ঢাকার ওমান দূতাবাস জানিয়েছে, ভিসা প্রদান স্থগিতের সিদ্ধান্ত অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও সমভাবে কার্যকর করা হয়েছে। প্রকৃতভাবে এটি একটি সাময়িক পদক্ষেপ।
আজ বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে নিশ্চিত করা হয় যে ‘এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতির নয়’।
ওমান পুলিশের (আরওপি) গত মঙ্গলবার দেয়া এক বিবৃতি থেকে জানা যায়, সব শ্রেণীর বাংলাদেশী নাগরিকদের নতুন ভিসা ইস্যু স্থগিত করেছে দেশটি। একই সঙ্গে ওমানে ট্যুরিস্ট ও ভিজিট ভিসায় যাওয়া প্রবাসীদের ভিসা পরিবর্তনের যে সুযোগ এতদিন দেয়া হচ্ছিল, তাও স্থগিত করা হয়েছে। তবে এ সুযোগ সব দেশের নাগরিকদের জন্যই স্থগিত করা হয়েছে। এ ঘোষণা আসার আগে অভিবাসীরা ভিজিট ভিসায় ওমানে গিয়ে পরে তা কর্মসংস্থান ভিসায় পরিবর্তন করতে পারতেন।
ওই ঘোষণাকে সামনে রেখে ওমান দূতাবাস আজ বলছে, বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা প্রদান স্থগিত সংক্রান্ত রয়াল ওমান পুলিশের জারি করা ঘোষণার বিষয়বস্তুর মূল প্রতিপাদ্য ওমানে বিদেশী শ্রম বাজার সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিচালিত সাবির্ক সমীক্ষা পর্যালোচনার অংশবিশেষ। এটি ওমানি শ্রম বাজারের চাহিদা ও স্থিতিশীলতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার একটি প্রয়াস যা বর্তমান শ্রম আইন অনুসারে শ্রমিক ও নিয়োগকর্তা উভয়ের অধিকার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়েছে।
ভিসা প্রদান স্থগিত করার সিদ্ধান্তটি অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও সমভাবে কার্যকর করা হয়েছে- উল্লেখ করে বলা হয়, ‘সিদ্ধান্তটি প্রকৃতভাবে একটি সাময়িক পদক্ষেপ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে যাতে এ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে চলমান পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে পুনরায় ভিসা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা যায়।’
আরো বলা হয়, ‘পর্যালোচনা প্রক্রিয়াটি বেশ কিছু কারিগরি ও আইনি কাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যার লক্ষ্য প্রবাসী শ্রমিক ও নিয়োগকর্তার স্বার্থ রক্ষা করা পাশাপাশি ওমানে বিদেশী শ্রম বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।’
ওমান অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও প্রশংসার সঙ্গে বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের ওমানের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অসামান্য অবদানের কথা স্মরণ করে বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও পারষ্পরিক অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পর্ক জোরদার করতে ওমান সর্বদা আগ্রহী।
ওমান দূতাবাস বলছে, ‘আমরা দৃঢ়তার সাথে নিশ্চিত করতে চাই যে ওমান কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতির নয়।’
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে শ্রম রফতানির তৃতীয় বৃহত্তম উৎস ওমান। আগে অল্পসংখ্যক প্রবাসী দেশটিতে পাড়ি জমালেও ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশী অভিবাসীদের জন্য বড় গন্তব্য হয়ে ওঠে। ওই বছরই প্রথমবারের মতো ৫২ হাজার অভিবাসী শ্রমিক ওমানে গিয়েছিলেন। এর পর থেকে নিয়মিতই বাংলাদেশী শ্রমিক যাচ্ছেন ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশটিতে। গত বছর গেছেন সর্বোচ্চসংখ্যক ১ লাখ ৮০ হাজার কর্মী। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ওমানে পাড়ি দিয়েছেন ৭৬ হাজার ৬৭৯ জন, ২০২১ সালে ৫৫ হাজার ৯, ২০২০ সালে ২১ হাজার ৭১, ২০১৯ সালে ৭২ হাজার ৬৫৪ ও ২০১৮ সালে ৭২ হাজার ৫০৪ জন বাংলাদেশী।
বাংলাদেশে রেমিট্যান্সের বড় উৎসগুলোরও একটি ওমান। প্রতি বছর প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় আসে দেশটি থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোর দিক থেকে নবম ছিল ওমান। চলতি বছর অবশ্য পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭৯ কোটি ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১২৪ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশটি থেকে।