হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুই চীনা নাগরিকসহ মানবপাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন- চীনা নাগরিক হু জুনজুন (৩০), ঝাং লেইজি (৫৪) ও বাংলাদেশি নয়ন আলী (৩০)। গাইবান্ধার ১৯ বছর বয়সী এক তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (২৮ মে) এপিবিএন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা যায়, সোমবার রাতে গাইবান্ধার শ্রাবন্তি আক্তার (১৯) নামের এক তরুণী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাচারের শিকার হওয়ার সময় এপিবিএনের কাছে দুই চীনা নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরে হু জুনজুন ও ঝাং লেইজিকে এপিবিএন অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাড়িতে আরও দেশি-বিদেশি পাচারকারী ও নারী ভুক্তভোগী আছেন বলে জানা গেছে।
পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে নয়ন আলীকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অন্যরা পালিয়ে যান। এ সময় পুলিশ পাচারকারী চক্রের গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধার করেছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে এপিবিএনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মানব পাচারে যুক্ত চীনা নাগরিকেরা এক বছর আগে বাংলাদেশে আসেন। তারা উভয়ই বসুন্ধরা এলাকায় থাকতেন। আর দেশের বিভিন্ন দালালের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে নয়ন আলীর সহযোগিতায় ভুক্তভোগী তরুণীকে বিয়ে করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীকে বিয়ে করার জন্য রাজি করান।
তারা ওই তরুণীর নামে ভুয়া ঠিকানায় পাসপোর্টসহ অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করেন। গত মার্চে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে চীনা নাগরিক হু জুন জুনের সঙ্গে তরুণীর বিয়ে হয়। এতে ঝাং লেইজি ও নয়ন আলী সহযোগিতা করেন। তরুণীকে না জানিয়ে তাকে চীনে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঝাং লেইজি তরুণীর নামে বিমান টিকিট কেনেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা তরুণীকে বাসা থেকে জোর করে চীনে পাচারের জন্য হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যান। এ সময় তরুণী ঘটনাটি বিমানবন্দর এপিবিএনকে জানান।
ভুক্তভোগীর মা রাশিদা (৪৩) বিমানবন্দর থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিমানবন্দর এবিপিএনের পুলিশ সুপার (অপারেশন্স) মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মানব পাচারের অপরাধে চীনা নাগরিক আটকের এটি দ্বিতীয় ঘটনা। কিছু মানব পাচারকারী চক্র স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় নারী পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা মূলত গ্রামের সহজ-সরল ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের নিশানা করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করার চেষ্টা করছে।’’