নানা-মাকে সমর্থন করেছেন, আমিও চাই: টিউলিপ

Tulip_smইমপ্রেশন ইভেন্টস ভেন্যু, লন্ডন থেকে: নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মা শেখ রেহানাকে লন্ডন প্রবাসী বাঙালিরা যেভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন তার ধারাব‍াহিকতায় নিজের জন্য সমর্থন চেয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক।

রোববার (০৭ ডিসেম্বর) পূর্ব লন্ডনের ইমপ্রেশন ইভেন্টস ভেন্যুতে নিজ দল লেবার পার্টির নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালির সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়ে তিনি এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

আসন্ন নির্বাচনে লন্ডনের হ্যামস্ট্যাড ও কিলবার্ন আসনে লেবার দলীয় প্রার্থী টিউলিপ সিদ্দিক।

ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর থেকে আসা শত শত মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানের মঞ্চে টিউলিপের সমর্থনে তার পাশেই ছিলেন ব্রিটেনের প্রথম বাংলাদেশি এমপি রোশনারা আলী।

অনুষ্ঠানে গ্রুপে গ্রুপে ফটো সেশনে অংশ নেয়ার ফাঁকে ফাঁকে বক্তৃতা দেন টিউলিপ।

তিনি বলেন, ৭৫ সালে আমার নানা’র হত্যাকাণ্ডের পর আমার মা এই ব্রিটেনে এসে নিয়েছিলেন আশ্রয়, তখনও আপনারা তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।

টিউলিপ বলেন, আমরা সবাই ইমিগ্র্যান্ট হলেও এখন আমরা ব্রিটিশ জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইমিগ্র্যান্ট বান্ধব হিসেবে এই ব্রিটেনের রয়েছে দীর্ঘদিনের সুনাম ও ঐতিহ্য। সেই পরিচয় ও ঐতিহ্য যখন আজ কঠিন সময়ের মুখোমুখি, তখন আমার দল লেবার পার্টি সেই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে।

তিনি বলেন, শুধু ইমিগ্রেশন নয়, হেলথ ও ইকোনমিসহ সব সেক্টরেই কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার আজ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে লেবারের বিকল্প নেই। তাই ব্রিটেনের স্বার্থেই লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে হবে।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোশনারা আলী এমপিকে দেখিয়ে টিউলিপ বলেন, আমরা আগামী মন্ত্রিসভায় রোশনারা আপাকে মন্ত্রী দেখতে চাই, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই আমাদের নেতা এড মিলিব্যান্ডকে।

এসময় তিনি সমবেতদের কাছে ‘আপনারাও এটি চান কিনা’ জানতে চাইলে সবাই সমস্বরে টিউলিপকে সমর্থন জানান।

কমিউনিটির নতুন প্রজন্মকে মূলধারার রাজনীতিতে আসার আহবান জানিয়ে টিউলিপ বলেন, আমাদের মেধাবী নতুন প্রজন্মকে লেবার রাজনীতি সব সময় স্বাগত জানায় বলেই আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনে এই পার্টি থেকে আমরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রার্থী চারজন। ২০১০ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি হওয়ার মাধ্যমে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন রোশনারা আপা, সেই যাত্রায় এবার আমরাও তার সহযোগী। অদূর ভবিষ্যতে প্রতিটি নির্বাচনেই এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

তিনি রোশনারা আলী, রূপা হক, ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুলসহ তার ও তার দল লেবার পার্টির অন্যান্য প্রার্থীর সমর্থনে কাজ করার জন্যে সবার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, এক সময় এই দেশে আমাদের পূর্ব প্রজন্মের বসতি স্থাপনের সময় যে লেবার পার্টি সব সময় পাশে ছিলো, আমাদের নিজেদের স্বার্থেই সেই লেবার পার্টির পাশে আমাদেরও থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত প্রথম ব্রিটিশ এমপি রোশনারা আলী টিউলিপকে একজন মেধাবী রাজনীতিক হিসেবে অবিহিত করে বলেন, আশা করছি আগামী পার্লামেন্টে কমিউনিটির দাবি দাওয়া নিয়ে মেধাবী টিউলিপের সোচ্চার কন্ঠ শুনতে পাবে ব্রিটেন।

তিনি বলেন, শুধু এমপি নয়, টিউলিপ লেবার পার্টির আগামী সরকারে একজন মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পাবে বলে বিশ্বাস করি।

রোশনারাও নতুন প্রজন্মকে লেবার রাজনীতিতে যোগদানের আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত হিসেবে ২০১০ সালে একা ঢুকেছিলাম পার্লামেন্টে, আগামী পার্লামেন্টে আরও তিন সহযোগী টিউলিপ, রূপা ও আনোয়ার বাবুলকে নিয়ে ঢুকবো এমন প্রত্যাশা থেকেই বলছি, আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে, এই যাত্রা বেগবান হওয়ার, থেমে থাকার নয়।

ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ও মিনিমাম ওয়েজসহ বিভিন্ন বিষয়ে লেবার পার্টির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ব্যাখ্যা করে রোশনারা বলেন, মাল্টি কালচারাল ব্রিটেনের প্রকৃত সৌন্দর্য বিকশিত ও রক্ষা করতে পারে একমাত্র লেবার পার্টিই।

তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে টিউলিপের খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের স্বামী খোন্দকার মশরুর হোসেনও বক্তব্য রাখেন।

তিনিও টিউলিপের প্রতি সবার সমর্থন কামনা করে প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা টিউলিপ পাবে এমনটিই আমি আশা করি। কারণ টিউলিপের নানা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে আপনাদের যে আত্মিক সম্পর্ক, সেই সম্পর্কের কারণেই টিউলিপ এই সমর্থনের দাবিদার।

অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন টিউলিপের বোন আজমিনা সিদ্দিক রুপন্থি।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পরিবেশিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজনীতিবিদ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, টিউলিপ শুধু ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি প্রার্থীই নয়, ব্রিটেনের একজন মেধাবী সম্ভাবনাময় তরুণ রাজনীতিক। লেবার পার্টির আগামী সরকারে টিউলিপ মন্ত্রী হবেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা এমনটিই প্রত্যাশা করেন। এই গৌরব জাতি হিসেবে আমাদের সবার।

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.