এভিয়েশন নিউজ: আন্দোলনে না যাওয়ায় সিবিএ নেতারা বিমানের দুই নারী অফিসারকে লাঞ্ছিত করেছে। ভুক্তভোগীরা হলেন জুনিয়র কমিউনিকেশন অফিসার আকলিমা খানম ও একই বিভাগের ফাতেমা বেগম। বৃহস্পতিবার সকালে বিএফসিসি, মোটর ট্রান্সপোর্টসহ কয়েকটি শাখার সিবিএ সমর্থিত নেতা আনোয়ার, ফিরোজ, রফিক ও সবুজসহ ১০/১২ জনের একদল উশৃঙ্খল কর্মী বিমানের বলাকা ভবনের পঞ্চম তলার কমিউনিকেশন বিভাগের এই দুই নারী অফিসারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
তারা টেনেহিঁচড়ে জোর করে দুই নারী অফিসারকে বলাকা ভবনের নীচ তলায় সিবিএ‘র ডাকা অবস্থান কর্মসূচীতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আকলিমা ও ফাতেমা না যাওয়ায় তারা তাদের কাপড় চোপড় খুলে রেপ (ধর্ষন) করারও হুমকি দেয়। বলে, ভদ্র ভাবে বললে শুনবে না। টেনেহিঁচড়ে কাপড় চোপড় খুলে নিয়ে আসতে হবে। এক সিবিএ নেতা আকলিমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ওর কাপড় চোপড় খুলে রেপ কর। তাহলে শিক্ষা হবে। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিমান জুড়ে তোলপাড় ওঠে।
বিমান সূত্রে জানা গেছে বর্বরোচিত ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিমান এমডি মোসাদ্দেক আহম্মেদ তদন্তের বিষয়টি অনুমোদন করেছেন বলেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।
আকলিমা খানম বলেন, টানাহ্যাচড়ার এক পর্যায়ে তিনি ভয় দৌড়ে পাশের রুমের গিয়ে আশ্রয় নেন এবং ভেতর থেকে ওই রুমের দরজা বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দলবলসহ আরো বেশ কয়েকজন সিবিএ কর্মী ওই রুমের সামনে অবস্থান নেয়। তারা লাথি মেরে কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ফেলারও চেষ্টা চালায়। বাধ্য হয়ে আকলিমা দরজা খুলেন। এরপর তারা ট্যানে হেচড়ে আকলিমাকে আবার মিছিলে নেয়ার চেষ্টা করে।
আকলিমা জানান, ভয়ে তিনি বাসায় ফোন করার কথা বলে সিকিউরিটি বিভাগের ম্যানেজার ইদ্রিসকে বিষয়টি জানান এবং আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এরপর মেজবাহ নামে সিকিউরিটি বিভাগের এক কর্মী পুলিশসহ আকলিমা এবং ফাতেমাকে রক্ষা করতে পঞ্চম তলায় আসেন। এই খবর শুনে সিবিএ নেতরা আরো ক্ষিপ্ত হয়। এরপর অবস্থান কর্মসূচীতে অংশ নেয়া আরো ১০/১২ জন কর্মী পঞ্চম তলায় গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে আকলিমা ও ফাতেমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
আকলিমা কাঁদতে কাঁদতে জানান, বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং বিভাগের (বিএফসিসি) সিবিএ নেতা আনোয়ার চিৎকার করে অন্য কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে বলে, আন্দোলনে না গেলে দুইজনকে রুমের দরজা বন্ধ করে কাপড় চোপড় খুলে রেপ (ধর্ষণ) কর। দ্যাখ কোন বাপ এসে ওদের রক্ষা করে। এসময় তারা বিমান বোর্ড চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল জামাল উদ্দিনকেও গালিগালাজ করেন। এসময় কয়েকজন সিবিএ নেতা আকলিমাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়।
তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ওড়না ধরে টানাটানিও করে কেউ কেউ। এই অবস্থায় পুরো বলাকা জুড়ে আতঙ্ক নেমে আসে। ভয়ে অন্য নারী কর্মীরা তাদের দরজা বন্ধ কওে লুকিয়ে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, এই ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। এভাবে একজন কলিগ অন্য কলিগকে কিভাবে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করতে পারে এমনকি ধর্ষণ করার হুমকি দিতে পারে এটা বিমানের ইতিহাসে নজির বিহীন।
আন্দোলনের নামে এটি অরাজকতা। তারা অবিলম্বে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিমান থেকে বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবি জানান। এমনকি অ্যাটেম টু রেপের (ধর্ষন) মামলায় আসামি করারও দাবি জানান। বিষয়টি আকলিমা লিখিতভাবে বিমান ম্যানেজমেন্টকে জানিয়েছেন বলেও এভিয়েশন নিউজকে জানান।
তিনি বলেন, এই অবস্থায় তিনি এখন নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। অফিস থেকে আসার পর তিনি দরজা বন্ধ করে সারাক্ষণ শুধু কেঁদেছেন। লজ্জায় তিনি বাসার কারো সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলতে পারছেন না। প্রয়োজনে তিনি থানায় মামলা দায়ের করবেন বলেও জানান। বিমান সূত্রে জানা গেছে, আকলিমা বিমানের সিবিএ (১৯৭০) এর সঙ্গে জড়িত। একারণে তিনি বর্তমান সিবিএ নেতাদের ডাকা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেননি।
জানা গেছে, গত বুধবার আন্দোলন চলাকালে শ্রমিকলীগ সভাপতি ও সিবিএ নেতা মসিকুর ও সাধারণ সম্পাদক মন্তাছারের নেতৃত্বে সিবিএ নেতারা বিমানের প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে গিয়ে বিমানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আন্দোলন চলাকালে কাজ না করার নির্দেশ দেন। এ সময় তার সঙ্গে শ্রমিকলীগ নেত্রী ফারহা মাহবুব এবং বেনুও ছিলেন। তারা মসিকুরকে আকলিমা ও ফাতেমার বিরুদ্ধে নালিশ দেন।
বিমানের একটি সূত্র জানায়, ওইদিন মসিকুরের সঙ্গে এনিয়ে আকলিমার সঙ্গে সামান্য কথা কাটাকাটিও হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, এর সূত্র ধরে সিবিএ নেতারা আকলিমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এর খেসারত হিসাবে বৃহস্পতিবার তারা এই ঘটনা ঘটান। আকলিমা বলেন, আমি তাদের অনেক অনুনয়-বিনুনয় করে বলছি, কিন্তু তারা প্রকাশ্যে আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছে সেটা বিমানের বহু কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। অন্যথা এধরনের সিবিএ নেতারা বিমানের অন্য মেয়েদের লাঞ্ছিত করতেও দ্বিধা করবে না।