এজেন্সির হিসাবেই জমা হবে হজের টাকা

imagesবেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের মুয়াল্লিম ফি ছাড়া পুরো প্যাকেজের টাকা সংশ্লিষ্ট এজেন্সির হিসাব নম্বরে জমা দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছে হাব। বেশিরভাগ এজেন্সির বিরোধিতার মুখে সংগঠনের নিজস্ব হিসাবে জমার পরিকল্পনা থেকে পিছু হটেছে সংগঠনটি। তবে টাকা জমার বিষয়টি কোন প্রক্রিয়ায় নিশ্চিত করা হবে, সে বিষয়ে এখনও অন্ধকারে হাব। এজেন্সি মালিকরাও পাননি কোনো গাইডলাইন। এ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে শিগগির ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে হাবের সহ-সভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার জানিয়েছেন।

এদিকে চলতি বছরের প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের পুলিশি তদন্ত (ভেরিফিকেশন) শুরু হয়েছে। এর জন্য কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না বলে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, মুয়াল্লিম ফি জমা দিয়ে নির্ধারিত কোটার মধ্যে যেসব হজযাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন শেষ হয়েছে, তাদের ৩০ মের মধ্যে সর্বনিম্ন প্যাকেজের বাকি টাকা জমা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেয়ার সুবিধার্থে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) নিজস্ব হিসাব নম্বরে জমা দেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ১৯ এপ্রিল হাবের জরুরি সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু এর আগে বেশিরভাগ এজেন্সি মালিক মতবিনিময় সভা করে হাবের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাব তাদের আগের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে এবং জরুরি সাধারণ সভাও বাতিল করে।

জাতীয় হজনীতি অনুসারে এজেন্সিগুলোর নিজস্ব হিসাব নম্বরেই সর্বনিম্ন প্যাকেজের বাকি টাকা জমা দেয়ার সিদ্ধান্তই বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নেয় হাব।
এ বিষয়ে হাবের সহ-সভাপতি ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, কিছু এজেন্সির বিরোধিতায় আমরা হাবের অ্যাকাউন্টে টাকা জমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। এখন এজেন্সিগুলোর নিজস্ব অ্যাকাউন্টেই বাকি টাকা (সর্বনিম্ন প্যাকেজের ২ লাখ ৭৪ হাজার ১৫১ টাকা) জমা হবে। তবে টাকা জমার বিষয়টি সরকার কীভাবে নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিত করবে, সে বিষয়ে এখনও আমরা পরিষ্কার নই। বিষয়টি স্পষ্ট করতে আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের উদ্যোগ নিচ্ছি।

কয়েকজন এজেন্সি মালিক জানান, হজযাত্রীদের প্যাকেজ মূল্য এজেন্সির হিসাব নম্বরে জমার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এ বিষয়ে এখনও গাইডলাইন দেয়া হয়নি। এমনকি কোন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে, সে বিষয়ে হাবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি।
এদিকে নির্ধারিত কোটায় প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে যাদের ‘মাহরাম’ বা স্বজন বাদ পড়েছেন, তাদের নিয়ে চরম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বাদ পড়া মাহরাম বা স্বজনদের নিবন্ধনের সুযোগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

একটি হজ এজেন্সির মালিক বলেন, কোটায় প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী আমরা সৌদি আরবে বাড়িভাড়াসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছি। পরে মাহরাম সমস্যায় প্রাক-নিবন্ধিতদের কেউ হজে না যেতে চাইলে সেক্ষেত্রে এজেন্সি মালিকরা বেকায়দায় পড়বেন। এছাড়া হজ গাইডদের টাকা জমা ভিসা প্রক্রিয়া কীভাবে করা হবে, তা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করেছেন।
এ বিষয়ে হাব নেতা ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, মাহরাম সমস্যা সব এজেন্সির কমন সমস্যা। বিশেষ বিবেচনায় এ সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বলেছি। এছাড়া সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে হজযাত্রীর কোটা বাড়ানোর ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন হজের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার কোটা ১০ হাজার। বাকি ৯১ হাজার ৭৫৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন। এর মধ্যে গাইড বাদ দিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য ৮৮ হাজার ২০০ জনের কোটার নির্ধারণ করা হয়। ২৩ মার্চ থেকে প্রাক-নিবন্ধন শুরু হলে ২৮ মার্চের মধ্যেই বেসরকারি ব্যবস্থাপনার নির্ধারিত কোটা পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর নিবন্ধন বন্ধ রাখা হলেও পরে হাবের অনুরোধে পরবর্তী বছরের জন্য অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান পাবেÑ শর্তে আবারও প্রাক-নিবন্ধন শুরু হয়। কোটা খালি হলে অতিরিক্ত তালিকা থেকে ক্রমান্বয়ে এবার হজের সুযোগ পাবেন।

সোমবার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪ জনের প্রাক-নিবন্ধন শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৯৪৪ জনের এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৪০ জন। এ হিসাবে এরই মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কোটার অতিরিক্ত হজযাত্রী ৪৪ হাজার ৮০০ জন। কোটা খালি হওয়া সাপেক্ষে অতিরিক্তদের মধ্য থেকে এবার হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। ৩০ মে পর্যন্ত প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চলার কথা রয়েছে।

প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের পুলিশি তদন্ত শুরু : চলতি বছরের প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীদের পুলিশি তদন্ত (ভেরিফিকেশন) শুরু হয়েছে। পুলিশি তদন্ত ছাড়া হজে যাওয়ার জন্য কেউ বিবেচিত হবেন না।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত কোটার প্রাক-নিবন্ধন নম্বর ১ থেকে ৮৮ হাজার ২৩৬ ক্রম (সিরিয়াল) পর্যন্ত পুলিশি তদন্ত হবে। আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় পুলিশি তদন্ত হবে ১ থেকে ৩ হাজার ৮৪৬ ক্রম পর্যন্ত।
এরই মধ্যে হজযাত্রীদের তালিকাসংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে হজযাত্রীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পুলিশি তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না। কোনো কোনো হজ এজেন্সি পুলিশি তদন্ত করিয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা নিতে পারে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে হজযাত্রীদের সতর্ক করা হয়েছে।

বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্ধারিত কোটার ক্রমে (৮৮ হাজার ২৩৬) কাউকে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাসে বিভ্রান্ত হয়ে টাকা-পয়সা লেনদেন না করতে হজযাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.