বিমান চলাচল প্রক্রিয়া আধুনিকায়নে নতুন প্রকল্প।
বিমান চলাচল প্রক্রিয়া আধুনিকায়নে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ প্রকল্পের অধীনে বিমান চলাচলকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে নিরাপদ বিমান চলাচল নিশ্চিত করতে রাডার ও এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে রাডার ও এয়ারট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম জিটুজি পদ্ধতিতে (সরকারি ব্যবস্থাপনায়) কিনতে এ প্রকল্প নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেছেন, বহুল আলোচিত এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিমানে নিরাপত্তাসহ সার্বিক কাজে গতি ফিরে আসবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে জিটুজি ভিত্তিতে রাডার কেনায় প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
জানা গেছে, জিটুজি ভিত্তিতে ফ্রান্সের ‘থ্যালেস’ নামে একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাডার কেনা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ এর নির্মাতা এই প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ১৯৮০ সালে জিটুজি ভিত্তিতে বাংলাদেশে রাডার ও নেভিগেশন সিস্টেম চালু করে থ্যালেস। এটা এখনও চালু রয়েছে।
সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা আরও জানান, ২০০৫ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পুরোনো রাডার বাদ দিয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রতিস্থাপনের উদ্যোগ নেয় বেবিচক। ২০১২ সালে পিপিপির আওতায় রাডার স্থাপন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। ২০১৫ সালে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ সময় অস্বাভাবিক ব্যয় দেখানোর কারণে তা বাতিল করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। পরে বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ২০১৭ সালের মার্চে পিপিপির পরিবর্তে সরকারি অর্থায়নে ‘সাপ্লাই ইন্সটলেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন অব মাল্টিমোড সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম (রাডার, এডিএস-বি) এটিএস অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন করে বেবিচক। এ প্রকল্পেরই নতুন নামকরণ করা হয় সিএনএস-এটিএম।
এর আগে মন্ত্রিসভা কমিটিতে পিপিপির প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দর প্রস্তাব করা হয়েছিল ২১৭৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত সুবিধা ও যন্ত্রপাতির মূল্য বিবেচনায় তা অস্বাভাবিক মনে হওয়ায় একনেক সেটি অনুমোদন দেয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ও দিকনির্দেশনায় এবং বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসানের তত্ত্বাবধানে জিটুজি ভিত্তিতে থ্যালেসের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
থ্যালেস এ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও দর প্রস্তাব করে। এতে পিপিপিতে উল্লিখিত যন্ত্রপাতি ছাড়াও অতিরিক্ত ৮০ কোটি টাকার নিরাপত্তা সরঞ্জাম সংযোজন করার পরও প্রস্তাবিত ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫০ কোটি টাকা। এটা প্রাথমিক দরপ্রস্তাবের চেয়ে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা কম। থ্যালেস প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় আগের প্রস্তাবের বাইরেও ডব্লিউএএম, সার্ভেইল্যান্স অব ইইজেড, এইচএফ ট্রান্সমিটার, থ্রিডি টাওয়ার সিম্যুলেটর, ন্যাভেইডস, কন্ট্রোলারস রোস্টার ম্যানেজমেন্ট টুল ইত্যাদি সংযোজন করার কথা রয়েছে। এটা প্রস্তাবিত এয়ারট্র্যাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে অধিক নিরাপদ ও কার্যকর করতে অপরিহার্য।
বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান বলেন, এখন দরপত্র চূড়ান্ত করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু হবে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে নিরাপদ হবে দেশের আকাশসীমা ও বিমান চলাচল ব্যবস্থা।