সম্প্রতি মার্কিন এয়ারপোর্টগুলোতে নিরাপত্তা পরীক্ষণের লম্বা সারি থেকে মুক্তি পেতে কর্মীবৃন্দের উপরে বিনিয়োগ করছে ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (টিএসএ)। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কর্মীদের পেছনে খরচ না করে যাত্রী এবং লাগেজ পরীক্ষার প্রযুক্তিটিকে উন্নত করার জন্য বিনিয়োগ করা দরকার।
এয়ারপোর্টে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমিয়ে দিতে সক্ষম- এমন তিনটি প্রযুক্তি নিয়ে প্রতিবেদন করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
একাধিক লেইন ব্যবহার
মে মাসে হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে দুইটি নতুন নিরাপত্তা লেইন যুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ আগের তুলনায় বেশি যাত্রী কম সময়ে পরীক্ষণ করতে পারছে। নতুন দুই লেইনকে চালু করতে খরচ হয়েছে ১০ লাখ ডলারেরও বেশি।
নতুন লেইনগুলোতে স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষার জন্য দ্রব্যাদি রাখার জায়গাসহ বিন সিস্টেম রয়েছে। এর মাধ্যমে যাত্রীরা তাদের বেল্ট, জুতা ইত্যাদি জিনিস খুলে রেখে স্ক্রিনিংয়ের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। অর্থাৎ একজন যাত্রী যদি তার সামনের জনের স্ক্রিনিং শেষ হওয়ার আগেই স্ক্রিনিংয়ের জন্য তৈরি থাকতে পারেন, তাহলে আর তাকে বৃথা কালক্ষেপণ করতে হবে না।
নতুন এই প্রযুক্তি বিভিন্ন উপকরণ একটি নির্দিষ্ট জায়গায় স্তূপ করা পুরাতন বিনগুলোকে সরিয়ে দিয়েছে। লেইন বাড়ানোর কারিগর ‘ডেলটা’র একজন মুখপাত্র মরগ্যান ডুরান্ট-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহখানেক আগে যোগ করা নতুন লেইন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে আগের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি যাত্রী দ্রুত পরীক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে, যা অনেক বেশি সময় সাশ্রয়ী এবং ঝামেলাবিহীন।
দেশটি সবচেয়ে বড় এই এয়ারপোর্টের বাইরেও এই ধরনের পদ্ধতি চালু করা হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি
হাসপাতালে ব্যবহৃত প্রযুক্তি এয়ারপোর্টের সময় বাঁচাতে সাহায্য করতে সক্ষম। অ্যানালজিক-এর কোবরা মেশিন যে কোনো ব্যাগের থ্রিডি ছবি তুলে নিতে পারে। ছবি যাচাই করে দেখে নেওয়া হয় ব্যাগে অবৈধ কিছু রয়েছে কি না।
এই স্ক্যানারগুলোর মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় যাত্রীকে তার ব্যাগ থেকে ল্যাপটপ কিংবা শরীর থেকে বেল্ট খুলে দেখাতে হবে না। এছাড়া কোনো ব্যাগে সমস্যা পাওয়া গেলেও জট লেগে যাবে না। স্ক্যানারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সন্দেহজনক ব্যাগটিকে লাইনের বাইরে একজন এজেন্টের কাছে পাঠিয়ে দেবে। এ সময় অন্যান্য ব্যাগগুলো তাদের গতিতে এগিয়ে যেতে থাকবে।
অ্যানালজিক-এর প্রধান জিম গ্রিন জানান, থ্রিডি প্রযুক্তির মাধ্যমে এক্সর-এর ব্যবহারে ‘ভুল সন্দেহে’ ব্যাগ আটকে রাখার ঘটনা কমে যাবে। প্রতিষ্ঠানটির মতে তারা তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাগ পরীক্ষণের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে সক্ষম। যা ঘণ্টায় কমপক্ষে সাড়ে পাঁচশ’ ব্যাগ।
গ্রিনের মতে ব্যাগ স্ক্রিনিংয়ের সময় অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে হয়ত দেখা যাবে যাত্রীদের অতিরিক্ত সারির কোনো অস্তিত্বই নেই। প্রযুক্তিটি ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। আট বছর আয়ুবিশিষ্ট যন্ত্রগুলো প্রতিটি স্থাপনে খরচ হবে তিন লাখ মার্কিন ডলার।
চলাফেরার মধ্যেই স্ক্রিনিং!
যুক্তরাষ্ট্রের নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি-এর একদল প্রকৌশলী একটি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে যা এতটাই দ্রুতগতির স্ক্রিনিং করতে পারবে যে স্ক্রিনিংয়ের জন্য যাত্রীকে দাঁড়াতেও হবে না।
দলটি একটি কাঠামো তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে থাকবে উচ্চ ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সেন্সর, যা একাধিক মানুষকে একসঙ্গে স্ক্যান করতে পারবে। কাপড় খোলা দূরে থাক এই প্রযুক্তির ব্যবহারে যাত্রীকে এক মুহূর্তের জন্যে দাঁড়িয়েও সময় নষ্ট করতে হবে না।
বর্তমানের ইমেজিং সিস্টেম-এ যাত্রীকে দুহাত তুলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
প্রকল্পটির একজন অধ্যাপক হোসে মার্টিনেজ বলেন, “ধারণাটি হল আপনাকে একেবারেই থামতে হবে না, আপনি সোজা হেঁটে গিয়ে স্ক্যানিংয়ের কাজ শেষ করতে পারেন এবং একটি ভাল অভিজ্ঞতা নিয়ে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করবেন।”
তিনি জানান, তাদের প্রযুক্তিটির বাস্তবায়ন হলে সময়ের দিক থেকে বর্তমানের তুলনায় তিনগুণ বেশি যাত্রী স্ক্যান করা সম্ভব, ঘণ্টায় তিনশ’ জন। দলটি ২০২০ সালের মধ্যেই একটি প্রোটোটাইপ বানাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।