পর্যটনবর্ষে গুরুত্ব পাচ্ছে ‘অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম’

489609বিশ্বব্যাপী পর্যটকদের ৩৬ শতাংশেরই মূল আকর্ষণ অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম, যার বেশির ভাগই তরুণ। ২০১৬ সালের পর্যটনবর্ষ উপলক্ষে ‘অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে’ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই তরুণ। তাই পর্যটনশিল্পের দ্রুত বিকাশ ও প্রসারের জন্য তরুণদের মধ্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের আবেদন তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে তাদের পর্যটনমনস্ক করতে হবে। এ জন্য অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সারফিং, প্যারাসেলিং. প্যারাগ্রাইডিং, ট্র্যাকিংসহ বিভিন্ন ইভেন্ট সংযোজন করা হবে।

রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী পর্যটন এখন অন্যতম শিল্পের মর্যাদা পেয়েছে। নেপাল, মালদ্বীপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রপ্তানি আয়ের একটি বিরাট অংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। এ ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। আমাদের ট্যুরিস্ট স্পটগুলোকে ট্যুরিস্ট প্রডাক্ট রূপে গড়ে তুলতে হবে। পর্যটনের বিকাশ একটি সমন্বিত কার্যক্রম। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। সবাইকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।’

পর্যটনমন্ত্রী জানান, এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের পর্যটনবিষয়ক সংগঠন ইউএনডাব্লিউটিএর ২৯তম সিএপি-সিএসএ সম্মেলন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ওআইসির পর্যটনবিষয়ক সম্মেলন ২০১৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া গত বছর ঢাকায় আন্তর্জাতিক বুদ্ধিস্ট কনফারেন্স আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলাদেশ।

গুলশান হামলার পর বাংলাদেশ থেকে বিদেশিরা চলে যাচ্ছে এমন খবরের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখনো অন্য দেশের চেয়ে অনেক নিরাপদ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা রয়েছে সরকারের।

রাজধানীর মহাখালীতে হোটেল অবকাশে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বেইসক্যাম্প বাংলাদেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এই সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে আগামী দুই বছর একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে দেশে ইকো ট্যুরিজম ও অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে ব্যাপকভাবে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যটকের কাছে তুলে ধরবে পর্যটন করপোরেশন ও বেইসক্যাম্প। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ চৌধুরী, বেইসক্যাম্প বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তামজিদ সিদ্দিক স্পন্দন উপস্থিত ছিলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আমাদের দেশের পত্রপত্রিকা অনেক সময় বিভ্রান্ত করে। আজকে (গতকাল) একটা হেডিং দেখছিলাম—‘এ দেশ থেকে বিদেশিরা চলে যাচ্ছে’। তবে বিমানবন্দরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে এমন খবর জানা যায় না।’

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় বিদেশি হত্যাকাণ্ডের পর সম্প্রতি ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত থমাস প্রিন্সকে উদ্ধৃত করে দেশটির সংবাদ মাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দূতাবাসের দুজন কর্মী ছুটিতে দেশে যাওয়ার পর বাংলাদেশে আর না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এসব হত্যাকাণ্ডই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের জন্য পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে বলে মনে করেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবলাম দেশে হয়তো বিদেশিদের আগমন বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু দেখলাম না, সেই সময়কালে (সিজারে তাভেল্লা ও কুনিও হোশি হত্যার পর) আগের বছরের চেয়ে ১০ হাজারের বেশি পর্যটক এসেছে।’

২০১৬ সালকে সরকার পর্যটনবর্ষ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছে, যা চলবে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। এ সময়ই জঙ্গি হামলার বিষয়টি তুলে ধরে মেনন বলেন, ‘আমি জানি এতে পর্যটনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। কিন্তু আমি এটিও বলতে চাই, আমরা যদি সঠিকভাবে পর্যটনকে উপস্থাপন করতে পারি, তাহলে এই প্রভাবও কাটিয়ে উঠতে পারব। কারণ এটি আমাদের সমস্যা নয়, বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা বিদেশিদের বলতে পারব, তোমরা আমাদের দেশে আসো। আমাদের দেশকে অন্য দেশের চেয়ে অনিরাপদ মনে করার কারণ নেই।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.