সম্ভাবনাময় নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ।
পর্যটন আর অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় নিঝুম দ্বীপ। প্রাকৃতিক সম্পদ ও নান্দনিক সৌন্দর্যে সমৃৃদ্ধ এ দ্বীপ। নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় এর অবস্থান। সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ পেলে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে দ্বীপটি এমনই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলে এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা আসবেন। একই সঙ্গে বদলে যাবে হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ। অনেকের ধারণা, বঙ্গোপসাগর ও মেঘনার প্রচণ্ড ঢেউ নিঝুম দ্বীপকে দ্বিতীয় কক্সবাজার হিসেবে পরিচিত করে তুলবে।
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি উপকূলীয় দ্বীপ হাতিয়া। চারদিকে অথৈ জল ও উত্তাল তরঙ্গের মাঝে যেন ভাসমান ভেলা। দুই হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়ানো নয়নাভিরাম হাতিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ছয় লাখ।
হাতিয়ার উত্তরে সুবর্ণচর উপজেলা ও উত্তর-পশ্চিমে রামগতি উপজেলা। দক্ষিণ ও পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে ভোলার মনপুরা উপজেলা। হাতিয়ায় ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। ধারণা করা হয়, পঞ্চদশ শতাব্দীর দিকে বঙ্গোপসাগর আর মেঘনা মোহনায় গড়ে ওঠা সবুজে ঘেরা দ্বীপটি মানুষের নজরে আসে।
স্থানীয়দের মতে, এখানে রাজনৈতিক চাঁদাবাজির কারণে ট্রলার, স্পিডবোট, মোটরসাইকেল ও বেবিট্যাক্সির ভাড়া বেড়েছে, যা পর্যটনের অগ্রগতিতে বাধা সৃষ্টি করছে। নিঝুম দ্বীপ হাতিয়ার অলংকার। নিঝুম দ্বীপসহ জেগে ওঠা চরাঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠতে পারে সম্ভাবনার আরেক নতুন বাংলাদেশ।
হাতিয়ার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটের দশা এখন বেহাল। নৌপথে নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর, মৌলভীরচর, রামগতি ও নলেরচরে যাতায়াতের বাহন ফিটনেসবিহীন নৌকা ও ট্রলার। হাতিয়া উপকূল দেশের অন্যতম মৎস্য চারণক্ষেত্র। হাতিয়ার উপকূলীয় এলাকায় ট্রলারগুলো যে পরিমাণ মাছ ধরে, তা গোটা দেশের আহরিত মাছের ১৭ ভাগ। মাছ ধরা ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করা গেলে দেশের চাহিদা পূরণের পর অন্তত ৩০ লাখ টন মাছ রফতানি সম্ভব।
হাতিয়ার মাটি অত্যন্ত উর্বর। এ দ্বীপে বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৯৮ হাজার টন। খাদ্যশস্যের চাহিদা ৫৮ হাজার টন। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ৪০ হাজার টন। নিঝুম দ্বীপের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে বন বিভাগের তৈরি বাগান। এখানে সুন্দরী, কেওড়া, গেওড়া, গোলপাতা, কেশরী প্রভৃতি বৃক্ষ জন্মে। অপরূপ নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত দ্বীপ নিঝুম দ্বীপ।
নিঝুম দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার হলেও চিত্রল হরিণের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। জানা গেছে, নিঝুম দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ যেখানে মানুষের চেয়ে হরিণ বেশি। দ্বীপের বনে ফসলের মাঠ ও রাস্তাঘাটের পাশাপাশি লোকালয়েও ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায় হরিণের পাল। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়া শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এ দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপের বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে পলিমাটির চর, যা জোয়ারের পানিতে ডোবে, ভাটায় শুকিয়ে যায়।
বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। শীত কিংবা শীত-পরবর্তী মৌসুমে চেউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এ মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন।
যেভাবে যাবেন
নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে যাওয়ার বেশ কয়েকটি রুট রয়েছে। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে চড়ে হাতিয়ায় আসুন। হাতিয়া থেকে বোট বা ট্রলারে চলে যান নিঝুম দ্বীপে। কয়েকটি পরিবহনের বাসও চলাচল করে। বাসে চড়ে নোয়াখালীর সোনাপুর যেতে হয়। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেয়ারম্যানঘাটে, সে ঘাট থেকে নৌকা, স্পিডবোট বা ট্রলারে হাতিয়া হয়ে অথবা সরাসরি যাওয়া যায় নিঝুম দ্বীপে। হাতিয়া সদর থেকে মোটরসাইকেলে যাওয়া যায় মুক্তারিয়া ঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়া যায় নিঝুম দ্বীপের ঘাটে। এরপর আবারও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যাওয়া যায় নামার বাজারে (নিঝুম দ্বীপ)।
যেখানে থাকবেন
হাতিয়া সদরের ওছখালীতে রাতযাপনের জন্য উন্নতমানের রেস্টহাউজ রয়েছে। দ্বীপটি সম্পর্কে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আয়েশা আলী বলেন, হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপ একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হলে এ জনপদ বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। শিক্ষাবিদ এনামুল হক বলেন, অনেক সমাজসেবী আর গুণীর অবদানে হাতিয়া অগ্রগতির পথে হাঁটছে। তবে নদীভাঙন রোধ করা এবং সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা জরুরি। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, ওছখালী-জাহাজমারা সড়ক সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী বর্ষার আগে কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছি। পরিবহনে বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এ পরিবহনগুলো অবৈধ। তবে জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না।