চলতি বছরের হজের মূল রেজিস্ট্র্রেশনের কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। তারই অংশ হিসেবে অনলাইনে হজ প্যাকেজের বাকি টাকা জমার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও এজেন্সিগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে শনিবার পর্যন্ত চলবে এই প্রশিক্ষণ। আগামী রোববার থেকে ব্যাংকগুলো টাকা জমা নিয়ে অনলাইন সিস্টেমে টাকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা শুরু করবে। তবে প্যাকেজমূল্য পরিশোধের সাথে সাথেই পিলগ্রিম আইডি দেয়া হচ্ছে না। টাকা জমার ব্যাংক বিবরণীতে হাবের সত্যায়ন নিয়ে হজ অফিসে জমা দেয়ার পরই যাচাই-বাছাই শেষে পিলগ্রিম আইডি দেয়া হবে। যারা পিলগ্রিম আইডি পাবেন তারাই চলতি বছরের হজে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আজ সরকার নির্ধারিত ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হজ অফিসে হজের মূল নিবন্ধনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আর এজেন্সিগুলোর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কাল শুরু হয়ে আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে। গতকাল সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে হজ প্রস্তুতি বিষয়ে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়ার টাকাও এজেন্সিগুলোর অ্যাকাউন্টেই থাকবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল জলিল জানান, হজের মূল নিবন্ধন কার্যক্রম শুরুর আগে ব্যাংক ও এজেন্সিগুলোকে প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে। সে জন্য কিছু সময় লাগছে। আশা করছি আগামী রোববার থেকে মূল নিবন্ধন কার্যক্রম অর্থাৎ ব্যাংকে বাকি টাকা দেয়া শুরু করা যাবে। তিনি বলেন, জাতীয় হজনীতিতে যেভাবে বলা আছে মূল নিবন্ধন সেভাবেই চলবে। এজেন্সিগুলোকে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিতে হবে সেভাবে প্রাক-নিবন্ধনের সময় অনলাইন সিস্টেমে জমা দিয়েছে। তারপর ব্যাংক স্টেটমেন্টে এজেন্সির স্বাক্ষরের পাশাপাশি হাব থেকেও সত্যায়ন করতে হবে। তারপর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। তারপরই দেয়া হবে পিলগ্রিম আইডি। তিনি জানান, নিবন্ধিত হজযাত্রীর পুলিশ ভ্যারিফিকেশনের কাজ প্রায় সম্পন্ন। ফলে মূল নিবন্ধন শুরুতে কোনো বাধা নেই।
বেসরকারি হজযাত্রীদের মধ্যে যারা নির্ধারিত ৮৮ হাজার ২০০ জনের সিরিয়ালের মধ্যে রয়েছেন প্রাথমিকভাবে তাদের কাছ থেকেই মূল নিবন্ধনের অংশ হিসেবে মোয়াল্লেম ফি বাবদ নেয়া টাকা বাদ দিয়ে ন্যূনতম হজ প্যাকেজ মূল্যের বাকি টাকা জমা নিশ্চিত করা হবে। আগামী ৩০ মে পর্যন্ত এই নিবন্ধন কার্যক্রম চলার কথা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে প্রাক-নিবন্ধনের সুযোগও থাকছে। প্রাক-নিবন্ধনের ক্ষেত্রে হজের মোট প্যাকেজ মূল্য থেকে কেবল মোয়াল্লেম ফি এর টাকা নেয়া হচ্ছে। এ বছর সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন প্যাকেজমূল্য তিন লাখ চার হাজার ৯০৩ টাকা। এর মধ্যে প্রাক-নিবন্ধনের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে ফিসহ ৩০ হাজার টাকা। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনার জন্য ৩০ হাজার ৭৫২ টাকা। সর্বনিম্ন প্যাকেজমূল্যের হিসাবে এখন বাকি দুই লাখ ৭৪ হাজার ১৫১ টাকা জমা দিয়ে মূল নিবন্ধন নিশ্চিত করতে হবে।
কোটার অতিরিক্ত তালিকার হজযাত্রীরা ক্রমিক নং অনুসারে আগামী বছরের হজের জন্য অগ্রাধিকার পাবেন সেই শর্তে প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বেসরকারি হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধনের কোটা গত ২৮ মার্চ শেষ হওয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার অতিরিক্ত প্রাক-নিবন্ধিত হয়েছে। তবে সরকারি ব্যবস্থাপনার কোটার অর্ধেকেরও বেশি এখনো খালি রয়েছে।
অতিরিক্ত হজযাত্রীদের মধ্য থেকে আরো ১০ হাজারের কোটা বৃদ্ধির একটি আবেদন সৌদি সরকারের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ধারাবাহিকতায় সরকারি কোটা খালি থাকলে সেগুলোও বেসরকারি তালিকা থেকে পূরণ করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে নির্ধারিত সরকারি কোটায় যেতে হলে সরকারি ব্যবস্থাপনায়ই যেতে হবে এমনকি অতিরিক্ত পাঁচ বা দশ হাজার কোটা পাওয়া গেলে তাও সরকারি ব্যবস্থাপনাই যেতে হবে। গত বছর সর্বশেষ পাঁচ হাজার অতিরিক্ত কোটা পাওয়া গিয়েছিল। সরকারি কোড ব্যবহার করে ওই হজযাত্রীদের হাবের ব্যবস্থাপনায় মূলত বেসরকারিভাবেই পাঠানো হয়েছিল।
অতিরিক্ত কোটা প্রাপ্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ধর্মসচিব বলেন, এ ব্যাপারে কোনো অগ্রগতির খবর জানা নেই।
এ দিকে হজ অফিসে আইটি প্রতিষ্ঠান বিজনেস অটোমেশনের সমন্বয়ক কবির আল মামুন জানিয়েছেন, হজের মূল নিবন্ধনের যাবতীয় প্রস্তুতি রয়েছে আইটি শাখার। এখন এজেন্সি মালিক এবং ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ প্রদান শেষ হলেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে মূল নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে।
হজ অফিসের আইটি শাখার দেয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধনকারী হজযাত্রীর সংখ্যা এক লাখ ৩৮ হাজার ৩১৩। এর মধ্যে সরকারি চার হাজার ৩৩০ ও বেসরকারি এক লাখ ৩৩ হাজার ৯৮৩ জন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে গমনেচ্ছুদের ডাটা এন্ট্রির সংখ্যা পাঁচ হাজার ৪৬। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ডাটা এন্ট্রির সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজার ৫৮০ জন। এ পর্যন্ত সর্বমোট প্রাক-নিবন্ধন স্বেচ্ছায় বাতিল করেছেন সরকারি ব্যবস্থাপনার ২৫ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৭১৮ জন। এ বছর সরকারি-বেসরকারি মিলে হজযাত্রীর কোটা এক লাখ এক হাজার ৭৫৮। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর/৯ জিলহজ পবিত্র হজ পালিত হবে।
আরও খবর