কিত করতে। সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাভোগীরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই ভালো মানুষটির ওপর বিগত সময়ে চাপিয়ে দিয়েছে কিছু কলংকের বোঝা।

প্রশ্ন হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি কী জানেন এরা কারা ? কতটা কাছের কতটা দূরের তারা ? দূরের হবে কেন, কারণ কাছের বলেইতো তারা যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রথম অঘটনটি ঘটানো হয় গত ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতির দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময়। বিশ্ব মানবতার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যে বাংলাদেশের শুধু রাষ্ট্রপতি কেন, প্রধানমন্ত্রীও যেতেই পারেন।

প্রধানমন্ত্রীর তখন অবশ্য যাওয়া হয়ে না উঠলেও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের হাত দিয়েই লাল-সবুজের ভালোবাসায় ম্যান্ডেলাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয় জোহেনেসবার্গে। সবই ঠিক ছিল কিন্ত রাষ্ট্রের তখন যে সাড়ে ৮ কোটি টাকা জলে যায়, তার দায়ভার কেউ কি নিয়েছিলো ? ঘটনার বিবরণে জানা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকায় রাষ্ট্রপতির সফরের সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং-৭৭৭ চার্টার্ড করে দেন ‘জাতীয় লুটপাট সংস্থা’ হিসেবে খ্যাত বিমানেরই কিছু উচ্চপদস্থ চাটুকার কর্মকর্তা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও তাঁর ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলকে নিয়ে বিমানের ৪১৯ আসন বিশিষ্ট বিশাল উড়োজাহাজটি জোহোনেসবার্গের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যায় তখন।

বিমানের বোয়িং-৭৭৭-কে টানা ৪ দিন দক্ষিণ আফ্রিকায় বসিয়ে রেখে রাষ্ট্রের খরচা হয় ১০ লাখ ৯২ হাজার ডলার তথা ৮ কোটি ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এর বাইরে ছিলো ক্রুদের খরচ, জ্বালানি খরচ ও পরিচালনা খরচ। জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের তৎকালীণ এমডি কেভিন স্টিল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাষ্ট্রপতির দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের কারণে বিমানের হাজার হাজার যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়, লন্ডন সহ একাধিক রুটে ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় ঘটে তখন।

২০ সদস্যের টিমের জন্য ৪১৯ আসনের বোয়িং কেন চার্টার্ড করা হয়েছিল গত ডিসেম্বরে, কঠিন সত্য হলেও এই প্রশ্নের উত্তর আর কেউ না দিক, সহজ সরল মনে জবাবটি কিন্তু দিতে হবে আমাদের প্রিয় রাষ্ট্রপতিকেই। রাষ্ট্রের ১ নম্বর নাগরিক তিনি। অথচ চারপাশের চাটুকাররা যখন তাঁর ইমেজ নষ্টের খেলায় মেতে উঠেছে, তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও রেকর্ডবুকে বারবার হাত দিতে হয় আমাদের।

চলতি বছর জুনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের নিউইয়র্ক সফরের সময় যে তুলকালাম হয়ে গেলো, তা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিকট লজ্জ্বার বিষয় হয়ে থাকবে বহুদিন। একই সংগঠনের দুই গ্রুপের কামড়াকামড়িতে যখন ভেস্তে যায় রাষ্ট্রপতির পূর্বনির্ধারিত গনসংবর্ধনা, তখন ঐ চাটুকাররাই তাঁকে নিয়ে বসিয়ে দেয় কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট এসেসিয়েশনের একটি আঞ্চলিক প্রোগ্রামে।

প্রবাসে বাংলাদেশ ভিত্তিক রাজনীতি চর্চার বলি হন যখন স্বয়ং রাষ্ট্রপতি, লাল-সবুজের পতাকা যখন হয় পরাজিত, তখন বিদেশ বিভুঁইয়ে নোংরা আঞ্চলিকতার জয়গান বঙ্গভবনের জন্য কতটা বেমানান, তা কি রাষ্ট্রপতি একটিবারও ভেবে দেখেছেন ? লজ্জায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তখন অনেকে এমনও প্রশ্ন রেখেছিলেন, রাষ্ট্রপতি কি কিশোরগঞ্জের না বাংলাদেশের ? ইজম পূজারীরা দেশের চাইতে জেলাকে যেমন বড় ভাবে, তেমনি দলকানারাও প্রবীন এই রাজনীতিবিদকে তাদের দলের রাষ্ট্রপতি ভাবতেই পারেন।

কিন্তু সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই মানুষটি যে আজ দলের উর্ধ্বে, তা কে বোঝাবে আজ ঐ ইজম পূজারী আর দলকানাদের, যাদের ভিড়ে লুটেপুটে খাচ্ছে আজ সুযোগসন্ধানী চাটুকাররা। রাষ্ট্রপতিকে রীতিমতো ‘মাইনকার চিপায়’ ফাঁসিয়ে দেশের ভাবমূর্তির বারোটা বাজাচ্ছে চাটুকার মহল। এতো ক্ষোভ-অভিমানের মাঝে আমরা কিন্তু তারপরও আশাবাদী, ‘মহামান্য’ হয়তো ঠিকই চাটুকারদের কিকআউট করবেন। কারণ তিনিতো আজীবন দিয়েই গেলেন দেশকে, চাওয়া-পাওয়ার পাশাপাশি কিছু যে নেই তাঁর হারাবার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.