এভিয়েশন নিউজ: সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়েছে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ওমরা হজের টিকিট। এতে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ওমরা হজযাত্রীরা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সৌদিয়ার ওমরা টিকিট সাতটি ট্র্যাভেল এজেন্সি ছাড়া অন্য কারও সিস্টেমে পাওয়া যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট ওই এজেন্সিগুলো ছাড়া বাকিদের সিস্টেম ব্লক করে রাখা হয়েছে। এই সুযোগে দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৌদিয়া এয়ারলাইন্স থেকে যে টিকিট ৬৬০ ডলারে কেনা হয়, সেটি ওই অসাধু ট্রাভেল এজেন্টগুলো বিক্রি করছে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ ডলারে। অন্য কারও কাছে টিকিট না থাকায় ওমরা যাত্রীদের বাধ্য হয়ে গচ্চা দিয়েই টিকিট কিনতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, শুক্রবার থেকে সিস্টেমেও টিকিটের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আগে যে টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ১১৬ টাকা, শুক্রবার থেকে তা ৬২ হাজার ৪৮৬ টাকায় বিক্রি করতে বলা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ট্র্যাভেল এজেন্টগুলো কৃত্রিম সংকট তৈরি করে এই টিকিট ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকে বেশি দামে বিক্রিও শুরু করেছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, হজের সময় ট্রাভেল এজেন্টগুলোকে মনিটরিং করা হয়। এখন তা নেই।
সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের হজ ও ওমরা ফ্লাইট সমন্বয়কারী কর্মকর্তা লাবনী হাসনা চৌধুরী জানান, ওমরার টিকিট এখন সব ট্র্যাভেল এজেন্সির সিস্টেমে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ব্লক করারও সুযোগ নেই। এ ধরনের অভিযোগ তিনিও শুনেছেন জানিয়ে লাবনী সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের শীর্ষ পর্যায় থেকে অভিযোগটির তদন্ত হয়েছে। তদন্তে এর ভিত্তি পাওয়ার যায়নি। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে কোনো কোনো ট্র্যাভেল এজেন্সিকে সিস্টেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। শুধু তারাই টিকিট পাচ্ছে না।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করলেও অনেক এজেন্সি ও ওমরা হজযাত্রীর অভিযোগ, মূলত লাবনী হাসনা চৌধুরীর নেতৃত্বেই ৭-৮টি ট্র্যাভেল এজেন্সির একটি সিন্ডিকেট টিকিট প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা ছাড়াও টিকিট বিক্রি করেও যাত্রীদের যথাসময়ে ওমরায় পাঠাচ্ছে না বলেও এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ওভার বুকিংয়ের কারণে প্রতি ফ্লাইটে গড়ে ১০-১২ জন ওমরা হজযাত্রী সৌদি আরব যেতে পারছেন না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে থাকতে হচ্ছে তাদের। সৌদি প্রবাসী শ্রমিকদের অবস্থা আরও করুণ। এদের কাছ থেকে টিকিটের উচ্চমূল্য নিলেও যথাসময়ে গন্তব্যে পাঠানো হচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী ফ্লাইট ছাড়তে ৮ ঘণ্টা দেরি হলে যাত্রীদের হোটেলে রাখতে হয়। কিন্তু সৌদিয়া কর্তৃপক্ষ সেটাও করছে না। এসব অনিয়ম নিয়ে প্রায় একশ’ অভিযোগ জমা পড়েছে আটাব ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওভার বুকিং দিয়ে বিদেশী এয়ারলাইন্সের নিজস্ব সিন্ডিকেট প্রতি মাসে একশ’ কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে। এই তালিকায় এখন শীর্ষে আছে সৌদিয়া। এরপরই আছে টার্কিস এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারলাইন্স, এমিরেটস এয়ারলাইন্স। আর অভিযুক্ত ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো হল, সঞ্চারী ট্র্যাভেল, ভার্সেটাইল ট্র্যাভেল, মুনা ট্র্যাভেল, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্র্যাভেল, এয়ার ট্রিপ, কাজী এয়ার, সুরেশ্বর। এদের নেতৃত্বে আছেন ভার্সেটাইলের স্বত্বাধিকারী ফরহাদ হোসেন স্বপন। তবে তার দাবি তিনি কখনও হজ ও ওমরার টিকিট নিয়ে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করেননি। অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করে মানুষকে হয়রানি করার প্রশ্নই আসে না বলে তিনি জানান।
হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, শুধু সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের ওভার বুকিংয়ের কারণে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পাঁচশ’র বেশি যাত্রী যথাসময়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। কিছু দিন আগে এই ওভার বুকিংয়ের শিকার হয়ে একটি ফ্লাইটে ২৪ জন ওমরা হজযাত্রী সৌদি আরব যেতে পারেননি।
হজযাত্রী ও ভুক্তভোগী ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলোর অভিযোগ- মাত্র দুটি ক্যারিয়ার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদিয়া এয়ারলাইন্সকে হজ ও ওমরার টিকিট বিক্রির সুযোগ দেয়ায় প্রতি বছরই একই অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। আগামী হজকে সামনে রেখেও এয়ার টিকিট নিয়ে এরই মধ্যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত জানুয়ারি থেকেই সৌদিয়ার ওমরা টিকিটের ৮০ ভাগই অনলাইন সিস্টেমে ব্লক করে কৌশলে চার-পাঁচটি বিশেষ ট্র্যাভেল এজেন্সির মাধ্যমে বিক্রি করানো হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের সেলসের দিক থেকে শীর্ষস্থানে রেখে আসন্ন হজের বেশিরভাগ টিকিট বরাদ্দ দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। শতাধিক ট্র্যাভেল এজেন্ট তাদের সংগঠন আটাবের কাছে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছে।
আটাব সূত্রে জানা গেছে, সৌদি এয়ারের ওমরা টিকিট বিক্রিতে অনিয়ম নিয়ে চট্টগ্রামের ৪৪টি এবং সিলেটের ৩১টি এজেন্ট লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। আটাবের চট্টগ্রাম জোনের সভাপতি মোঃ আবু তাহের সৌদি এয়ারলাইন্সের ওমরা টিকিটের অনলাইন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আটাবের মহাসচিব জিল্লুর আহমেদ চৌধুরী দীপু বলেন, সৌদিয়ার টিকিট নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ সত্য। তিনি জানান, তারা এ ব্যাপারে সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। আটাবের কাছে এজেন্সিগুলোর করা অভিযোগ প্রসঙ্গে সৌদিয়ার কর্মকর্তা লাবনী হাসনা চৌধুরী বলেন- কারা কি অভিযোগ করেছে সেটা তার জানা নেই।