এভিয়েশন নিউজ: বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অনুমোদনের জন্য আড়াই বছর আগে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।
তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আজো তার অনুমোদন মেলেনি। আর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অথরিটির (এফএএ) মানদণ্ডে বেবিচকের ডাউনগ্রেডেড ক্যাটাগরি-২ থেকে ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হওয়ার অন্যতম শর্তই হচ্ছে সংস্থার এ নিজস্ব জনবল কাঠামো। ফলে কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য দীর্ঘ দিনেও এফএএর অডিট দলকে আমন্ত্রণ জানাতে পারছে না বেবিচক।
এ প্রসঙ্গে বেবিচকের পরিচালক (ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন) উইং কমান্ডার এসএম নাজমুল আনাম জানান, বেবিচকের ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়াটিই আটকে আছে অর্গানোগ্রাম জটিলতায়। কারণ অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী জনবল নিয়োগ না দিয়ে এফএএর প্রতিনিধি দলকে অডিটের আমন্ত্রণ জানালে পুনরায় ক্যাটাগরি-২-এ থেকে যাবে বেবিচক। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বেবিচকের অর্গানোগ্রামটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে দীর্ঘদিন।
শোনা যাচ্ছে, বর্তমানে এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। শিগগিরই যদি এটি অনুমোদন হয়, তবে আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলের দিকে এফএএ প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইট নিরাপত্তায় দুর্বলতার কারণে ২০০৯ সালে বেবিচককে দ্বিতীয় ক্যাটাগরির নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করে এফএএ। সে সময় ক্যাটাগরি-১-এ উন্নীত হতে কিছু শর্ত দেয়া হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শর্ত হচ্ছে— বেবিচকের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও নিজস্ব অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী জনবল নিয়োগ করতে হবে। আর নিজস্ব অর্গানোগ্রামের বিষয়টি ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন।
এর আগে আগামী ২০ বছরের চাহিদা বিবেচনা করে নিজস্ব অর্গানোগ্রামের একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছিল। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। অর্গানোগ্রামের এ খসড়ায় ১৩ হাজার ৭৭৬ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাহিদার কথা উল্লেখ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এটি কাটছাঁট করে ২০১২ সালের জুনে ১০ হাজার ৬৯৮ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অর্গানোগ্রামের তালিকা পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এখন এটি অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে বেবিচকের যে অর্গানোগ্রাম রয়েছে তা ১৯৮৪ সালে তৈরি। এতে চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৭১৬টি।
নতুন অর্গানোগ্রামের গুরুত্বের বিষয়টি উল্লেখ করে এসএম নাজমুল আনাম জানান, ১৯৮৪ সালে যখন বেবিচকের অর্গানোগ্রামটি করা হয়েছিল, সে তুলনায় বর্তমানে কাজের পরিধি বেড়েছে প্রায় হাজার গুণ। একই সঙ্গে আদালতে চলা একটি মামলার কারণে গত ১২ বছর কোনো জনবল নিয়োগ দেয়াও সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (আইকাও) ও এফএএর নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে ক্যাটাগরি-২-এ থাকায় বেবিচক থেকে অনুমোদন নেয়া সংস্থার উড়োজাহাজ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বেশকিছু দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাচ্ছে না। একই কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া কোনো উড়োজাহাজেরও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি নেই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বহুল প্রতীক্ষিত বিমানের নিউইয়র্ক রুটটিতে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১০ ডিসেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় অনুষ্ঠিত আইকাওয়ের এয়ার সার্ভিসেস নেগোসিয়েশন কনফারেন্স (আইসিএএএন) চলাকালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশনের একটি খসড়া এয়ার সার্ভিস চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি হলে বিমান ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালুর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। ওই পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ আগাস্ট ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত আকাশ বিমান চলাচল বিষয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) করে বাংলাদেশ। এমওইউতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ফ্লাইট চলাচলে ফিফথ ফ্রিডমের উল্লেখ রয়েছে।