বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি পালন করা হচ্ছে নানা আয়োজনে। বাদ যায়নি যুক্তরাষ্ট্রেও। দেশটির কিছু কিছু স্টেটে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা পালন করছেন অমর একুশে ফেব্রুয়ারি।
তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি স্বীকৃতি পাওয়ার একুশ বছরেও ‘স্বাগতম’ শব্দটি লেখা হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে। দেশটির ১৪৯টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আজও চোখে পড়ে না আমন্ত্রণ জানিয়ে উচ্চারিত এ শব্দটি।
বিশ্বে প্রায় ১০০টি ভাষায় ইংরেজি ‘ওয়েলকাম’ শব্দের অনুবাদ রয়েছে। বাংলা ভাষায় যার অর্থ দাঁড়ায় স্বাগতম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে দেখা যায় বেশ বড় করে লেখা থাকে এ শব্দ। কিন্তু স্বীকৃতি পাওয়ার ২১ বছরেও যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে স্বাগতম লেখাটি না থাকা যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার প্রতি মার্কিনীদের অবজ্ঞা, তেমনি বাংলাদেশিদের জন্য লজ্জাও বটে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ও সুপরিচিত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি (জেএফকে)। বিমানবন্দরটিতে বিভিন্ন দেশের ভাষায় সফরকারীদের অভ্যর্থনার জন্য ‘স্বাগতম’ লেখা থাকলেও নেই বাংলা ভাষায়। শুধু তাই নয় ওয়াশিংটন, ফ্লোরিডাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু শহরের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতেও দেখা পাওয়া যায় না ছোট্ট এই শব্দটির।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরের সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার ৭০০। এর মধ্যে ৫ হাজার ১৭০টি সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া ৫০৩টি বিমানবন্দর রয়েছে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক বিমান ওঠানামার জন্য। দেশটির মোট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ১৪৯টি। তারপরও কোথাও স্বাগতম শব্দটি লেখা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশটিতে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষীর লোকজন।
অভ্যর্থনা জানাতে বাংলা ভাষায় স্বাগতম লেখাটি নেই কেন, জানতে চাইলে নিউইয়র্ক লিবার্টি বিমানবন্দরের ওয়েলকাম সেন্টারের সুপারভাইজার প্যাগি জানান, গত সাত বছর ধরে বিভিন্ন ভাষায় লেখাযুক্ত নতুন ওয়েলকাম বোর্ডটি দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে। তবে শুধু বাংলায় শব্দটি যে বাদ পড়েছে তা নয়। আরও বেশ কয়েকটি দেশের ভাষায় শব্দটি বাদ পড়েছে। কারণ, সারা দেশের সব ভাষায় অভ্যর্থনা জানাতে শব্দ লেখার জায়গা তাদের নেই।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পেয়েছে, বিষয়টি প্যাগি জানেন না। এ বিষয়ে বিমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরগুলোতে বাংলা ভাষা না লেখা থাকায় সেখানে ভ্রমণে যাওয়া বহু মানুষের বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। যে কারণে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি ও কলকাতার মানুষরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের মতামত, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা দেশ দেশান্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সেন্টারে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তবে বিমানবন্দরগুলোতে বাংলা লেখা না থাকা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার প্রতি মার্কিনীদের অবজ্ঞা। বাংলাদেশিদের জন্যও তা লজ্জার ব্যাপার। তাই সরকারিভাবে এ সমস্যার সমাধান চান তারা।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা মাতৃভাষা স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে বা স্টেটে বাংলা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিমানবন্দরগুলোতেও বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলছে। এ সমস্যার সমাধান হবে।