র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখাকে আরো শক্তিশালী করা হবে : বেনজীর

104982_145জঙ্গি তৎপরতাসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমনে গোয়েন্দা সক্ষমতা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে র‌্যাব বলে জানিয়েছেন বাহিনীর মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। শনিবার সকালে র‌্যাবের এক যুগপূর্তী উপলক্ষে এর সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠান শেষ সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি। এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সালাম গ্রহণ করেন তিনি। পরে দরবারে অংশ নেন। এ সময় কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত র‌্যাব সদস্যদের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেয়া হয়। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলার প্রসঙ্গ টেনে বাংলাদেশে সে ধরনের ঘটনা ঘটলে কিভাবে মোকাবেলা করবেন, সাংবাদিকরা তা জানতে চান র‌্যাব মহাপরিচালকের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, যখন দেখি আমাদের অঞ্চলে কোনো দেশ জঙ্গিবাদে আক্রান্ত হয়, দূর প্রতিবেশী কোনো দেশ আক্রান্ত হয় বা সুদূর পশ্চিমে কোনো দেশ আক্রান্ত হয়, তখন কিন্তু আমরা তা থেকে আমাদের যা লেসন তা গ্রহণ করি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের করণীয় কী হতে পারে সেটি নির্ধারণ করে সতর্কতামূলক, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা কি হতে পারে, তা হালনাগাদ করে নিজেদের পরিকল্পনাকে বিন্যস্ত করি। গঠনের পর থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা নিয়ে চলতে হচ্ছে র‌্যাবকে। আবার আদালত থেকে আসা নির্দেশনায় বাহিনীর তদন্ত সক্ষমতাও বাড়াতে বলা হয়েছে। বেনজীর বলেন, যদি সুপ্রিম কোর্ট বা চিফ জাস্টিস কোনো নির্দেশনা দেন, সেটি আমরা অনুসরণ করব। বাংলাদেশে র‌্যাব নির্ধারিত বিষয়ে তদন্ত করে, সব বিষয়ে তদন্ত করে না। রাষ্ট্র, সরকার র‌্যাবকে যে তদন্ত দেয়, সেটি র‌্যাব তদন্ত করে। তার সংখ্যা কিন্তু বেশি না। তিনি বলেন, র‌্যাবের সর্বাধুনিক ফরেনসিক ল্যাব রয়েছে। সবচেয়ে বড় ক্রিমিনাল ডেটা বেইসও তৈরি করেছেন তারা। এর সবই তদন্তের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগছে। র‌্যাবে বাছাই করা সদস্যরা কাজ করে। তদন্তের মান সন্তোষজনক। তবে এটা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগতে চাই না। ডেফিনেটলি ক্যাপাসিটি আরো বৃদ্ধি করতে চাই। দ্বাদশ বছর পেরিয়ে আগামী এক বছরে জঙ্গিবাদ দমন, দক্ষিণাঞ্চলে জলদস্যু ও বনদস্যু দমন, ইয়াবা আগ্রাসন প্রতিরোধ, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী অপতৎপরতা দমনকে অগ্রাধিকার দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে র‌্যাব। র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, এলিট ফোর্স হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর হতে র‌্যাব কর্মদক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে আসছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি জঙ্গী, চরমপন্থী ও সন্ত্রাস দমন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, অবৈধ মাদকদ্রব্য উদ্ধার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা রোধ, ভেজাল বিরোধী অভিযান, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখা, এমনকি চুরি যাওয়া নবজাতক উদ্ধারসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা কর্মসূচিতে র‌্যাবের সাহসী অবদান সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। একটি ক্রম অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে মুক্ত করার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশের অংশ হিসেবে বিগত ২৬ মার্চ ২০০৪ তারিখে মহান স্বাধীনতা দিবস প্যারেডের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে এ এলিট ফোর্স ‘র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)’। প্রাথমিকভাবে চারটি ব্যাটালিয়ন নিয়ে র‌্যাব গঠিত হলেও বর্তমানে র‌্যাব মোট চৌদ্দটি ব্যাটালিয়নের মাধ্যমে সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সব ধরনের সন্ত্রাস-অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সমন্বিত পরিকল্পনা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে সফল অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব ফোর্সেস আজ একটি সুসংগঠিত ও গতিশীল বাহিনী হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত। র‌্যাবে কর্মরত সব সদস্যের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, মেধা ও পরিশ্রমের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে র‌্যাব ফোর্সেস সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। জঙ্গীবাদ ও জঙ্গীদমন, জলদস্যু ও বনদস্যু দমন, দেশ বিনাশী ইয়াবা আগ্রাশনের বিরুদ্ধে ইস্পাত দৃঢ় প্রতিরোধ, সেলফোন সন্ত্রাস, গোয়েন্দা সক্ষমতা বৃদ্ধি, র‌্যাবের সংস্কার ও আধুনিকায়ন জঙ্গীবাদ ও অপরাধ দমনে জনসাধারণের সাথে কার্যকর সংযোগ স্থাপনে আগামী বছরে কর্মপকিল্পনা নেয়া হবে। ১২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে নেয়া তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে সকাল ৮টায় জাতীয় ও র‌্যাবের পতাকা উত্তোজন করে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এর পর সকাল সাড়ে ৮টায় র‌্যাবের ১৪ ব্যাটেলিয়নে পরিচালক ও কর্মরত সদস্যরা অংশ নেয়। এর পর দরবারে সম্মননা দেয়া হয় র‌্যাবের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে কর্মরত থাকা অবস্থায় বিভিন্নভাবে মারা যাওয়া শহীদ র‌্যাব সদস্যদের পরিবারগুলোকে। এ সময় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান, ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান, উপ-পরিচালক মেজর রুম্মান মাহমুদ, সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমানসহ র‌্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.