বৈষম্য না কমলে দেশীয় এয়ারলাইনস টিকবে না

generic_airline-1উড়োজাহাজের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের দাম ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। আবার দেশীয় এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে যে দামে তেল কেনে, অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটে একই তেল কিনতে লিটারে ২০ টাকা বেশি দিতে হয়। জেট ফুয়েলের মূল্যে এমন বৈষম্য দূর না হলে দেশীয় উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর জন্য ব্যবসা করে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

‘দেশীয় এয়ারলাইনসের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন মতামত তুলে ধরেছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর একটি হোটেলে গত মঙ্গলবার জাতীয় দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগিতা করে বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা নভো এয়ার। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম ও নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান।

নিবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে জেট ফুয়েলের দামে বড় ধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। বিমান ছাড়া বেসরকারি কোনো এয়ারলাইনস কোম্পানির নিজস্ব ভৌত অবকাঠামো বা হ্যাঙ্গার নেই। উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ আমদানি, লাউঞ্জ, বিমানবন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। সরকারের ভর্তুকিতে বিমান দুই যুগ আগের ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করতে পারলেও বেসরকারি এয়ারলাইনসের পক্ষে তা সম্ভব নয়। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই অসম প্রতিযোগিতার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।

ঢাকায় উড়োজাহাজের জ্বালানি তেলের দাম অতিরিক্ত উল্লেখ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মোমেন বলেন, তেলের দাম অন্যান্য এয়ারপোর্ট থেকে ঢাকার এয়ারপোর্টে অনেক বেশি। গত সোমবার শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রতি গ্যালন জ্বালানি তেলের মূল্য ছিল ২ দশমিক ৫৪ ডলার। একই সময়ে বেইজিংয়ে জেট ফুয়েলের দাম ছিল ১ দশমিক ৩৩ ডলার, কুয়ালালামপুরে ৯৫ সেন্ট, দিল্লিতে ছিল ১ দশমিক ৪২ ডলার। ৪০ হাজার গ্যালন জ্বালানি যদি একটি ফ্লাইটে লাগে, তবে এক ডলার করে বেশি দিলে ৩২ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয় জ্বালানি তেলে। তেলের দাম বিশ্ববাজারে কমে গেছে অথচ বাংলাদেশে কমেনি। এত খরচ দিয়ে দেশি এয়ারলাইনসগুলোর ব্যবসা করে টিকে থাকা সম্ভব নয়।

নভো এয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক পথে যে দামে জেট ফুয়েল কেনা যায়, অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইটে একই তেল কিনতে লিটারে ২০ টাকা বেশি দিতে হয়। তেলের দামের এ বৈষম্যের জন্য ব্যবসা করা কঠিন।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক কাজী ইকবাল করিম বলেন, বর্তমানে এ বিমানবন্দর থেকে দিনে ২৬৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। তিন বছর আগে অভ্যন্তরীণ পথে যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ছিল, যা এখন ৬০ হাজার হয়েছে। আরও নতুন এয়ারলাইনস অপারেশনে আসছে কিন্তু সে তুলনায় বিমানবন্দরটির অবকাঠামো সুবিধা সে তুলনায় বাড়েনি। একটি বিমানবন্দরের ওপর এত চাপ পড়লে যাত্রীসেবা নিশ্চিত সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কাজে লাগালে সেবা নিশ্চিত হবে।

পর্যটনবিষয়ক পাক্ষিক বাংলাদেশ মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বিমান দীর্ঘদিন এ খাত থাকলেও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারেনি। দেশি এয়ারলাইনগুলোর নিজেদের মধ্যে সমন্বয় নেই। মূল্য নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে এয়ারলাইনগুলো নিজেদের ব্যবসাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এভিয়েশন খাতের সমস্যাগুলো কমবেশি আমাদের জানা। এমিরেটস, ইতিহাদের মতো এয়ারলাইনগুলো তেলের দামে ভর্তুকি পেয়ে ব্যবসা করছে। সে বাস্তবতায় দেশীয় এয়ারলাইনগুলোর টিকে থাকার জন্য জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর বিষয়টি জরুরি।’

আরও খবর
আপনার কমেন্ট লিখুন

Your email address will not be published.