এভিয়েশন নিউজ: ভারতের জেট এয়ারওয়েজের ইউরোপগামী একটি বিমানে পাইলট ঘুমিয়ে পড়ার পর বিমানটি মাঝ-আকাশে পাঁচ হাজার ফিট নিচে নেমে এসেছিল – এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর বিমানের দু’জন পাইলটকেই আজ সাসপেন্ড করা হয়েছে। দেশের বিমান চলাচলে তদারকি করে যে সংস্থা, সেই ডিজিসিএ গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে – পাশাপাশি আজই আবার দিল্লিতে জেটের আর একটি বিমানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। শিউড়ে দেওয়ার মতো এই ঘটনাটি গত শুক্রবার, ৮ আগস্টের।
মুম্বই থেকে রওনা হয়ে জেট এয়ারওয়েজের একটি বিমান ২৮০জন যাত্রীকে নিয়ে নেওয়ার্কের পথে ব্রাসেলস অভিমুখে রওনা দিয়েছিল। বিমানটি যখন তুরস্কের আকাশসীমায়, তখনই আচমকা আঙ্কারার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল খেয়াল করে যে নির্ধারিত ৩৪০০০ ফিটের চেয়ে সেটি প্রায় পাঁচ হাজার ফিট নিচে নেমে এসেছে।
তড়িঘড়ি বিমানটিকে সতর্ক করতেই ধড়ফড় করে উঠে পরিস্থিতি সামাল দেন পাইলট, যিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ককপিটে বসা কো-পাইলট না কি ব্যস্ত ছিলেন নিজের আইপ্যাড নিয়ে।
বিরাট বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে কোনক্রমে রেহাই পান বিমানের আরোহীরা, আর গতকাল জেট এয়ারওয়েজের ওই দুজন পাইলটকে তলব করে তাদের ব্যাখ্যা শোনার পর তাদের দুজনকেই আজ সাসপেন্ড করে ভারতের ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব সিভিলঅ্যাভিয়েশন।
বিমান পরিবহন মন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু জানান, “ডিজিসিএ গোটা ঘটনার তদন্ত করছে, সরকার সেই তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষা করবে। তবে এই ধরনের ঘটনা কোনও মতেই ঘটা উচিত নয়।” জেট এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, তারা নিজেরাও ওই ঘটনার আলাদা তদন্ত করছে।
তবে এরই মধ্যে তাদের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে আজ সকালে দিল্লি থেকে তাদের একটি বিমানের ভোপাল রওনা হওয়ার ঠিক আগে ইঞ্জিনে আগুন লেগে যায়। যাত্রীদের সবাইকে তাড়াতাড়ি নামিয়ে আনতে হয়, বিমানবন্দরের ফায়ার ব্রিগেড এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ডিজিসিএ-র সাবেক প্রধান কানু গোহাইন যেমন মনে করছেন, যে উচ্চতায় বিমানের ওড়ার কথা সেখান থেকে পাঁচ হাজার ফিট নিচে নেমে আসাটা অত্যন্ত গুরুতর একটা ঘটনা। এয়ার ইন্ডিয়ার প্রাক্তন পাইলট ক্যাপ্টেন এম আর ওয়াদিয়া আবার এটাকে ঘটনা বা ইনসিডেন্ট বলতেই রাজি নন – তার মতে এটা একটা সাঙ্ঘাতিক দুর্ঘটনা বা অ্যাক্সিডেন্ট।
তাঁর যুক্তি হল, “এতে শুধু একটি বিমান ও তার যাত্রীদেরই বিপদে ফেলা হয়নি – কাছাকাছি আরও অনেক বিমানকেও বিপদে ফেলা হয়েছে। ওই বিমানটি যখন হু হু করে নিচে নেমে এসেছে – তখন বত্রিশ বা তেত্রিশ হাজার ফিট উচ্চতায় অন্য কোনও বিমান থাকলে মাঝ-আকাশেই কলিশন হতে পারতো।”
মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মাসকয়েক আগেই ভারতের বিমান সুরক্ষার মানকে ক্যাটেগরি-টুতে অবনমন করেছে, যেটা বাংলাদেশ, নিকারাগুয়া বা গানা-র মানের সমতুল্য। এর পরেও ভারতের আকাশ বা ভারতীয় বিমান অনেকগুলো দুর্ঘটনা থেকে খুব অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে।
সোমবারেই কলকাতা এয়ার ট্রাফিকের সঙ্গে বোঝাবুঝির ভুলে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের দুটি বিমান মাঝ-আকাশে খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল, সেখানেও পাইলটরা শেষ মুহূর্তে কলিশন এড়াতে সক্ষম হন।
– শুভজ্যোতি ঘোষ, বিবিসি বাংলা, দিল্লি।