সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে উত্তাল সচিবালয়

সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবি সচিবালয়ে আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

আজ সোমবার (২৬ মে) তারা দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ের চার নম্বর ভবনের সামনে জড়ো হোন। এরপর মিছিল করেন। এ সময় তারা সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ কালো আইন উল্লেখ করে এটি বাতিলের পাশাপাশি জনপ্রশাসন সচিবকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি জানান। এদিকে সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে সকল প্রবেশ দ্বার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২২ মে) অধ্যাদেশটির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। এরপর থেকেই সচিবালয়ে শুরু হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি। এরপর রোববার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যাদেশটি জারি করা হলে সোমবার (২৬ মে) সকাল থেকেই উত্তপ্ত প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়।

সকাল ১১টা থেকেই সরকারি কর্মজীবীরা জড়ো হতে থাকেন। এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এরপর ১২টার দিকে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো.নুরুল ইসলাম ও মহাসচিব মো. মুজাহিদুলের নেতৃত্বে কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিছিল শুরু করেন। ৪ নম্বর ভবনের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি ২ নম্বর ভবনের সামনে দিয়ে ৫ ও ৬ নম্বর ভবন হয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অর্থাৎ ১ নম্বর ভবনের সামনে দিয়ে নতুন ভবন ক্লিনিক ভবন হয়ে ১১ নম্বর ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় তারা এক হও লড়াই কর, অবৈধ কালো আইন মানি না মানব না বলে শ্লোগান দিতে থাকেন।

আন্দোলন প্রসঙ্গে সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা এই অধ্যাদেশ মানি না। আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) ৪টা পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছি দাবি মেনে নেওয়ার। যদি না মেনে নেয় তাহলে কাল বিকেল থেকেই আমরা সচিবালয়ের গেটে অবস্থান করব। এই কালো আইন যারা তৈরি করেছে তাদেরকে আমরা সচিবালয়ে ঢুকতে দেব না।

তিনি বলেন, আমরা জানি কিছু সচিব সৈরাচারি দোসরের হয়ে কাজ করছেন। এমন কতজন জড়িত তাদেরকে আমরা চিনি। আমাদের কাছে তাদের তালিকা আছে। তারা আমাদের কর্মচা&রীদের ডেকে নিয়ে থ্রেড করছেন।

মো. নুরুল ইসলাম আরও বলেন, অনেকেই জনপ্রশাসন সচিবের অপসারন চান। আমরা মনে করি উনি সরে গেলেই এসব ঝামেলা কমে যাবে।

এদিকে আন্দোলনের মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেটের বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার। এতে বলা হয়েছে, ‘ইহা অবিলম্বে কার্যকর হবে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৭ এরপর নিম্নরূপ নূতন ধারা ৩৭ক সন্নিবেশিত হবে।’ এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
এই বিশেষ বিধানে চার ধরনের অপরাধ ও তিন ধরনের শাস্তির কথা বলা আছে। অপরাধগুলো হলো– সরকারি কর্মচারী এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যাতে অন্য কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য তৈরি হয় বা শৃঙ্খলা ব্যাহত হয় বা কাজে বাধার সৃষ্টি হয়; অন্যদের সঙ্গে সংঘবদ্ধভাবে বা আলাদাভাবে ছুটি ব্যতীত বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকেন বা কর্তব্য কাজে ব্যর্থ হন; অন্য কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে, বিরত থাকতে বা কর্তব্য পালন না করতে উসকানি দেওয়া এবং  যে কোনো কর্মচারীকে কাজে অনুপস্থিত থাকতে বা কাজ না করতে প্ররোচিত করা।

বিশেষ এই বিধানে এসব অপরাধের তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া যাবে– বরখাস্ত, অব্যাহতি এবং পদাবনতি বা বেতন কমানো।
এদিকে আন্দোলনের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য এ-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই কমিটি পুনর্গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

Comments (0)
Add Comment