টাকার খেলা কোন দিকে হয়েছে তা রায়ে আসবে: প্রধান বিচারপতি

index_121635প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, দুই মন্ত্রীর আদালত অবমাননা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়েই দেখা মিলবে টাকার খেলা কোন দিকে হয়েছে।

আজ সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে আদালতে মামলার শুনানি উপলক্ষে উপস্থিত হন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও মুক্তযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তাদের উপস্থিতিতে সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৮ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন করেন।

এরপর বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া অ্যাটর্নি জেনারেলকে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য সম্বলিত দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিবেদনটি পড়তে বলেন। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পত্রিকায় প্রকাশিত দীর্ঘ সেই প্রতিবেদনে লেখা দুই মন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য পড়ে শুনান। পরে প্রধান বিচারপতি বক্তব্য নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন।

এরপর সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম ১০ মিনিটের জন্য মুলতবি করে বিচারপতিরা খাস কামরায় যান। সেখান থেকে ১০টা ২০ মিনিটের দিকে বিচারপতিরা আবার এজলাসে বসেন। এরপর দুই মন্ত্রীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেন। জরিমানার অর্থ ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতাল ও লিভার ফাউন্ডেশনে দিতে বলেছেন আদালত। অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাদের সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি বলেন, উচ্চ আদালতের সব বিচারক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাদের বক্তব্য শুনেছেন। এই অভিযোগটি আমরা বিচার বিশ্লেষণ করেছি। জনকণ্ঠ পত্রিকায় যাদের নাম এসেছে আমরা তাদের সবাইকে ডাকি নাই। অনেকে বক্তব্য দিয়েছেন, নানা দিক বিবেচনায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেইনি। প্রকৃতপক্ষে আদালত অবমাননা নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করতে চাই না।

তিনি আরো বলেন, এই দুই মন্ত্রীর সাংবিধানিক দায়দায়িত্ব রয়েছে। আজকে এই দুজনের ব্যাপারে রায় দেওয়া হল। এর মাধ্যমে দেশবাসী একটা বার্তা পাবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, জনকণ্ঠের স্বদেশ রায় আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। আর বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী অনেক জাজমেন্টের রায় লেখেননি। তারা তো বিতর্কিত ব্যক্তি। দুই মন্ত্রী কিভাবে এক মঞ্চে তাদের সঙ্গে বসলেন। এটা তো নৈতিকতার প্রশ্ন। তারা অ্যাটর্নি জেনারেল সম্পর্কেও বিরূপ মন্তব্য করেছেন।

এরপর বাসেত মজুমদার বলেন, দুঃখিত জনকণ্ঠের রিপোর্ট আমি পড়ি নাই।

এরপর বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিয়া বলেন, আমরা প্রতিবেদনটি পড়ালাম এ কারণে যে তারা যা বলেছেন তা সবার জানা দরকার।

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, টাকার খেলা কোন দিকে হয়েছে তা রায়ে আসবে। উল্লেখ্য মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলী প্রচুর অর্থ খরচ করছেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। এ নিয়ে দোষারোপ হয়েছে নানাজনের বিরুদ্ধে।

প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি যতোটুকু বুঝতে পেরেছি আদালত প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ। তবে রায়ের কপি পেলেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’

পরে রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু আদালত তাদের ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করতে অপারগ। তারা সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছেন। কিন্তু যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তাতে প্রধান বিচারপতির দফতর ও বিচার বিভাগকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন। তাই তাদের আবেদন খারিজ করা হল। শুরুতেই তারা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাদের সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছি। তাই দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করে এই দণ্ড দেওয়া হল।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.