মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে দেশের ট্রাভেল ও ট্যুরিজম খাতে প্রতিদিন শতকোটি টাকার লোকসান হচ্ছে। লোকসানের কবলে পড়ে অনেক ট্রাভেল এজেন্সি কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। কেউ কেউ ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন। এমন তথ্য দিয়েছেন সুরেশ্বর ট্রাভেলসের কর্ণধার এস এন মঞ্জুর মোর্শেদ (মাহবুব)।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের সমস্যায় মধ্যে পড়েছে এবং কীভাবে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশের (আটাব) সাবেক এই সভাপতি।
মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ট্রাভেল ও ট্যুরিজম খাতে যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে সরকার সরাসরি সহযোগিতা না করলে এই সেক্টর টিকতে পারবে না। এ জন্য এ খাত সংশ্লিষ্টদের সুদমুক্ত ঋণসুবিধা ও করছাড় দিতে হবে। সেই সঙ্গে এ খাতের স্বল্প বেতনের কর্মীদের ১০ টাকার রেশন কার্ড দিতে হবে।
তিনি বলেন, ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম সেক্টরে মধ্যে এয়ারলাইন্স, ট্রাভেল এজেন্সি, টুর অপারেটর, হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্টুরেন্ট, ট্যুরিস্ট বাস, ট্যুরিস্ট জাহাজ অন্তর্ভুক্ত। আমরা একটা সমীক্ষা করে দেখেছি, আমাদের এখানে প্রত্যক্ষভাবেই পেশাজীবী মানুষ আছেন প্রায় ৪০ লাখ। প্রতিদিন আমাদের ১০০ কেটি টাকার ওপর লোকসান যাচ্ছে।
‘দেখেন ঢাকা শহরেই কতগুলো ফাইভ স্টার হোটেল আছে। হোটেল রিজেন্সি, রেডিসান ব্লু, লা মেরিডিয়ান, ওয়েস্টিন, সোনারগাঁও, ইন্টারকন্টিনেন্টাল- এ রকম অসংখ্য হোটেল আছে। এক-একটা হোটেলে কত বিশাল ইনভেস্টমেন্ট। এর সঙ্গে রেস্টুরেন্ট আছে কত হাজার। রেস্টুরেন্টের কর্মকর্তাদের বেতনসহ বিশাল অঙ্কের ফাইন্যান্সিয়াল চার্জ গুণতে হয় প্রতিদিন’ বলেন আটাবের সাবেক এই সভাপতি।
তিনি বলেন, এই সেক্টরে কেউ ১০ টাকা সহযোগিতা পেয়েছে- এমনটা আমরা শুনিনি। আমাদের অনেক সদস্য কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। অফিসভাড়া দিতে পারছে না। আমরা একটা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি। সমস্ত এজেন্সির এখন দিশেহারা অবস্থা। এর মধ্যে কিছু এজেন্সি আছে খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তাদের অনেকে পরিবার নিয়ে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি।
মঞ্জুর বলেন, করোনার কারণে বাংলাদেশে যখন লকডাউন হলো, সর্বপ্রথম এভিয়েশন খাতটা আমাদের বন্ধ হয়ে গেল। এয়ারলাইন্সগুলো তাদের অপারেশন বন্ধ করে দিল। প্রথমদিন থেকেই আমাদের অফিস বন্ধ। আমাদের কর্মচারীর বেতন দিতে হয়। আমাদের নিজেদের পরিবার-পরিজন আছে। যারা এ খাতে কর্মজীবী আছেন তাদের পরিবার-পরিজন আছে। সবাই এখন একটা অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এই অসহায় পরিস্থিতি কবে কাটবে, এ সম্পর্কে আমরা কেউ অবহিত না। এই যে একটা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি, সামনে ঈদ, আগামী দিনগুলো আমাদের কীভাবে কাটবে?
তিনি বলেন, যাদের অন্যান্য ব্যবসা আছে দোকানপাট খুললে হয় তো তরা দোকান খুলতে পারবেন। সব পেশার মানুষ হয় তো কাজ করতে পারবে। কিন্তু আমাদের পেশার মানুষ কবে কাজে যোগ দিতে পারবে তার কোনো ঠিক নেই। আমরা কবে দাঁড়াতে পারব তারও ঠিক নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এভিয়েশন, ট্যুরিজম খাতের কথা। কিন্তু মাঠপর্যায়ে সুনির্দিষ্ট ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা আমরা পাইনি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই ট্রাভেল, ট্যুরিজম বড় সেক্টর হিসেবে বিবেচিত। মাঠপর্যায়ে অন্যান্য দেশে সহযোগিতা পেলেও আমরা কিন্তু পাইনি। আমরা চাই সরকার আমাদের সহযোগিতা করুক।
আটাবের সাবেক এই সভাপতি বলেন, দেশ স্বাভাবিক হওয়ার পর অফিস, আদালত খোলার পরও আমাদের ব্যবসা চালু হবে না। কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে ফ্লাইট চালু হতে। আবার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী যেতে পারবে তাও কিন্তু না। মিশনগুলো চালু হতে হবে, অ্যাম্বাসিগুলো চালু হতে হবে। অ্যাম্বাসি ভিসা না দিলে তো মানুষ পাঠানো যাবে না।
তিনি বলেন, সরকার যদি সরাসরি এই সেক্টর না বাঁচিয়ে রাখে, তাহলে এই সেক্টর বাংলাদেশে টিকবে না। কোনোভাবেই টিকবে না। সরকার হয় তো বাংলাদেশ বিমানকে ভর্তুকি দিয়ে বাঁচিয় রাখবে। সোনারগাঁও, পর্যটন করপোরেশনসহ সরকারি হোটেলগুলোকে হয় তো সরকার সহযোগিতা দেবে। কিন্তু বেসরকারি যে হোটেলগুলো আছে তাদের অনেকের চাকরি চলে গেছে। এমনকি বিদেশি এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশি স্টাফদের পর্যন্ত চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমাদের এই সেক্টরের লোক জবলেস হয়ে পড়ছে। তাহলে আমাদের এই সেক্টর কীভাবে টিকে থাকবে?
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আমাদের সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা দেয়, ট্যাক্স যদি মওকুফ করে এবং স্বল্পমূল্যে চালসহ নিত্যপণ্য কেনার জন্য সরকার যদি আমাদের স্টাফদের রেশন কার্ড দেয়, তাহলে হয় তো আমরা খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারব।